ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজা শহরে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া ভবনগুলোর নিচ থেকে একের পর এক লাশ উদ্ধার করছেন ফিলিস্তিনিরা। গতকাল রোববার সকাল থেকে ফিলিস্তিনিরা হাত ও কোদাল দিয়ে ধ্বংসস্তূপ খুঁড়ে লাশগুলো বের করে আনছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির আহ্বানের পরও ইসরায়েল গত শনিবার বিমান হামলা চালায়। এ ঘটনায় ডজনেরও বেশি মানুষ নিহত হন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছে গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। খবর বাংলানিউজের।
চিকিৎসক ও উদ্ধারকর্মীদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে জানানো হয়, শনিবার রাতে গাজা সিটির তুফাহ (আল–তুফাহ) এলাকায় একটি বাড়িতে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১৮ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শিশু রয়েছে। বিস্ফোরণে আশপাশের কয়েকটি ভবনও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিমান হামলায় নিহত হয় ছয় বছরের শিশু আমির শাদি মানসুর। গতকাল রোববার সকালে তার বাবা শাদি মানসুর জানান, খালি হাতে মাটি খুঁড়ে ছেলের মরদেহ উদ্ধার করতে হয়েছে। তিনি বলেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর লক্ষ্যবস্তু কোনো যোদ্ধা বা প্রতিরোধযোদ্ধা নয়, কেবল শিশু। ধ্বংসস্তূপ থেকে যাকে বের করলাম সে আমার ছেলে আমির। আমি তাকে ৪০ বছর পর পেয়েছিলাম। সে কী কোনো যোদ্ধা বা প্রতিরোধ সদস্য? ইসরায়েলিরা শিশুদের অকাতরে মেরে ফেলছে। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবে যুদ্ধবিরতি ও বন্দিমুক্তির বিষয়ে ফিলিস্তিনি দলগুলো সম্মত হয়েছে। অথচ ঠিক তখনই এই হত্যাযজ্ঞ ঘটল। এখানে অন্তত ১৭ জন শহীদ হয়েছেন। ইসরায়েলিরা বর্বরের মত হামলা চালিয়ে আল–তুফাহ এলাকায় পুরো আবাসিক কমপ্লেক্সে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। আরেক ফিলিস্তিনি বাসিন্দা মুনির আল–কাতনানি বলেন, গতরাতে হঠাৎ একটি রকেট এসে পড়ল, সবাই উড়ে গেল। আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন এসেছিলেন। আমার শাশুড়ি, ননদ, ছোট ভাগ্নি সবাই শহীদ হয়েছে। আমার মা, আমার বোনও শহীদ হয়েছেন। আমার দুই ভাগ্নি মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে, আর আমার দুই মেয়ে আহত।
এ ঘটনার পর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, তারা ওই এলাকায় হামাসের এক যোদ্ধাকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল। ওই ব্যক্তি নিকটবর্তী এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর জন্য হুমকি সৃষ্টি করেছিলেন। তবে হতাহতের বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিকের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে ইসরায়েল দুঃখ প্রকাশ করছে এবং বেসামরিক প্রাণহানি কমানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।
অন্যদিকে হামাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর অব্যাহত বোমাবর্ষণ ও হত্যাযজ্ঞ প্রমাণ করে নেতানিয়াহুর মিথ্যাচার করছেন। তিনি দাবি করছেন, বেসামরিকদের ওপর হামলা কমানো হচ্ছে; কিন্তু বাস্তবে এর উল্টোটা ঘটছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শনিবার ট্রুথ সোশালে লিখেছেন, ইসরায়েল গাজার ভেতরে একটি ‘প্রাথমিক প্রত্যাহার রেখায়’ সম্মত হয়েছে। এখন হামাস তা নিশ্চিত করলে যুদ্ধবিরতি ‘তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে’। এ বিষয়ে হামাস জানায়, তারা যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তির প্রস্তাবে সম্মত হতে প্রস্তুত। তার আগে ইসরায়েলকে থামাতে হবে। কেননা, তাদের বিমান হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।