সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় বিভাগীয় কমিশনার অফিসের গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ডিপো কর্তৃপক্ষ ও তদারকি সংস্থাগুলোসহ সংশ্লিষ্ট সকলের গাফিলতিতে ডিপোতে থাকা হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড নামের রাসায়নিক থেকে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। বিভাগীয় কমিশনার বরাবর দাখিল করা মূল তদন্ত প্রতিবেদনটি সাজানো হয়েছে ১৯ পৃষ্ঠায়, পাশাপাশি এর সঙ্গে সংযোজন করা হয়েছে অতিরিক্ত ২৫৯ পৃষ্ঠা। মোট ২৪ জন ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তদন্ত প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়। এর মধ্যে বিএম ডিপোতে কাজ করা শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে সরকারি-বেসরকারি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীও। গতকাল বুধবার বিকেলে বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিনের হাতে প্রতিবেদনটি জমা দেন তদন্ত কমিটির প্রধান মিজানুর রহমান। বিষয়টি তিনিই আজাদীকে নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনার পর সরকারের নির্দেশে এ কমিটি গঠিত হয়। দায়িত্ব পেয়ে তিনটি বিষয়কে বিবেচ্য বিষয় (ডিপোতে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান, দায়দায়িত্ব নির্ধারণ এবং এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়ন) ধরে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট ২৪ জনের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের মতামতের ভিত্তিতে আমরা কিছু নীতি নির্ধারণী ঠিক করেছি যা সুপারিশ আকারে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
তদন্ত কার্যক্রমের সঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিদ্যা বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. দেবাশিষ পালিত, সিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটির ডিসি ফারুক উল হক এবং সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শাহনেওয়াজ খালেদও যুক্ত ছিলেন। কমিটির প্রধান অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মিজানুর রহমান বলেন, রাসায়নিক থেকেই অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। এতে কোনো দ্বিমত নেই। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার পর আমাদের কাছে এটিই প্রতীয়মান হয়েছে। এ অগ্নিকাণ্ডের পেছনে সংশ্লিষ্ট সকলের গাফিলতি ছিল। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি সংশ্লিষ্ট সবাই রয়েছে। বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষ অবশ্যই এর বাইরে নয়। প্রতিষ্ঠানটি কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না। তিনি আরো বলেন, ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়াতে আমরা কিছু সুপারিশ করেছি। ২০ থেকে ২৫টির মতো হবে এ সংখ্যা। এর মধ্যে কার্গো আইনের সংশোধনের বিষয়ে বলেছি। অপডক পরিচালনার বিষয়ে মতামত দিয়েছি। বন্দরের সীমানা নির্ধারণ বিষয়ে বলেছি। বিশেষ করে ফায়ার স্টেশনগুলোকে অনেক বেশি শক্তিশালী করার জন্য উন্নত ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে বলে মতামত দিয়েছি।
এ বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন আজাদীকে বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনটি হাতে পেয়েছি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে তা পাঠানো হবে। পরবর্তী করণীয় সেখান থেকেই নির্ধারণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত ৪ জুন রাতে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামে অবস্থিত বিএম কন্টেনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরে সেখানে মুহুর্মুহু বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ডিপোর শ্রমিক, ফায়ার সার্ভিস কর্মীসহ অর্ধশত মানুষের মৃত্যু হয়, আহত হয়েছেন প্রায় দুই শতাধিক মানুষ। পরে ভয়াবহ এ ঘটনা তদন্তে বিভাগীয় কমিশনার অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তর মোট ৬টি তদন্ত কমিটি গঠন করে।












