খেলা যেমন মানুষের পছন্দের মাধ্যম, তেমনি মেলাও। খেলা যেমন স্বাস্থ্যের জন্য বড় গুরুত্বপূর্ণ, মেলা তেমন বিনোদনের জন্য। খেলা মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ঘটায়। এ জন্য মাঠের গুরুত্ব অপরিসীম। খেলা বন্ধ করলে শিশু ও যুবকদের শারীরিক বিকাশে আঘাত আসে। তেমনি মেলা আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। এটি বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম। এ জন্য খেলার মাঠের প্রতিবন্ধতা যেমন প্রত্যাশিত নয়, তেমনি মেলার জন্যও নির্ধারিত স্থান থাকা দরকার। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, নগরীর আউটার স্টেডিয়াম খেলার বদলে পরিণত হয়েছে মেলার মাঠে।
চট্টগ্রামের এ আউটার স্টেডিয়াম এবং খেলার মাঠগুলো নিয়ে চট্টগ্রামবাসীর আফসোসের সীমা নেই। এগুলোতে সারা বছর বাণিজ্য মেলা, বৃক্ষমেলা, শিল্প মেলা, আমের মেলা, বিজয় মেলা, স্বাধীনতা মেলা, বৈশাখী মেলা, তাঁতবস্ত্রের মেলা, খাদ্যমেলা ইত্যাদি বিভিন্ন মৌসুমী মেলার কারণে খেলাধুলা বন্ধ থাকে। তবে জেলা প্রশাসন চট্টগ্রাম আউটার স্টেডিয়ামকে নতুন করে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে, যা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। গত ৪ মে দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘নগরীর আউটার স্টেডিয়াম নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা হচ্ছিল। অনেকেই এই আউটার স্টেডিয়াম দেখে হতাশ হয়েছেন। কারণ এই আউটার স্টেডিয়াম থেকেই যে অনেকেই তারকা হয়েছে। সে আউটার স্টেডিয়াম গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে পরিণত হয়েছে পরিত্যক্ত ভূমিতে। খেলা নেই। কেবল মেলাই হতো। সে সাথে ছিল অবৈধ দখলদারদের কবলে। অবশেষে অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে মুক্ত হয়েছে আউটার স্টেডিয়াম। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক এবং চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান গত ১৯ মার্চ গুঁড়িয়ে দেন আউটার স্টেডিয়ামের চার পাশের সব অবৈধ স্থাপনা। এর আগে তিনি এই আউটার স্টেডিয়াম নিয়ে একটি পরিকল্পনা করেন। সেখানে কিভাবে আউটার স্টেডিয়ামকে আবার খেলার মাঠ হিসেবে পরিণত করা যায় সে জন্য নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। খেলার মাঠে আর মেলা হবে না এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে তিনি চট্টগ্রামের খেলোয়াড় সৃষ্টির উর্বর ভূমি আউটার স্টেডিয়ামকে আবার খেলার মাঠে পরিণত করার উদ্যোগ নেন। সে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রথমে আউটার স্টেডিয়ামের চারপাশে ঘেরাও দেওয়া হবে। যার কাজ শুরু হবে আগামী রোববার ৭ মে থেকে। যদিও গত ৩ মে আনুষ্ঠানিকভাবে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক এবং সিজেকেএস সভাপতি আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। রোববার থেকে শুরু হবে পুরোদমে এই কার্যক্রম। আউটার স্টেডিয়ামকে কিভাবে দৃষ্টি নন্দন একটি খেলার মাঠে পরিণত করা যায় সে জন্য একটি পরিকল্পনা প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্থপতি আশিক ইমরানকে। এরই মধ্যে তিনি একটি স্ট্রাকচারাল ডিজাইন তৈরি করেছেন। যেখানে দেখানো হয়েছে আউটার স্টেডিয়ামে কী কী থাকছে। এই স্থপতি জানান, প্রথমে থাকছে আউটার স্টেডিয়ামের চারপাশে সীমানা প্রাচীর। এরপর সংস্কার করা হবে মাঠ। বর্তমান মাঠের যে অবস্থা রয়েছে সেখানে আরো দুই ফুট মাটি ভরাট করা হবে। এরপর সেখানে ঘাস লাগিয়ে সেটিকে খেলাধুলার উপযোগী করা হবে।’
‘খেলার মাঠ‘ মানবসভ্যতার বিবর্তন ও ক্রমবিকাশের সাক্ষী। এক একটি খেলার মাঠ এক এক অঞ্চলের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও পরিবেশগত ইতিহাস। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সবাই খেলার মাঠের গুরুত্ব বুঝলেও কিছু মানুষ বাংলাদেশের সব খেলার মাঠ চুরমার করে দিচ্ছে। নগরায়ণ, শিল্পায়ন, দখল কিংবা অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে আমাদের স্মৃতিময় খেলার মাঠগুলো আজ বিপদে। খেলার মাঠ বাঁচাতে দেশজুড়ে আজ লড়ছে মানুষ। যদিও খেলার মাঠ রক্ষায় জনআন্দোলন নতুন ঘটনা নয়।
ইতোপূর্বে প্রকাশিত আজাদীর অন্য এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আউটার স্টেডিয়াম এখন একরকম ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। চার পাশের রেস্টুরেন্ট আর ভাসমান দোকানগুলো থেকে ময়লা পড়ছে সেখানে। ড্রেন দিয়ে যাচ্ছে পাবলিক টয়লেটের ময়লা। ফলে দূষিত হয়ে পড়েছে চারপাশ। এখন এসব জঞ্জাল পরিষ্কার করে আউটার স্টেডিয়ামকে সংস্কার করাটা বড় একটি চ্যালেঞ্জও। আর সে চ্যালেঞ্জ উৎরাতে চান জেলা প্রশাসক এবং জেলা ক্রীড়া সংস্থা।
জেলা প্রশাসক এবং জেলা ক্রীড়া সংস্থার এই উদ্যোগ সময়োপযোগী। সুধীজনের মতে, ‘আউটার স্টেডিয়ামের সঙ্গে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাস যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। চট্টগ্রামের খেলাধুলার ভবিষ্যতও এটির ওপর অনেকটা নির্ভর করে। সেই ভবিষ্যৎকে স্বপ্নময় করতে এ ধরনের সিদ্ধান্ত বা উদ্যোগের খুবই প্রয়োজন ছিল’। আউটার স্টেডিয়াম এলাকায় মেলা আয়োজনের যে তোড়জোড়, সেটা বন্ধ করে খেলার আয়োজনের ব্যবস্থা করতে হবে। মেলার জন্য অন্য কোনো স্থান বাছাই করতে হবে। খেলাধুলার মধ্যেই মানুষ খুঁজে পায় জীবন বিকাশের উন্মুক্ত বিশালতা, পায় জীবন সংগ্রামের দুর্জয় মনোভাব। তার জন্য এই মাঠ অবারিত হোক– সেই প্রত্যাশা সুধীজনের।