চলতি শুষ্ক মৌসুমে নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে গত ১ অক্টোবর। প্রকল্পভুক্ত ৩৬টি খালের মধ্যে ৩৪টি খালেই চলছে কর্মযজ্ঞ। এর মধ্যে বেশিরভাগ খালে প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে। কোনো কোনো খালের উপর ব্রিজ করা হচ্ছে। ব্রিজ ও প্রতিরক্ষা দেয়ালের কাজ যেখানে যেখানে চলছে কাজের সুবিধার্থে খালের সে অংশে দেয়া হয়েছে বাঁধ।
এদিকে গত দুইদিনের বৃষ্টিতে নগরের বিভিন্ন এলাকায় ‘সাময়িক’ যে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে তার অন্যতম কারণ ছিল বাঁধগুলোই। কারণ এসব বাঁধের কারণে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ শাহ আলী দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নেই বললেই চলে। তবে খালে থাকা বাঁধের জন্য কয়েক জায়গায় কিছু সমস্যা হয়েছে। কিছু কিছু খালে বাঁধগুলোতে পানি সাময়িকভাবে আটকে যায়। বিষয়টা অনেকটা এরকম আমরা কাজ শুরু করার কারণেই সমস্যা তৈরি হয়। অবশ্য যেখানে বেশি সমস্যা হয়েছে সে বাঁধগুলো আমরা কেটে দিয়েছি। এবং এরপর পানিও দ্রুত নেমে যায়।’
প্রসঙ্গত, নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্পটি গ্রহণ করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ৫ হাজার ৬শ’ ১৬ কোটি ৪৯ লক্ষ ৯০ হাজার টাকায় ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সমপ্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক চলমান মেগাপ্রকল্পটি ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট একনেকে অনুমোদন পেয়েছিল। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। অবশ্য প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়েছে। ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সিডিএর সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছিল। পরবর্তীতে নানা প্রক্রিয়া শেষে একই বছরের ২৮ এপ্রিল চশমা খাল ছাড়াও মুরাদপুর এলাকার সুন্নিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন খাল ও বহদ্দারহাট মোড়ের বড় নালা পরিষ্কার করার মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। গত অর্থ বছরে প্রকল্পের আওতায় ব্যাপক কাজ হয়েছে। প্রকল্পের আওতায়
শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাকে চিহ্নিত করে গত অর্থ বছরে খাল খনন ও পরিষ্কার, ড্রেন সমপ্রসারণ ও পরিষ্কার এবং রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ কাজ করা হয়। ফলে সাধারণ মানুষ মনে করেছে, প্রকল্পের সুফল মিলবে। এবং জলাবদ্ধতাও কম হবে। অথচ গত দুইদিনের বৃষ্টিতে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। বেশ কিছু এলাকায় পানি জমেছিল। অবশ্য অনেক এলাকা থেকে পানি দ্রুত নেমেও যায়।
গত দুইদিনের বৃষ্টিতে পানি আটকে থাকার কারণ ব্যাখ্যা করে সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ শাহ আলী দৈনিক আজাদীকে বলেন, অসময়ে বৃষ্টি হওয়ায় সামান্য সমস্যা তো হয়েছেই। আসলে যে কয়েক জায়গায় পানি জমেছে তা কিন্তু প্রকল্পের কাজ শুরু করার কারণেই জমেছে। কারণ, শুষ্ক মৌসুম শুরু হয়েছে। এবং এ উপলক্ষে গত পহেলা অক্টোবর থেকে খালে বাঁধ দিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। এ বাঁধের কারণেই পানি আটকে ছিল কিছু জায়গায়। বা অল্প পানি উঠেছে। এছাড়া অন্য জায়গায় পানি তো নেই বললেই চলে।’
বাঁধের কারণে কোন কোন স্পটে সমস্যা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চশমা খালে বাঁধ দিয়ে রিটেইনিং ওয়ালের বেইজ ঢালাই করছি। দুয়েকদিন আগে একটা বেইজ হয়েও গেছে। আরেকটার কাজ চলছে। দুইটা ব্রিজের কাজ শুরু করেছি সেখানে। যার ফাইলিংয়ের কাজ চলছে। বাঁধ না দিলে এসব কাজ তো করা যায় না। তাই বাঁধের কারণে সমস্যা হয়েছে।
এদিকে গতকাল মুরাদপুর ও বহদ্দারহাটের জলাবদ্ধতার স্থায়ীত্ব ছিল বেশি। এর কারণ হিসেবে মেগাপ্রকল্পের পরিচালক জানান, বহাদ্দারহাট পুলিশ বঙের পিছনেও চাক্তাই খালে তথা বহদ্দারহাট ব্রিজের সাথে লাগানো অংশে প্রতিরক্ষা দেয়ালের কাজ চলছে। সেখানে খালের মধ্যে মাটি ফেলে রাস্তা করা হয়েছে। এ কারণে খাল সরু হয়ে পানি নিষ্কাশনে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। রাস্তাটি গতকাল বিকেলে কেটে ফেলা হয়। এবং এরপর পানি দ্রুত নেমে যায় বলেও জানান লে. কর্নেল মোহাম্মদ শাহ আলী। এছাড়া বহদ্দারহাটের পূর্ব অংশে বহদ্দারহাটে ফ্লাইওভারের বর্ধিত লুফের শুরু যেখানে তার ডানপাশে ডোমখালেও বাঁধ ছিল। সেটিও কেটে দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হালিশহরে পানি ছিল। কারণ আগ্রাবাদ এবং হালিশহরে ড্রেনের কাজ চলছে। এবং কাজের জন্য অনেক জায়গায় ড্রেনগুলো বন্ধ অবস্থায় আছে। অবশ্য কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। পরিকল্পনা অনুযায়ী শেষ করার জন্য দ্রুত কাজও করছি। তবে এখন যেখানে যেখানে বন্ধ অবস্থায় আছে সেখানে কেটে দিচ্ছি। এতে পানিও দ্রুত নেমে যায়।
এদিকে কাতালগঞ্জ ও প্রবর্তক মোড়সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় জলাবদ্ধতার স্থায়ীত্ব অন্য সময়ের তুলনায় কম ছিল। এর কারণ হিসেবে সেনাবাহিনীর এ কর্মকর্তা বলেন, কাতালগঞ্জ এলাকায় তেমন পানি ওঠেনি। কারণ, ওই এলাকার পানি প্রবাহিত হয় হিজড়া খাল দিয়ে। এ খালে আমরা কাজ করেছি। তাই এ খালের সাথে কানেকটেড এলাকায় পানি ওঠেনি। প্রবর্তক মোড়েও পানি তেমন ছিল না। কারণ ওখানেও কাজ প্রায় শেষ করেছি। ওখানে কোনো বাঁধ নেই। তাই সেখানে তেমন পানি জমে ছিল না। সামান্য কিছু পলিথিন আটকে গিয়েছিল। আমরা সেগুলো পরিষ্কার করে দিয়েছি। তাই প্রবর্তক মোড়ের অবস্থা আগের মত খারাপ হয়নি এবার। সেখানে ব্রিজের নির্মাণ কাজের জন্য যে সমস্যা ছিল সেটা এখন আর নেই। নির্মাণ শেষে ব্রিজটা ওপেন করে দিয়েছি। ওখানে যে ফুটপাত আছে সেটা তুলে ফেলবো। কারণ বিভিন্ন ময়লা, প্লাস্টিক ওখানে গিয়ে আটকে যায়।
মহেশখাল দিয়ে যেসব এলাকার পানি প্রবাহিত হয় ওইসব এলাকার অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মহেশখালকে ঘিরেও অবস্থা তেমন খারাপ হয়নি। তাই সেখানে এখন পর্যন্ত বাঁধ কাটিনি। সেখানে একপাশে কিছুটা ওপেন আছে। পাথরঘাটাসহ
আশেপাশের এলাকার পানি নিষ্কাশনের গুরুত্বপূর্ণ খাল মরিয়মবিবি ও কলাবাগিচা খালের জন্যও তেমন সমস্যা হয়নি। যদিও ওখানে বাঁধ দেয়া আছে। কিন্তু পাইপের মাধ্যমে পানি চলে যাচ্ছে। ফিরিঙ্গিবাজারে সমস্যা হয়নি, কারণ সেখানে বাঁধ কেটে দেয়া আছে।
তবে কি মেগাপ্রকল্পের শেষ হওয়া কাজের সুফল পাওয়া যাচ্ছে? এমন প্রশ্নে লে. কর্নেল মোহাম্মদ শাহ আলী বলেন, ইতোমধ্যে প্রকল্পের সুফল তো আমরা পেয়েছি। এখন নতুন করে কাজ শুরু করেছি। এখন কোথাও পানি উঠলে সাময়িক যে সমস্যা সেটা আমাদের কাজ শুরু করার কারণেই হয়েছে। এক্ষেত্রে চাক্তাই খাল, চশমা খাল, বামনশাহীসহ কয়েকটি খালেই বাঁধ আছে জানিয়ে তিনি বলেন, বৃষ্টি হলে সংশ্লিষ্ট খাল রিলেটেডে এলাকায় সামান্য সমস্যা হতে পারে। তবে কম হবে।’