রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড দুধ পুকুরিয়া রাবার ড্যামের পানি ছেড়ে দেয়া হয়েছে। দীর্ঘদিনের জমাটবদ্ধ এই পানি ছেড়ে দেয়ার পর খালে মাছ ধরতে ভিড় করেন স্থানীয় মানুষ। শিলক খালের পদুয়া ব্রিজঘাটা এলাকায় এই রাবার ড্যামটি তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের উদ্যোগে নির্মাণ করা হয়। এর সুফল পাচ্ছেন স্থানীয় হাজার হাজার কৃষক। রাবার ড্যাম স্থাপনের পর ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এরশাদ মাহমুদ গেল ১০ বছর ধরে সেখানে মাছ চাষাবাদ করেন। পরে রাবার ড্যামের পানি ছাড়ার পর মাছগুলো সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেন তিনি। উন্মুক্ত এই খালে সর্বসাধারণের একযোগে মাছ ধরার দৃশ্য যে কাউকে মুগ্ধ করে। গতকাল শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শত শত মানুষ জাল নিয়ে রাবার ড্যাম সংলগ্ন খাল এবং বিলে মাছ ধরছেন। প্রত্যেককেই কয়েক কেজি করে মাছ ধরে নিয়ে ঘরে ফিরতে দেখা গেছে। বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছের পাশাপাশি ১০/১২ কেজি ওজনের বড় মাছও পেয়েছেন বলে জানান স্থানীয় অনেকেই। মাছ ধরতে আসা স্থানীয় মহির উদ্দিন রানা জানান, আধাঘণ্টা সময় দিয়ে তিনি ছোট–বড় তিন কেজি মাছ পেয়েছেন। অনেকে ৮–১০ কেজি মাছও পেয়েছেন। প্রতি বছর এই সময়ে এসে মাছ ধরার উৎসবে মাতেন পদুয়া ও আশেপাশের এলাকার মানুষ। জানা যায়, ২০১৩ সালে ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে শিলক খালের পদুয়া ব্রিজঘাটা এলাকায় এই রাবার ড্যাম প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়। এর ফলে নাপিত পুকুরিয়া বিল, কইয়াতলা বিল ও দুধপুকুরিয়া বিলের অনাবাদি জমি চাষাবাদ হচ্ছে। ড্যামের আওতায় তিন–চারশ একর জমিতে প্রায় একহাজার কৃষক চাষাবাদ করে থাকেন। পানি সঙ্কট না থাকায় বছরের দুই মৌসুমে ধান উৎপাদন করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। এছাড়াও বান্দরবানগামী পর্যটকরা যাত্রাপথে এই রাবার ড্যামের সৌন্দর্য উপভোগে নেমে পড়েন।
রাবার ড্যাম ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এরশাদ মাহমুদ বলেন, আগে স্থানীয়রা শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদ করার লক্ষে চাঁদা সংগ্রহ করে মাটি কেটে বাঁধ দিয়ে পানি ধরে রাখতো। তবে তথ্যমন্ত্রীর হাত ধরে রাবার ড্যাম স্থাপিত হওয়ার পর এর সুফল পাচ্ছেন স্থানীয় কৃষক। পাশাপাশি রাবার ড্যামে পানি ধরার পর নিজ উদ্যোগে এবং নিজস্ব অর্থায়নে সেখানে লাখ লাখ মাছের পোনা ছেড়ে দেয়া হয়। পাশাপাশি সেই পোনাগুলো খাবার দিয়ে যত্ন করে বড় করা হয় এবং পানি ছেড়ে দিলে মাছগুলো সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, পানি ছাড়ার দিনে সকলে খুব উৎসবঘন পরিবেশে মাছ ধরেন। এটি দেখে আমার খুব ভাল লাগে। এই ভাল লাগা থেকেই গত ১০ বছর ধরে এভাবে সবার জন্য মাছ চাষাবাদ করি এবং তা উন্মুক্ত করে রাখি।
উল্লেখ্য, রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পারুয়া, শিলক ও পদুয়া ইউনিয়নে স্থাপিত তিনটি রাবার ড্যাম বদলে দিয়েছে এসব এলাকার কৃষকের ভাগ্য। হাজার হাজার একর অনাবাদি জমি বছরের ১২ মাস এখন চাষাবাদ হচ্ছে। এছাড়াও রাবার ড্যামের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছেন মানুষ। এসব রাবার ড্যামের ফলে মৎস্যচাষের অপার সম্ভাবনাও সৃষ্টি হয়েছে।