গুজবের কারণে পাচার, নিধনে বিপন্ন তক্ষক

সমির মল্লিক, খাগড়াছড়ি | বুধবার , ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৮:৩৯ পূর্বাহ্ণ

কেবল মিথকে ঘিরে বছরের পর বছর ধরে পাচার হচ্ছে নিরীহ বন্যপ্রাণী তক্ষক। গুজবের কারণে হুজুগের বশে প্রাণীটি হাতবদল হলেও এর শরীরের কোনো অংশ চিকিৎসা বিজ্ঞানসহ গুরত্বপূর্ণ কোনো কাজে ব্যবহৃত হয় না। জটিল রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়এমন মিথ ছড়িয়ে মাঠ পর্যায় থেকে এটি শিকার করা হয়। এটি হাতবদল হতে থাকে। পরে তা মারা যায়। এর মধ্যেই তক্ষককে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে পাচার চক্র। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তা পাচার করা হয়। তবে প্রাণীটির শরীরের কোনো অংশ চিকিৎসা বিজ্ঞানের কাজে ব্যবহৃত হয়নি বলে নিশ্চিত করেছেন খাগড়াছড়ির বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. ফরিদ মিঞা।

তিনি বলেন, তক্ষক পরিবেশের জন্য খুব উপকারী। এটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে ফেলে। গিরগিটি প্রজাতির এই প্রাণী পরাগায়নে সহায়তা করে। এটি দেখতেও সুন্দর। একটা বন সমৃদ্ধ কিনা তা বুঝা যায় সেই বনে তক্ষক আছে কিনা সেটা দেখে।

জানা যায়, তক্ষক গেকোনিডি গোত্রের একটি গিরগিটি প্রজাতি। পিঠের দিক ধূসর, নীলচেধূসর বা নীলচে বেগুনিধূসর। দেখতেও বেশ সুন্দর। সারা শরীরে থাকে লাল ও সাদাটে ধূসর ফোঁটা। পিঠের সাদাটে ফোঁটাগুলি পাশাপাশি ৭৮টি সরু সারিতে বিন্যস্ত। দৈর্ঘ্য নাকের ডগা থেকে পা পর্যন্ত ১৭ সেমি এবং লেজও প্রায় ততটা। তক্ষকের ডাক চড়া, স্পষ্ট ও অনেক দূর থেকে শোনা যায়; ডাকের জন্যই এই নাম। কক্‌কক্‌ আওয়াজ দিয়ে ডাক শুরু হয়, অতঃপর ‘তক্‌ক্কা’ ডাকে কয়েক বার ও স্পষ্টস্বরে। এরা কীটপতঙ্গ, ঘরের টিকটিকি ছোট পাখি ও ছোট সাপ খেয়ে থাকে। ছাদের পাশের ভাঙা ফাঁকফোঁকর বা গর্তে কিংবা গাছে বাস করে। কেবল বাংলাদেশই নয় তক্ষক দক্ষিণ এশিয়ায় বিপর্যস্ত একটি প্রাণী। ব্যাপক নিধনই বিপন্ন হওয়ার কারণ। বাংলাদেশসহ মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চীন ও ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশে প্রায় ৬০০ প্রজাতির তক্ষকের বাস। বাংলাদেশে প্রায় ২ প্রজাতির তক্ষক দেখা যায়। গত ৪ বছরে খাগড়াছড়িতে ১৩টি তক্ষক উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে গত ৪ জানুয়ারি খাগড়াছড়িতে বন্যপ্রাণী তক্ষক পাচারকালে ৩ জনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে বন বিভাগ।

খাগড়াছড়িচট্টগ্রাম সড়কের জিরোমাইল এলাকা থেকে পুলিশের সহায়তায় তক্ষকসহ ৩ জনকে আটক করা হয়। পাচারে জড়িত থাকার অপরাধে মো. সালাউদ্দিন, মো. তৌহিদ ও এস এম রফিকুল ইসলামকে আদালতে তোলা হলেও ঐদিন তারা জামিনে বেরিয়ে যায়।

খাগড়াছড়ির বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ফরিদ মিঞা আরো বলেন, দুঃখজনক বিষয় হলো হুজুগের বশে আমরা প্রাণিটিকে (তক্ষক) ধ্বংস করে ফেলছি। মানুষের মধ্যে তক্ষক নিয়ে একটি মিথ প্রচলিত রয়েছেএটি গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজে ব্যবহৃত হয়। যে কারণে এটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাচারকারীরা এটি প্রকৃতি থেকে শিকার করে কেবলই হাত বদল করে। ইতোমধ্যে তক্ষক হারিয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। এর আগেও বেশ কয়েকজনকে তক্ষক পাচারের দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত তক্ষক বনে অবমুক্ত করা হয়েছে। মানুষ যদি এই গুজব সম্পর্কে জানতে পারে তাহলে তক্ষক বাঁচতে পারবে। তক্ষক দিয়ে গুরত্বপূর্ণ কোনো ওষুধ তৈরি হয় এমন কোনো তথ্য আমি পাইনি। আমি মনে করি শুধুমাত্র একটি বিভ্রান্তিমূলক তথ্যের কারণে তক্ষক ঘিরে লক্ষ লক্ষ টাকা লেনদেন হচ্ছে। মানুষ প্রতারিত হচ্ছে। দীঘিনালা ২০১৮ সালে তক্ষক পাচারকে কেন্দ্র করে এক ব্যক্তির মৃত্যুর হয়েছে। তিনি বলেন, বন বিভাগ তক্ষক পাচার রোধে সোচ্চার রয়েছে। এছাড়া তক্ষক সংরক্ষণে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিপিএল চট্টগ্রাম পর্বে থাকছে পলিথিন বিরোধী ক্যাম্পেইন
পরবর্তী নিবন্ধটেকনাফে অপহৃত মালয়েশিয়া প্রবাসী ফিরেছেন