নগরের বায়েজিদ এলাকা থেকে মোবাইলে আর্থিক সেবাদানকারী একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সেজে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় জড়িত তিন প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছে সাতটি মোবাইল সেট ও বিভিন্ন কোম্পানির ৩৪টি সিম। ধৃতরা হচ্ছেন কামরুল ইসলাম (৩৩), বিল্লাল হোসেন (৩৪) ও ফিরোজ শেখ (৩৩)। গত সোমবার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। কামরুল মাগুরার শ্রীপুরের এবং বিল্লাল ও ফিরোজ ফরিদপুরের মধুখালীর বাসিন্দা। পুলিশ জানায়, যেখানে গার্মেন্টস শ্রমিক বেশি বসবাস করে, সেসব এলাকায় অবস্থিত বিকাশ দোকানকে তারা টার্গেট করে। এরপর তারা বিকাশে লেনদেনকারী ব্যক্তিকে কল দিয়ে কৌশলে ওটিপি নিয়ে প্রতারিত ব্যক্তির একাউন্ট হ্যাক করে ফেলেন। এভাবে শুধু গত সেপ্টেম্বর মাসে চার লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় তারা।
প্রতারক চক্রটি সাধারণত মাসের ৫ থেকে ১২ তারিখ তারা টার্গেট করে। কারণ এসময় মানুষজন বেতন পায়। গার্মেন্টস শ্রমিকরা যেখানে বেশি বসবাস করে, সেসব এলাকায় অবস্থিত বিকাশের দোকানকে টার্গেট করতেন তারা। যে নম্বর থেকে তারা কল করতেন, সেটি একবারই ব্যবহার করতেন। পরে টেলিফোন সেটসহ তা পাল্টে ফেলেন। এভাবে প্রতিমাসে তারা বেশকিছু সিম ব্যবহার করেন।
পুলিশ জানায়, ধৃতদের মধ্যে কামরুল মূল হোতা। সে বিকাশ কাস্টমার কেয়ার ম্যানেজার সেজে ফোনে কথা বলে কৌশলে গ্রাহকের মোবাইলে যাওয়া ওটিপি জেনে নেন। কামরুল গ্রাহককে বলতেন, পিন কোড দিতে হবে না। সর্বশেষ যে টাকা লেনদেন করেছেন তার সঙ্গে বিকাশের হেল্পলাইনের সঙ্গে আপনার পিন কোড যোগ করেন বা গুণ করেন। এভাবে সমীকরণ করে তিনি গ্রাহকের পিন কোড বের করতে পারেন।
এরপর বিল্লাল ও ফিরোজ সেই নম্বরে কল করে নিজেকে বিকাশ কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বলতেন, ভুল করে টাকা গেছে এবং টাকা প্রদানকারী ব্যক্তি অভিযোগ জানিয়েছে। এ বিষয়ে বিকাশ কাস্টমার কেয়ার থেকে টেলিফোন করে কিছু তথ্য চাইবে, যাতে সেগুলো জানানো হয়।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ–কমিশনার (উত্তর–দক্ষিণ) নিহাদ আদনান তাইয়ান সাংবাদিকদের বলেন, পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে ইপিজেডের কারখানার শ্রমিকদের বেতন বেশি, সেটিকে টার্গেট করে এ চক্রের সদস্যরা চট্টগ্রামে আসে এবং ইপিজেড এলাকায় অবস্থান নেয়। তাদের চক্রের সদস্যরা ইপিজেড এলাকায় বিভিন্ন বিকাশ এজেন্টদের দোকানের সামনে অবস্থান নেয়। সেখান থেকে কেউ টাকা পাঠালে যে নম্বরটিতে টাকা পাঠানো হয়েছে সেটি কৌশলে সংগ্রহ করে। এরপর পরে বিকাশ এজেন্ট ও কাস্টমার কেয়ার ম্যানেজার সেজে ওই নম্বরে ফোন করে। বিভিন্নভাবে কথা বলে ওটিপি জেনে নেয়। এর মাধ্যমে টাকা তুলে ফেলে।
পুলিশ জানায়, সাত–আট মাস আগে ধৃতরা ঢাকার লক্ষ্মীবাজার এলাকার একটি মোবাইল মেলা থেকে বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির বিক্রয় কর্মীদের কাছ থেকে বেশকিছু নিবন্ধিত সিম সংগ্রহ করে। সেগুলো প্রতারণা কাজে ব্যবহার করেছে। এমন কয়েক জন সিম বিক্রয়কর্মীর নামও পেয়েছে পুলিশ। তাদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানায় পুলিশ।