খাস কালেকশন নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ

কর্ণফুলী নদীর ১৫ নম্বর ঘাট । বিপাকে শতাধিক নৌকার মাঝি

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২১ মে, ২০২৪ at ৮:১৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন পতেঙ্গার ১৫ নম্বর ঘাটের খেয়া পারাপারের খাস কালেকশন নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ করা হয়েছে। স্থানীয় কয়েকশ’ নৌকার মাঝির সমন্বয়ে গঠিত একটি সমবায় সমিতি বাপ দাদার আমল থেকে ঘাটটি ইজারা নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব পরিশোধ এবং খেয়া পারাপার করলেও এবার রাজনৈতিক বিবেচনায় তাদের কাছ থেকে ঘাট কেড়ে নেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করা হলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়রসহ চারজনকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ এবং টেন্ডারের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত খাস কালেকশনের দায়িত্ব মাঝিদের প্রদান করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। গতকাল শতাধিক নৌকার মাঝি দৈনিক আজাদী কার্যালয়ে এসে তাদের আক্ষেপের কথা জানিয়ে অন্তত পাঁচশ’ পরিবার অনাহারে অর্ধাহারে দিনতিপাত করছে বলে জানিয়েছে।

কর্ণফুলী নদীতে ২১টি ঘাট রয়েছে। এর মধ্যে ১৬টি ঘাট দিয়ে নিয়মিত যাত্রী পারাপার হয়। দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিস্তৃত এলাকার মানুষের একটি অংশ এসব ঘাট ব্যবহার করে প্রতিদিন শহরে আসা যাওয়া করেন। কয়েক হাজার সাম্পান মাঝি এসব ঘাটে নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।

সম্প্রতি সিটি কর্পোরেশন সবগুলো ঘাটের ইজারা প্রদানের জন্য টেন্ডার আহ্বান করে। কিন্তু টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ এনে একটি ঘাটের টেন্ডার নিয়ে মামলা করে দেয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সবগুলো ঘাটের টেন্ডারই স্থগিত হয়ে যায়। এর মধ্যে ১৫ নম্বর ঘাট নিয়ে কোন অভিযোগ না থাকলেও টেন্ডার স্থগিত হয়ে যাওয়ায় সিটি কর্পোরেশন দৈনিক ২৫ হাজার টাকা রাজস্ব নির্ধারণ করে এক ব্যক্তিকে খাস কালেকশনের দায়িত্ব দেয়। কিন্তু ওই ঘাটের ইজারাদার প্রতিষ্ঠান স্থানীয় একটি সমবায় সমিতি। দক্ষিণ পতেঙ্গা কর্ণফুলী সমবায় সমিতির নামের ওই সংগঠনটি ১৯৮৮ সাল থেকে ঘাটটি ইজারা নিয়ে আসছে। তাদের বাপ দাদাদের আমল থেকে এই ঘাটে নৌকা চালিয়ে যাত্রী পারাপারের মাধ্যমে জীবন ধারণ করে। গত বছরও তারা ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ইজারাদর পরিশোধ এবং বিপুল অর্থ ভ্যাট হিসেবে প্রদান করে। এবারও তারা টেন্ডারে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু টেন্ডার স্থগিত হয়ে যাওয়ায় তাদের পরিবর্তে অপর এক ব্যক্তিকে খাস কালেকশনের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়। কর্ণফুলী সমবায় সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয় যে, তারা ঘাট পরিচালনা করে আসছে বহু বছর ধরে। গতবছরও তারা ঘাট ইজারা নিয়েছে। এখনো তারা দৈনিক ২৫ হাজার টাকা রাজস্ব প্রদান করে ঘাট ইজারা কিংবা খাস কালেকশনে রাজি বলে সিটি কর্পোরেশনকে প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু তাদের শতাধিক মাঝিকে ঘাট না দিয়ে একজন মানুষকে ঘাট দেয়ায় সব নৌকার মাঝিকে ঘাট থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এতে করে অন্তত পাঁচশ’ পরিবার চরম আর্থিক সংকট ও কষ্টে পড়ে গেছে বলে গতকাল শতাধিক মাঝি দৈনিক আজাদী কার্যালয়ে এসে অভিযোগ করেন।

তারা হাইকোর্টে রিট করেছেন বলে কাগজপত্র দিয়ে বলেন, হাইকোর্টের মাননীয় বিচারপতি নাঈমা হায়দার এবং বিচারপতি কাজী জিনাত হকের আদালত গত ৩০ এপ্রিল যে নির্দেশ প্রদান করেছেন সিটি কর্পোরেশন তা মানছে না। আমাদেরকে আজ নয় কাল বলে ঘোরাচ্ছে। শতাধিক নৌকার মাঝি তাদের পেটে লাথি না দেয়ার জন্য সিটি কর্পোরেশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

এই ব্যাপারে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের স্টেট অফিসার মোহাম্মদ রেজাউল করিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, টেন্ডার নিয়ে একটি মামলার কারণে আমরা আর কিছু করতে পারছি না। আদালতের নির্দেশনা অনুসরণ করেই আমাদেরকে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসৈয়্যদ আহমদ শাহ্‌ সিরিকোটি (রহ.) সুন্নী মুসলমানদের চেতনার আলোকবর্তিকা
পরবর্তী নিবন্ধপ্রান্তিক পর্যায়ে দক্ষ এসএমই উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে : অর্থ প্রতিমন্ত্রী