খোঁপার কাটায় ব্রেইল প্রচারপত্র

| রবিবার , ৫ অক্টোবর, ২০২৫ at ৪:৫৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নানা ধরনের প্রচারপত্র নিয়ে প্রার্থীরা ছুটে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীদের কাছে। কার প্রচারপত্র কতটা আকর্ষণীয়, সেটাও নজর রাখছেন শিক্ষার্থীরা। কেউ কেউ প্রচারপত্র সংগ্রহও করছেন।

প্রার্থীদের নানা রকম প্রচারপত্রের মধ্যে নিজের চুলের খোঁপার কাটা দিয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেইল পদ্ধতিতে প্রচারপত্র তৈরি করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার হল সংসদের ভিপি প্রার্থী শেখ সাদিয়া সিদ্দিকা। পদার্থ বিদ্যার ২০১৯২০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী সাদিয়া এখন স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত। বিশ্ববিদ্যালয়ের মানচিত্রের ছবি দিয়ে তৈরি করা বাদামী রঙের প্রচারপত্রে ব্রেইল পদ্ধতিতে লিখেছেন তার ব্যালেট নম্বর। নিচে লেখা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) হল সংসদ নির্বাচন, ২০২৫। খবর বিডিনিউজের।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদের নির্বাচন হবে আগামী ১৫ অক্টোবর। সাড়ে তিন দশক পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া চাকসু, ১৪টি হল এবং একটি হোস্টেল সংসদের নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন মোট ৯০৮ জন। এর মধ্যে ৪১৫ জন হল সংসদের প্রার্থী।

শাসসুন নাহার হল সংসদ নির্বাচনে ১৪টি পদের মধ্যে ভিপি পদে প্রার্থী হয়েছেন তিন জন। সেখানে সাদিয়ার ব্যালেট নম্বর তিন। গতকাল শনিবার শেখ সাদিয়া সিদ্দিকা বলেন, সাড়ে তিন দশক পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এ নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ রয়েছে। শিক্ষার্থীরা প্রার্থীদের প্রচারপত্র সংগ্রহ করছেন, কোন প্রার্থী কেমন লিফেলেট করেছেন সেটা খোঁজ রাখছেন। কিন্তু যারা দৃষ্টিহীন, তারা সেই আমেজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে আমার মনে হয়েছে। আমার হলেই পাঁচছয় জন শিক্ষার্থী আছেন, যারা চোখে দেখতে পান না।

সাদিয়া জানালেন, হলের দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের কীভাবে আকৃষ্ট করবেন, সে চিন্তা থেকেই মূলত তার ব্রেইল পদ্ধতির প্রচারপত্র তৈরির বিষয়টি মাথায় এসেছে। তিনি বলেন, সবাইতো প্রচারপত্র দিচ্ছে। আমিও যদি তাদের একই ধরনের প্রচারপত্র দিয়ে থাকি, তাহলে তাদের (দৃষ্টিহীন) কাছে আমারটাও সাধারণ একটা কাগজ। আমার পরিচয়, ব্যালেট নম্বর, সবতো আমাকে মুখে বলে আসতে হচ্ছে। এমন কোনো চিহ্ন নেই যে তারা পরবর্তীতে আমাকে মনে রাখতে পারবেন। সেখান থেকেই মূলত দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেইল পদ্ধতির প্রচারপত্র তৈরির বিষয়টি মাথায় এসেছে।

ব্রেইল পদ্ধতির প্রচারপত্র তৈরির কোনো প্রেস খুঁজে না পাওয়ার কথা জানিয়ে সাদিয়া বলেন, ঢাকা, চট্টগ্রামে কোনো প্রিন্টিং হাউস পাইনি যেখানে লিফলেটগুলো ছাপাতে পারব। কারণ আমার লিফলেটের সংখ্যা একদম কম, তার সঙ্গে আর্থিক বিষয়ও জড়িত। আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে এটা নিজের হাতে তৈরির চিন্তা করেছি। সেজন্য আমি ইউটিউবসহ বিভিন্ন ওয়েব সাইটে কনভার্ট করার চেষ্টা করেছি। আমি যে কথাটা বলতে চাচ্ছি, সেটা কনভার্ট করলে ব্রেইলে কেমন আসে সেটা দেখেছিলাম। এর পর আমার খোঁপার মেটালিক কাটা দিয়ে আমি চেষ্টা করলাম, আঙ্গুল দিয়ে বোঝা যায়, এমন কিছু করা যায় কিনা।

সাদিয়া জানালেন, নিজের চেষ্টায় ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখার পর সেটা তিনি নিয়ে গিয়েছিলেন হলের এক দৃষ্টিহীন ছাত্রীর কাছে এবং সেটা তিনি ধরেই বলে দিয়েছেন ৩ লেখা। সাদিয়া বলেন, কর্তৃপক্ষ শারিরীক প্রতিবন্ধীদের আলাদা কোনো তালিকা তৈরি করেনি। আমার ধারণা, আমাদের হলে ছয়জনের মতো দৃষ্টিহীন ছাত্রী আছে। পূজার ছুটিতে সবাই বাড়ি চলে যাওয়ায় এখন একজন আছেন। শনিবার ছুটি শেষে রোববার ক্যাম্পাস খুলবে। কয়েক দিনের মধ্যে সবাই হলে ফিরে আসবে। তখন অন্য সব ছাত্রীর কাছে আমি লিফলেট পৌঁছে দিতে পারব।

ব্রেইলে ভোট নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন গতকাল বলেন, আমরা ব্যালেটে ব্রেইল পদ্ধতি রাখার চেষ্টা করেছিলাম। সেজন্য একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে কথাও বলেছি। তবে শেষ পর্যন্ত সেটা পারা যাবে বলে আমার মনে হচ্ছে না।

এর আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর বলেছিলেন, দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীরা যেভাবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন, সেভাবে ভোট দেবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন, এমন ব্যক্তিকে তারা সঙ্গে নিয়ে আসবেন। এজন্য আমরা বলব, সঙ্গে আসা ব্যক্তি যেন অবশ্যই উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী হন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকল্পলোক আবাসিকে ভাঙারির গুদামে আগুন
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে একদিনে হাসপাতালে ভর্তি ৫০ ডেঙ্গু রোগী