ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় অবস্থিত ফারাক্কা বাঁধের ১০৯টি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে বাংলাদেশে বন্যার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে বন্যায় বিপর্যস্ত দেশের দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি জেলা। গত শনিবার থেকে খুলে দেওয়া হয় বাঁধের অধিকাংশ গেট। আর গতকাল সোমবার সর্বোচ্চ ১০৯টি গেট খুলে দেওয়া হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ–বিভাগীয় প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) মো. ময়েজ উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, রোববার পর্যন্ত ফারাক্কার ২৭টি গেট খোলা ছিল। আজ (গতকাল) বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখলাম মোট ১০৯টি গেট খোলা হয়েছে। এভাবে হঠাৎ এতগুলো গেট খুলে দিলে এ অঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। খবর বাংলানিউজের।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিভারাইন পিপলের পরিচালক এম আনোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ফারাক্কার গেট খুলে দেওয়ার খবরটি আমাদের জন্য বিপজ্জনক। দেশের রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জসহ আশপাশের জেলাগুলো প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, হঠাৎই গেট খোলা হয়নি। তেমন হলে পশ্চিমবঙ্গের মালদহ–মুর্শিদাবাদসহ কাছাকাছি বাংলাদেশ অংশে বন্যা দেখা যেত। কিন্তু তা হয়নি। শুক্রবার রাত থেকে অত্যন্ত ধীর গতিতে ১১ লাখ কিউসেক পানি ছাড়া হয়।
বিগত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ভারতের বিভিন্ন নদ নদীতে পানির চাপ বেড়েছে। বিপদসীমা অতিক্রম করার আগেই দিন দিন ধীরে ধীরে বাড়তি পানি ছাড়ার পরিমাণ বাড়িয়েছে ফারাক্কা বাঁধ কর্তৃপক্ষ। এমনটি জানা গেছে নবান্ন সূত্রে। ফারাক্কা বাঁধ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গোটা ভারতেই পানির প্রবল চাপ বেড়েছে। প্রতি মুহূর্তেই তারা সব বিষয়ের ওপর নজর রাখছে।
এদিকে বিডিনিউজ জানায়, বাংলাদেশে পদ্মা নদীতে এখনও তেমন কোনো প্রভাব দেখা যায়নি জানিয়ে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোকলেসুর রহমান বলেন, সাধারণত বর্ষার সময় ফারাক্কা ব্যারেজের সব গেট খোলাই থাকে। কারণ গেট খেলা না থাকলে তো আমরা এই পানি পেতাম না। তবে ভারতের দুটি রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার ফারাক্কায় চাপ বেড়েছে। এটি স্বাভাবিক বন্যার পানি; পাহাড়ি ঢল নামেনি। ফলে বড় আশঙ্কার কিছু নেই।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার এনামুল হক জানান, পদ্মার রাজশাহী পয়েন্টে গতকাল সোমবার সকাল ৬টায় পানির উচ্চতা ছিল ১৬ দশমিক ২৮ মিটার। সেটি বেড়ে সন্ধ্যা ৬টায় হয়েছে ১৬ দশমিক ৩০ মিটার। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ১৮ দশমিক ০৫ মিটার। অর্থাৎ, ওই সীমা ছাড়িয়ে গেলে বন্যা বলা যাবে। ফারাক্কা ব্যারেজের সবগুলো গেট খুলে দেওয়ার যে কথা শোনা যাচ্ছে, তার প্রভাব এখনো পদ্মায় পড়েনি। সেই পানি রাজশাহীতে আসতে সময় লাগবে। আগামীকাল থেকে তার প্রভাব বোঝা যেতে পারে।
এনামুল হক বলেন, ভারতে বন্যা বেশি হলে ফারাক্কা হয়ে বেশি পানি বাংলাদেশে প্রবেশ করবে এটাই স্বাভাবিক। পদ্মায় পানি বাড়লে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ ও বাংলাদেশের কয়েকটি জেলায় বন্যা হয়। বিশেষ করে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী ও মানিকগঞ্জসহ আশপাশের জেলাগুলোর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।
ফারাক্কা বাঁধের বড় কোনো প্রভাব এখনই বাংলাদেশে পড়বে না বলে মনে করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান। গতরাতে বলে, ফারাক্কা বাঁধ খুলে দেওয়ায় পানি বাড়বে সেরকম কিছু এখনই দেখছি না। গঙ্গা অববাহিকায় নদীর পানি স্থিতিশীল আছে। আগামী পাঁচ দিনেও স্থিতিশীল থাকবে বলেই ধারণা করছি। এখনই পানি বিপৎসীমায় যাবার ঝুঁকি আপাতত নেই।
গুজব ছড়ানো হচ্ছে : এদিকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল গতকাল রাতে এক বিবৃতিতে বলেন, আমরা এমন কিছু ভুয়া ভিডিও, গুজব এবং আতঙ্ক জাগানিয়া তথ্য দেখতে পাচ্ছি, যা ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টির জন্য ছড়ানো হচ্ছে। এর বিপরীতে সঠিক তথ্য অবশ্যই প্রকাশিত হওয়া দরকার। সংবাদমাধ্যমে ফারাক্কা ব্যারাজের গেটগুলো খুলে দেওয়ার খবর আমরা দেখেছি, যার ফলে ব্যারেজ দিয়ে এর স্বাভাবিক গতিপথে গঙ্গা/পদ্মা নদীতে ১১ লাখ কিউসেক পানি প্রবাহিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
বিষয়টিকে বর্ষা মৌসুমের একটি ‘স্বাভাবিক ঘটনা’ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেছেন, উজানে গঙ্গা নদীর অববাহিকায় ভারি বৃষ্টিপাত হলে পানির প্রবাহ যখন বেড়ে যায়, তখন সব সময়ই ব্যারেজের গেইট খুলে দেওয়া হয়। এটা বুঝতে হবে যে ফারাক্কা কেবল একটি ব্যারেজ, ড্যাম নয়। যখনই জলের স্তর ব্যারেজের স্তরে পৌঁছায়, যে পরিমাণ পানির প্রবাহই আসুক, তা বেরিয়ে যায়। এটা গঙ্গা/পদ্মা নদীর ওপর গেট বসিয়ে বানানো একটি কাঠামোমাত্র, যা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে মূল নদী থেকে ৪০ হাজার কিউসেক পানি প্রত্যাহার করে ফরাক্কা খালে নেওয়া যায়, আবার বাংলাদেশের দিকে জলপ্রবাহের ভারসাম্যও ঠিক থাকে।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের সঙ্গে প্রোটোকল অনুযায়ী যৌথ নদী কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে নদীর পানি প্রবাহের তথ্য নিয়মিত বিনিময় করে ভারত, ‘এবারও’ তাই করা হয়েছে।