গণ আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে গণ্ডগোল না পাকিয়ে দল গোছানোর পরামর্শ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। সেই সঙ্গে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেছেন, আপনি ভালো থাকেন, আবার আসেন। আমরা সবাই আপনাকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু গণ্ডগোল পাকানোর মানে হয় না, গণ্ডগোল পাকিয়ে তো লাভ হবে না। এতে লোকজন আরো ক্ষেপে উঠবে।
গতকাল সোমবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের শীর্ষ নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন। এছাড়া অবৈধ অস্ত্র থানায় জমা দিতে ৭ দিন সময় বেঁধে দিয়েছেন তিনি। খবর বিডিনিউজের।
আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশ্য করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বড় রাজনৈতিক দল। সে দলে প্রচুর ভালো ভালো নেতা আছে, আমি এখনই নাম বলতে পারি। এ দলটা একসময় বাঙালিদের সেক্যুলারপন্থি দল ছিল। বাঙালি আপার ক্লাস মুসলিম লীগে ছিল, আর মিডল ক্লাসের দল ছিল আওয়ামী লীগ। এত বড় মানুষের দল, যিনি এদেশ স্বাধীন করেছিলেন, এতে তো কোনো সন্দেহ নাই। কারো সন্দেহ থাকার কথা না। উনি (বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান) স্বাধীনতার নেতৃত্ব দিয়েছেন, উনার নামে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, স্বাধীনতা হয়েছে। সে দল এ রকমভাবে ভেঙে পড়ে যাবে! যে দলের লোক এখন লুকিয়ে বেড়াচ্ছে। আমি উনাদেরকেও কথা দিচ্ছি। আপনারাও দল গুছিয়ে নেন। আপনাদের দলকে কেউ তো নিষিদ্ধ করেনি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে আসারও পরমর্শ দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, একে–তাকে দিয়ে গণ্ডগোল করাবেন, আমি আসতেছি, আমি যাব। আপনি আসেন, এটা আপনার দেশ। আসেন না কেন? কে আটকাচ্ছে আপনাকে? নাগরিকত্ব তো কারও যায়নি। আপনি ২১ বছর প্রধানমন্ত্রিত্ব করেছেন, আপনি স্বেচ্ছায় চলে গেছেন, কেউ তো যেতে বলেনি। আপনি স্বেচ্ছায় গেছেন।
হিন্দু মহাজোটের দাবির প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দুর্গাপূজায় তিন দিনের ছুটির সুপারিশ করবেন বলে জানান সাখাওয়াত হোসেন। হামলা–ভাঙচুর বন্ধে শাহবাগে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিক্ষোভ নিয়ে তিনি বলেন, মানুষের সুরক্ষা দেওয়া আমাদের মন্ত্রণালয়ের কাজ। হিন্দু হোক, মুসলমান হোক, খ্রিস্টান হোক, আমাদের দায়িত্ব সবাইকে রক্ষা করা। আশা করি উনারা আশ্বস্ত হয়েছেন। আর শাহবাগে যারা আন্দোলন করছেন, উনারা কি অ্যাচিভ করতেছেন!
সামনে জন্মাষ্টমীর পূজায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়েও আশ্বস্ত করেছেন সাখাওয়াত। নিরাপত্তার ধরন নিয়ে তিনি বলেন, আপনারা সবসময় শোনেন তিন স্তর, চার স্তরের নিরাপত্তা। কোনো ৪–৫ স্তর নাই, নিবিড় নিরাপত্তা দেওয়া হবে, যাতে কোনো ধরনের কিছু না হয়। এখনই জেলাগুলোতে নির্দেশনা পাঠিয়ে দেব। ডিসি সাহেবরা দায়িত্ব নেবেন। যেখানে যতটুকু নিরাপত্তা দেওয়া দরকার, যদি পুলিশ কম হয় তাহলে অন্য কাউকে নিয়ে আসবেন, আনসার নিয়ে আসবেন। বিজিবি চাইলেও পাবেন। আমরা চাই না কোনো তৃতীয় শক্তি একটা কিছু করে দেশের বদনাম করুক।
তিনি বলেন, অনেকে বলেন, ওইদিকে চলে যাবে, তো উনারাও জানে ওখানে গেলে সেকেন্ড ক্লাস সিটিজেন হয়ে কেউ থাকতে চায়? নিজের দেশের মধ্যে থাকতে চায়। বেশিরভাগই আমি যেটা মনে করি, এটা কোনো ধর্মভিত্তিক মারামারি হয় না। মারামারি হয় ওকে ভাগায়ে দিতে পারলে ওর জমিটা দখল করতে পারব। এটা পলিটিক্যাল লোকজন করে, পুকুর দখল করব, জমি দখল করব, ভিটা দখল করব। এটা তো আমাদের শুধু যে মাইনরিটির প্রবলেম তা না, আমাদের গরিব মানুষকেও ধাক্কায়ে বাইর করে দেয় জমি দখল করতে।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেশত্যাগ করার পর থেকে দেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের অভিযোগ ওঠে। হামলার প্রতিবাদে এবং নিরাপত্তা চেয়ে ঢাকার শাহবাগে বিক্ষোভ করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। ওই হামলা প্রতিরোধ করতে না পারায় ক্ষমা চান সাখাওয়াত হোসেন।
তিনি বলেন, উনারা আমাকে বলেছেন, শাহবাগে যারা এ ধরনের আন্দোলন করছেন, উনারা বুঝাবেন। অনর্থক আপনি আরেকজনের খেলা খেলছেন। আপনি নিজের খেলা তো খেলছেন না। আর যা কিছু হয়েছে, আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমাদের দায়িত্ব ছিল, কিন্তু যে কোনো কারণে হোক আমরা পালন করতে পারিনি। কথা দিচ্ছি আমি খুঁজে বের করব।
হামলাকারীদের হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, যারা এগুলো করছে তাদেরকে বলছি, পলিটিক্যাল পার্টিগুলোকে বলছি। আপনারা আপনাদের এলাকায় এগুলো ঠিক করেন। দয়া করে আপনারা দেশকে অরাজকতার দিকে ঠেলবেন না। সদ্য বিদায় হওয়া পার্টি, আপনারা পার্টি গুছান। আমরা হোম মিনিস্ট্রি থেকে হেল্প করব। আপনারা পার্টি গুছান, উইথ নিউ ফেইস উইথ নতুন অঙ্গীকার। থ্রু দ্য পলিটিক্যাল অ্যাক্ট।
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের ছুটি থাকবে কিনা প্রশ্ন করলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে মন্ত্রিপরিষদ। জামায়াতের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে কিনা–এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা আইন মন্ত্রণালয়ের কাজ। সিদ্ধান্তটা নেবে আইন মন্ত্রণালয়ে। যার কাছে জিজ্ঞাসা করার কথা তাকে জিজ্ঞাসা করেন।
অবৈধ অস্ত্র জমা না দিলে দুটি করে মামলা : অবৈধ অস্ত্র থানায় জমা দিতে ৭ দিন সময় বেঁধে দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেছেন, যাদের হাতে আনঅথরাইজ ওয়েপন বা আগ্নেয়াস্ত্র আছে, আগামী ৭ দিনের (সোমবারের) মধ্যে নির্দিষ্ট থানায় জমা দেবেন। যদি জমা না দেন, তাদের বিরুদ্ধে দুটি চার্জ লাগবে। দুটি মামলার মধ্যে একটি হচ্ছে অবৈধ অস্ত্র মামলা, অপরটি সরকারিভাবে নিষিদ্ধ অস্ত্র আপনাদের হাতে।
সংঘাতে আহত আনসার সদস্যদের দেখতে গিয়ে গতকাল সকালে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তিনি এ কথা বলেন। সাখাওয়াত হোসেন বলেন, যদি নিজেরা জমা দিতে না পারেন, তাহলে কারো মাধ্যমে দেন। যেটাই হোক এই রাইফেলগুলো ফেরত দরকার আমাদের। না হলে আমরা হান্টিং শুরু করব। যেটা বাইরে পাওয়া যায় না, সেই ওয়েপন কীভাবে এদের হাতে গেল এবং এই ওয়েপন আনসারদের ওখানে ফায়ার করল। এবং একটা ভিডিও আমি দেখলাম, একটা সিভিলিয়ান ছেলে ৭.৬২ রাইফেল হাতে নিয়ে চলে গেছে, তার মানে এই রাইফেল হাতে আসে নাই। হতে পারে একটা দেশে? কেমন কথা? আমরা চেষ্টা করব এদেরকে খুঁজে বের করার।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি এ ধরনের স্বৈরাচার ব্যবস্থা দেখি নাই। আপনারা আর্মির লোকজন আসছেন, তাদের স্বৈরাচার বলেন, তারা তো রাইফেল কোনো সিভিলিয়ানের হাতে তুলে দেয় নাই।
চাটুকারিতা করলে মিডিয়া বন্ধ করে দেওয়ার যে ঘোষণা তিনি রোববার দিয়েছিলেন, সেটি রাগের মাথায় বলেছেন বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, এটা রাগের মাথায় বলেছি। এটা আসলে আমার কাজ না। ভবিষ্যতে আমি আশা করি, আমরা থাকি না থাকি, যারা পলিটিকস করেন, আপনারা যদি এটা (বন্ধ) করেন, আপনারা যারা আছেন মিডিয়া, আপনারা স্ট্রাইকে চলে যাবেন।