ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে নিয়ম ভেঙে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে স্ক্র্যাপ বহনকারী ধাতব পণ্যবাহী ড্রাম ট্রাক। রাস্তায় কোথাও ঝাঁকুনির সময় অথবা গাড়ির উপরে থাকা ধারালো ধাতব বস্তু বাতাসের তোড়ে সড়কে পড়ে তা কখনো অন্য গাড়ির চাকা পাংচার করে ঘটাচ্ছে দুর্ঘটনা। আবার কোথাও জ্যামে আটকা পড়লে খোলা এসব ট্রাক থেকে টোকাই কিশোররা চুরি করে নেয় মূল্যবান লোহা।
জানা গেছে, বিপজ্জনক স্ক্র্যাপ লোহা বা ধারালো পণ্য গাড়িতে বহনের সময় তা ঢেকে বা কনটেনারের ভেতরে আনা–নেয়ার নিয়ম থাকলেও প্রকৃতপক্ষে সংশ্লিষ্টরা তা মানছেন না। এতে কোথাও কোথাও ঝাঁকুনির সময় গাড়ির ওপর থেকে ধারালো লোহা সড়কে পড়ে তা অন্য গাড়ির চাকা ছিদ্র করে দেওয়াসহ নানাভাবে দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। এতে প্রায়ই জানমালের ক্ষতিসাধন হলেও এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই কারো। সরেজমিনে দেখা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রায়ই যানবাহনের চাকা ছিদ্র হয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব দুর্ঘটনার কারণ খুঁজতে গিয়ে গাড়ির চালক–হেলপার ও মালিকরা দেখেন অধিকাংশ দুর্ঘটনার কারণ গাড়ির চাকায় ধারালো কিছু ঢুকে যাওয়া। এতে তাদের মনে ক্ষোভের সঞ্চার হলেও এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছে না। মীরসরাই উপজেলার নোহা চালক সমিতির সভাপতি আমির হোসেন বলেন, বুধবার দুপুরে ও ভাটিয়ারী এলাকায় জ্যামের সময় কয়েকটি স্ক্রাপ ট্রাক থেকে অনেক লোহা প্রকাশ্যে চুরি করে নিল কিশোর বয়সের কয়েকজন টোকাই। তিনি বলেন, এসব স্ক্রাপের ধারালো ও ভাঙা অংশ মহাসড়কে পড়ে অনেক গাড়ির চাকা পাংচার হয়ে ঘটছে বড় দুর্ঘটনা। অপর হাইয়েচ চালক নুরুল ইসলাম জানান, সম্প্রতি ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের একটি যাত্রীবাহী বাস ফেনী থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার পথে বড় দারোগাহাট এলাকায় হঠাৎ বিকট শব্দে মহাসড়কের পাশে দাঁড়ানো অন্য একটি কভার্ডভ্যানকে ধাক্কা দেয়। এতে অল্পের জন্য বড় ধরনের হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও গাড়ি থেকে নেমে যাত্রী ও হেলপার দেখে– গাড়ির সামনের চাকায় পেরেক ঢুকে পাংচার হয়ে এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। যাত্রীবাহী বাসটির চালক আমিনুল ইসলাম বলেন, ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের এই রকম দুর্ঘটনা প্রায় ঘটলেও মহাসড়ক কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগে নেয় না।
মোহাম্মদ মামুন, সুবল চন্দ্র নাথসহ একাধিক বাস ও হিউম্যান হলার চালক বলেন, দেশের অসংখ্য রি–রোলিং মিলের জন্য স্ক্র্যাপ লোহা মহাসড়কে আনা–নেয়া হয়। এসব স্ক্র্যাপ খুবই বিপজ্জনক। নিয়ম অনুযায়ী এগুলো কনটেনারের ভেতরে ঢাকা অবস্থায় পরিবহন করার কথা। কিন্তু স্ক্র্যাপ ব্যবসায়ী কিংবা কিছু রি–রোলিং মিল মালিক কোনো নিয়ম–কানুন না মেনে কম টাকায় পরিবহনের জন্য খোলা ট্রাক কিংবা ডাম ট্রাক ইত্যাদিতে করে পণ্যগুলো মহাসড়কে আনা–নেওয়া করছে।
এই বিষয়ে দেলোয়ার হোসেন নামে একটি রি–রোলিং মিল মালিকের ব্যবস্থাপক বলেন, এসব ক্র্যাপ বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রয় করা হয়। মিলে ঢোকার আগ পর্যন্ত এগুলোর দায়িত্ব ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের হাতেই থাকে। তবে চুরি ও দুর্ঘটনার ব্যাপারে তিনি ঠিকাদারদের সতর্ক করবেন বলে জানান।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে জোরারগঞ্জ চৌধুরীহাট হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ শরফুদ্দিন বলেন, শুধু স্ক্র্যাপ না, কোনো পণ্যই খোলা অবস্থায় বহন করা উচিত না। এতে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। মহাসড়কে খোলা ড্রাম ট্রাকে স্ক্র্যাপ লোহা বহন না করার জন্য নির্দেশনা রয়েছে। তবুও তারা বিষয়টি মানছে না। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব এবং প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।