সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সর্বাত্মক অসহযোগের দ্বিতীয় দিন ঢাকামুখী জনস্রোতের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবন চলে গেছে জনতার দখলে। ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যারিকেড ভেঙে মিছিল নিয়ে বেলা ৩টার দিকে তারা গণভবনে ঢুকে পড়ে। এরপর থেকেই গণভবন ছাত্র, ক্ষুদে শিশুসহ দেশের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের দখলে। গণভবনের সবুজ মাঠে তাদের উল্লাসে ফেটে পড়তে দেখা যায়।
এ সময় অনেককে কোল বালিশ, ঘটিবাটি ও বালতি ভরে গণভবনের বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে যেতে দেখা যায়। কারো হাতে চেয়ার, কারো হাতে বড় মাছ বা কারো হাতে কবুতরও দেখা গেছে। মোট কথা, যে যেভাবে যা পেয়েছে নিয়ে গেছেন। খবর বিডিনিউজের। জনতা সেখানে
বিজয়োল্লাস করে ‘ভুয়া’, ‘ভুয়া’ ও ‘পালাইছে’, ‘পালাইছে’সহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকে। এর আগেই শেখ হাসিনার পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে যাওয়ার খবর আসে। এই খবরে আন্দোলনকারীসহ সকল শ্রেণির মানুষের পথেঘাটে উল্লাসে ফেটে পড়তে দেখা গেছে।
মাছ–হাঁসও নিয়ে গেল জনতা, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর : শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে দেশ ছাড়ার পরপর গণভবনে মানুষ ঢুকে পড়ার পর সেখানে লুটপাটের পাশাপাশি বিজয় সরণি মোড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যও ভাঙচুর করা হয়েছে। দুপুরে প্রধানমন্ত্রী দেশ ছেড়ে যাওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে গতকাল বিকাল ৩টার পরে গণভবনে প্রবেশ করে শত শত মানুষ। তাদেরকে সরকারপ্রধানের ভবন থেকে নামিদামি জিনিসপত্র, টেলিভিশন, ফুলের টব, হাঁস, বালতি, মাছ, মাংস নিয়েও বের হতেও দেখা গেছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, গণভবনের ভেতরে রাখা খাবার নিয়ে নিয়ে খাচ্ছেন অনেকে। কেউ কেউ সরকার প্রধানের খাটে শুয়ে ছবি তুলেছেন। সেখানে জলাধারে নেমে গোসল করে উল্লাসও প্রকাশ করেছেন অনেকে। কেউ কেউ নিয়েছেন শাড়ি, বালিশ, কাঁথা। ফ্রিজ থেকে মাছ নিয়েও আসেন অনেকে। চেয়ার, টেবিল হাঁড়ি পাতিল, কোনো কিছুই বাকি রাখেনি তারা। এমনকি প্লাস্টিকের চেয়ার হাতে নিয়েও বের হতে দেখা যায়।
টেলিভিশন, ফ্রিজ, ফ্যান, ছাগল, খরগোশ, হাঁস, মুরগি, সবজি বাগান থেকে শাক সবজিও তুলে নেয় মানুষ। লাগেজ, ডিভান, ওভেন, গাছ, ঘড়িসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র নিতে দেখা গেছে। গণভবনের বিভিন্ন কক্ষে ভাঙচুরও চালানো হয়। তবে কয়েকটি ভিডিওতে বলতে শোনা গেছে ভাঙচুর না করতে।
বিজয় সরণি মোড়েও উল্লাস করতে দেখা গেছে অনেককে। এর মধ্যে কয়েকজন মোড়ে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুর করতে শুরু করে। ভাস্কর্যের চশমার কিছুটা অংশ ভেঙে ফেলতে দেখা গেছে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের পর্দায়। পরে ভাস্কর্যের মুখের অংশ ভেঙে নিয়ে যেতে দেখা যায়। এই ভাস্কর্যটি ঘিরে স্থানটির নাম দেওয়া হয় ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’, যা ২০২৩ সালে ১০ নভেম্বর উদ্বোধন করা হয়েছিল।
এই চত্বরে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন করা ছাড়াও দেয়ালে ম্যুরালও স্থান পেয়েছে। চত্বরটি নির্মাণের দায়িত্বে ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। চত্বরের সাতটি দেয়ালে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে অন্যান্য আন্দোলন এবং বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব ও অবদান চিত্রিত করা হয়েছে।