খেলার মাঠটি মুক্ত হবে কবে

দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ডবাসীর দাবি, বাণিজ্যিক স্থাপনা উঠে যাক, দুর্নীতির তদন্ত হোক

হাবীবুর রহমান | বুধবার , ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ১০:৩৫ পূর্বাহ্ণ

নগরীর দক্ষিণ আগ্রাবাদের সিডিএ আবাসিক ও আশপাশের এলাকার একমাত্র খেলার মাঠ দীর্ঘদিন ধরে একটি প্রভাবশালী মহলের দখল করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা বলছেন, ২০০৪ সালে পূর্বের নকশা পরিবর্তন করে খেলার মাঠের প্রয়োজনীয়তা উপেক্ষা করে বহুতল ভবন নির্মাণ ও বিক্রয় করার জন্য সম্পূর্ণ মাঠটি (যা বালুর মাঠ নামে পরিচিত) এস আলম গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হাসান আবাসন প্রাইভেট লিমিটেডকে লিজ দিয়ে দেওয়া হয়। যদিও প্রতিষ্ঠানটি সেখানে কোনো বহুতল ভবন নির্মাণ করেনি।

কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগের উপপ্রধান মোরশেদ আলম চৌধুরীকে মাঠটি ভাড়া দিয়ে দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় মোরশেদ আলম চৌধুরী বালুর মাঠ তথা খেলার মাঠে বাণিজ্যিক স্থাপনা গড়ে তোলেন। বাণিজ্যিক স্থাপনার মধ্যে রয়েছে সুপারশপ, গরুর খামার, গাড়ির গ্যারেজ ও কার ওয়াশিং সেন্টার। এছাড়া মাঠটিতে বেশ কিছু বাণিজ্যিক স্থাপনা রয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, এস আলম গ্রুপ এই মাঠটি বন্ধক রেখে ৮শ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে।

এসব অভিযোগ জানিয়ে খেলার মাঠ দখলদারদের কবল থেকে মুক্ত করে খেলার উপযোগী করার আবেদন জানিয়ে গতকাল মঙ্গলবার ক্রীড়া উপদেষ্টা বরাবর স্থানীয়দের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক রাকিব হাসানের মাধ্যমে এ স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসকের স্টাফ অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফাহমুন নবী আজাদীকে বলেন, খেলার মাঠ দখলদারদের কবল থেকে মুক্ত করে খেলার উপযোগী করার আবেদন সংক্রান্ত একটি স্মারকলিপি জেলা প্রশাসন বরাবর এসেছে। নিয়ম মেনে সেটি পাঠিয়ে দেওয়া হবে। স্মারকলিপিতে ২৭ নং দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. শফিউল আলম ও মো. দিলদার হোসেন নামের দুজন সাক্ষর করেন। চিঠিতে তারা উল্লেখ করেন, আমাদের ওয়ার্ডে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) প্রথম আবাসিক এলাকা গড়ে তোলে। এখানে একটি উন্মুক্ত খেলার মাঠ আছে, যা স্থানীয় ভাষায় বালুর মাঠ নামে পরিচিত। ২০২১ সাল থেকে এই মাঠটি একটি প্রভাবশালী মহল দখল করে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। পরবর্তীতে আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পূর্বের নকশা পরিবর্তন করে খেলার মাঠের প্রয়োজনীয়তা উপেক্ষা করে এস আলম গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হাসান আবাসন প্রাইভেট লিমিটেডকে বহুতল ভবন নির্মাণ ও বিক্রয় করার জন্য সম্পূর্ণ বালুর মাঠটি ২০০৪ সালে লিজ দিয়ে দেয় (বিএস খতিয়ান নং ০৮, আগ্রাবাদ মৌজা, দাগ নং ৭৫৩৪, বিএস খতিয়ানে জায়গার মালিক চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ)। হাসান আবাসন প্রাইভেট লিমিটেড এখনো পর্যন্ত সেখানে কোনো বহুতল ভবন নির্মাণ না করে ২০২১ সাল থেকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগের উপপ্রধান মোরশেদ আলম চৌধুরীকে সম্পূর্ণ মাঠটি ভাড়া দিয়ে দেয়।

মোরশেদ আলম চৌধুরী বর্তমানে মাঠ জুড়ে একটি সুপারশপ, একটি গরুর খামার, একটি গাড়ির গ্যারেজ, কার ওয়াশিং সেন্টারসহ আরো অসংখ্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। আমরা জানতে পেরেছি, এস আলম গ্রুপ এই মাঠটি বন্ধক রেখে ৮শ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করেছে। সম্পূর্ণ মাঠটি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে লিজ নেওয়া ও ৮শ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণের প্রক্রিয়াটির প্রশাসিক তদন্তের দাবি জানাই। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক এস আলম গ্রুপ ও তার অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের সকল সম্পদ ও শেয়ার বিক্রয় ও স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় বালুর মাঠ দখল করা এস আলম গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হাসান আবাসন প্রাইভেট লিমিটেডও রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১৮ বছরে একবারও নির্বাচন হয়নি
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬