শুক্রবার রাতে গাজীপুরে সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়ির সামনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে আওয়ামী লীগের লোকজন। এতে অন্তত ১৫ শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল শনিবার ছাত্র–জনতা গাজীপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। এতে যোগ দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সমন্বয়ক সারজিস আলম। সমাবেশে তারা ছাত্র–জনতার ওপর হামলার ঘটনায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করেন। তারা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগের পাশাপাশি গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের অপসারণের দাবিও জানান। সমাবেশে মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. নাজমুল করীম খান উপস্থিত হয়ে সদর থানার ওসিকে সাময়িক বরখাস্তের ঘোষণা দেন। এসময় ছাত্রদের ওপর হামলার ঘটনায় নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করে ক্ষমাও চেয়েছেন তিনি।
এদিকে গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্রদের লক্ষ্য করে ছোঁড়া গুলিতে এক কর্মী গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় বাইকে চড়ে আসা দুই যুবক ডিসির কার্যালয়ের সামনে ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে দ্রুত সটকে যান বলে গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (অপরাধ–উত্তর) রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ জানান। গুলিবিদ্ধ ছাত্রের নাম মো. মোবাশ্বের (২৫)। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। খবর বিডিনিউজের।
গাজীপুরে সমাবেশ : শনিবার দুপুরে জাতীয় নাগরিক কমিটি গাজীপুর জেলা ও মহানগর শাখার আয়োজনে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে নগরের ভাওয়াল রাজবাড়ি সড়ক অবরোধ করেন নেতাকর্মীরা। এ সময় আন্দোলনকারীরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় শহরের ভাওয়াল রাজবাড়ী মাঠে জাতীয় নাগরিক কমিটির জেলা ও মহানগর শাখার আয়োজনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে ছাত্র–জনতার পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ জনগণ অংশগ্রহণ করেন।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাত ৯টার দিকে নগরের ধীরাশ্রম দাক্ষিণখান এলাকায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়ির সামনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এতে অন্তত ১৫ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। হামলায় আহতদের সবাইকেই প্রথমে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে রাত ১টার দিকে গুরুতর আহত ৭ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ওসি বরখাস্ত : গাজীপুরে সাবেক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের বাড়িতে ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় সদর থানার ওসিকে সাময়িক বরখাস্তের ঘোষণা দিয়েছেন মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. নাজমুল করীম খান। হামলার ঘটনায় নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করে ক্ষমাও চেয়েছেন তিনি। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে শনিবার দুপুরে গাজীপুর জেলা শহরের রাজবাড়ী সড়কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দিয়ে ওসি মো. আরিফুল ইসলামকে বরখাস্তের ঘোষণা দিয়ে পুলিশের ব্যর্থতার জন্য ক্ষমা চান মহানগর পুলিশের এ শীর্ষ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, গতরাত যে ঘটনাটি ঘটেছে, তার জন্য আমি পুলিশের পক্ষ থেকে আপনাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে বলেন, আমি আপনাদের বলতে চাই, আমরা এক এক করে হামলাকারীদের খুঁজে বের করব। আমি নিশ্চয়তা দিতে চাই, এখানে যারা পুলিশ আছে, রেসপন্স করতে দেরি করেছে, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আমি ব্যবস্থা নেব। আমি শুনেছি, দুই ঘণ্টা পর আমার ওসি আপনাদের ডাকে সাড়া দিয়েছেন। আমি আপনাদের এই মুহূর্তে বলতে চাই, আমি তাকে সাসপেন্ড করব। আমি আপনাদের নিশ্চয়তা দিতে চাই, যারা এই ফ্যাসিবাদের সাথে আঁতাত করবে, তাদের পুলিশে চাকরি করতে দেওয়া যাবে না। এতদিনের যে ফ্যাসিবাদী পুলিশ তৈরি হয়েছে, সেই ফ্যাসিবাদ থেকে পুলিশকে বের হয়ে আসতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা কষ্ট করে এসেছেন, আপনারা জনগণের নিরাপত্তার জন্য এসেছেন। যারা গত ১৭ বছর আপনাদের ওপর অন্যায়ভাবে অত্যাচার করেছে, এই দেশের ওপর জুলুম করেছে, এখন মাথা চাড়া দিচ্ছে, তাদের এই মাথাচাড়া কোনোভাবে বরদাস্ত করা হবে না।
মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. নাজমুল করীম খান বলেন, শনিবার রাতে হামলার ঘটনায় আমরা ইতিমধ্যে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। রাতে চিরুণী অভিযান হবে, এই চিরুণী অভিযানের মাধ্যমে প্রত্যেককে আমরা খুঁজে বের করবো এবং আইনের আওতায় নিয়ে আসবো, ইনশাআল্লাহ্। তিনি নিজে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন দাবি করে বলেন, ফ্যাসিবাদী আন্দোলনের সময় আমাকে ফোর্স রিটায়ারমেন্টে পাঠানো হয়েছিল। আন্দোলনের পর আমি আবার পুলিশ কমিশনার হয়ে ফিরে এসেছি।
ছাত্রদের ওপর গুলি : গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্রদের লক্ষ্য করে ছোঁড়া গুলিতে এক কর্মী আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সন্ধ্যায় বাইকে চড়ে আসা দুই যুবক ডিসির কার্যালয়ের সামনে ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে দ্রুত সটকে যান বলে গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (অপরাধ–উত্তর) রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ জানান।
গুলিবিদ্ধ মো. মোবাশ্বের (২৫) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাজীপুর জেলা শাখার কর্মী বলে জানিয়েছেন সংগঠনের জেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক সামিউল আলম নাবিল। তিনি বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে রাজবাড়ী সড়কে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন। তখন মোটরসাইকেলে চড়ে আসা দুই যুবক একাধিক গুলি ছুঁড়ে দ্রুত সটকে যান। একটি গুলি মোবাশ্বেরের ডান হাতে এসে বিদ্ধ হয়। তাকে উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ–কমিশনার রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, কর্মসূচি শেষে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতারা চলে গেলেও কিছু আন্দোলনকারী নেতাকর্মী সেখানে ছিলেন। সন্ধ্যায় তারা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথাবার্তা বলার সময় গুলি ছোঁড়ার এ ঘটনা ঘটে। ওই ছাত্রের হাতের পেশিতে গুলির প্লেট বিদ্ধ রয়েছে। প্লেটটি বের করার পর কোন ধরনের অস্ত্র থেকে গুলি ছোড়া হয়েছে, তা বলা যাবে।