আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সাতকানিয়ায় গভীর রাতে যুবলীগ নেতা মিজানুর রহমানের বাড়িতে গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় মিজানের বাবা-মাসহ ৩ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তারা হলেন বাবা মাহাবুবুল আলম (৬০), মা মমতাজ বেগম (৫০) ও চাচাতো ভাই মো. ঈসমাইল (২৯)। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে উপজেলার এওচিয়ায় ইউনিয়নের ভুত পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। মিজান এওচিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক।
এদিকে, এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গতকাল শুক্রবার ভোরে তাহসিন আরফাত জিহান (২০) নামে এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ। জিহান পশ্চিম গাটিয়াডেঙ্গার আলী চাঁন পাড়ার আবু জাফরের পুত্র।
এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এওচিয়া ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিক এবং বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি মো. আবু ছালেহর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। তাদের বিরোধের জের ধরে ইতোপূর্বে একাধিকবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছে, গত বুধবার ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিকের অনুসারী আবু বক্কর, মো. তৌহিদ, মো. আরিফ, কালা মানিক ও ছোট মানিকের নেতৃত্বে ১২-১৪ জনের একটি দল ভুত পাড়ায় গিয়ে যুবলীগ নেতা মিজানকে খুঁজতে থাকে। পরে তাকে না পেয়ে তার ছোট ভাই রেজাউল করিমকে মারধর ও তার দোকানের মাল তছনছ করেন ইউপি চেয়ারম্যানের অনুসারীরা।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ঘটনায় অংশ নেয়া কয়েকজনের বাড়িতে গিয়ে অভিভাবকদের বকাবকি এবং হুমকি দেন মিজান। এর জের ধরে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে মিজানের বাড়িতে গিয়ে গালি-গালাজের এক পর্যায়ে গুলি বর্ষণ করে প্রতিপক্ষরা। এ সময় তারা অন্তত অর্ধশতাধিক গুলি ছোড়ে। পরে এলাকাবাসীর ধাওয়া করলে তারা পালিয়ে যায়।
গুলিবিদ্ধদের উদ্ধার করে প্রথমে সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সাতকানিয়া থানার এসআই তাপস চন্দ্র মিত্র বলেন, গুলি বর্ষণের ঘটনায় জড়িত কিছু লোক গতকাল ভোরে ইউপি সদস্য আবু তাহেরের পশ্চিম গাটিয়াডেঙ্গাস্থ বাড়িতে অবস্থান করছে খবর পেয়ে সেখানে অভিযান চালানো হয়। এসময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সবাই পালিয়ে গেলেও একজনকে ধাওয়া করে আটক করা হয়েছে।
যুবলীগ নেতা মিজান বলেন, ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী এমপি এবং বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি আবু ছালেহর পক্ষে থাকাটা আমার অপরাধ। এজন্য ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিক বারবার আমাকে হত্যার চেষ্টা চালিয়ে আসছে।
তিনি বলেন, রাতে আমি এবং আমার চাচাতো ভাই ঈসমাইল বাড়ির গেইটের সামনে ছিলাম। এসময় ওঁত পেতে থাকা ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিক, ইউপি সদস্য আবু তাহের, বক্কর, পারভেজ, তৌহিদ, আরিফসহ সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। তখন আমি দৌঁড়ে পালাতে পারলেও চাচাতো ভাই ঈসমাইল গুলিবিদ্ধ হয়। আমাকে না পেয়ে তারা আমার বাড়িতে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে। এ সময় বাড়ির সিঁড়ি ঘরের বেলকনিতে দাঁড়ানো আমার বাবা-মা গুলিবিদ্ধ হয়। পরে এলাকার লোকজন সংঘটিত হয়ে ধাওয়া করলে তারা ২টি গাড়ি যোগে পালিয়ে যায়।
এওচিয়া ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিক বলেন, মিজানের সাথে আমার কোনো ধরনের দ্বন্দ্ব নেই। ঘটনার সময় আমি বাড়িতে ছিলাম। কে বা কারা তার বাড়িতে গুলি করছে খবর পেয়ে আমি ওসি সাহেবকে ফোন দিচ্ছিলাম। ঠিক তখনই ওসি সাহেব আমার মোবাইলে ফোন করেন। আমি উনাকে ঘটনার বিষয়ে বলেছি। আসামিদের চিহ্নিতকরণ এবং গ্রেপ্তারের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করেছি। আর মোবাইলের কললিস্ট চেক করলে বুঝতে পারবে এ ঘটনার সাথে আমার সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা।
তিনি আরো বলেন, কয়েকদিন আগে আবু ছালেহর কিছু লোক ইউপি সদস্য আবু তাহেরকে লোকজনের সামনে চড়-থাপ্পড় মেরেছে। এ ঘটনায় তাহের বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছে। আমার মনে হচ্ছে ওই ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য একটি মহল এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি মো. আবু ছালেহ জানান, ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিকের নেতৃত্বেই যুবলীগ নেতা মিজানের বাড়িতে গুলিবর্ষণ করা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িতদের মিজান স্পষ্টভাবে চিনেছে। রাজনৈতিক বিরোধকে পরিবারে নিয়ে যাওয়া ঠিক নয়। বিরোধ থাকলে সেটা রাজনীতি দিয়ে মোকাবেলা করতে পারতো। কিন্তু বাড়িতে গিয়ে বাবা-মাকে গুলি করা কোনো রাজনীতি হতে পারে না।
সাতকানিয়া থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, মূলত এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।