খালেদা জিয়ার দোষ স্বীকার করে আবেদন করার প্রশ্নই আসে না

বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে খন্দকার মোশাররফ।। চট্টগ্রাম থেকে সরকার পতন আন্দোলন শুরু করার আহ্বান

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৫:৫৮ পূর্বাহ্ণ

বিদেশে নিয়ে যেতে রাষ্ট্রপতির কাছে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়ার আবেদন করা হবে না বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিতে ‘আইন নয়, প্রধানমন্ত্রীই প্রধান বাধা’ মন্তব্য করে তাকে মুক্তি এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি না দিলে চট্টগ্রাম থেকে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করতে দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
গতকাল বিকেলে নগরের বাকলিয়া কালামিয়া বাজারের কে বি কনভেনশন হল সংলগ্ন মাঠে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে আয়োজিত বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মো. নাছির উদ্দীন ও বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম। নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, এস এম ফজলুল হক, কেন্দ্রীয় বিএনপির মৎস্য বিষয়ক সম্পাদক লুৎফুর রহমান কাজল ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান।
গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেছিলেন, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা নিয়ে খালেদা জিয়া বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে পারেন। এ বিষয়ে খন্দকার মোশাররফ বলেন, প্রেসিডেন্টের কাছে কারা ক্ষমা চান, যারা দোষী। কিন্তু বেগম জিয়া তো দোষ করেননি। দোষী না হয়েও দোষ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনার করার নেত্রী তো তিনি নন। তিনি আপসহীন নেত্রী। ১/১১-এর সময় আপস করেননি। আওয়ামী লীগ এরশাদের সাথে হাত মিলিয়ে নির্বাচনে গিয়েছিল, বেগম জিয়া আপসহীন ছিলেন। আজ তিনি আপস করবেন? কত বড় দুঃসাহস! দোষ স্বীকার করে আবেদন করার প্রশ্নই আসে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা বলেন, বেগম খালেদা জিয়া বিদেশে যান, এটা নাকি আইনে নাই। তাদের আমাদের সবক দিতে হবে না। আবেদন করব না, সেটা বিএনপির একজন সাধারণ কর্মীও জানে।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, শেখ হাসিনা বলেছেন, বাসায় থাকতে দিচ্ছেন সেটাই নাকি অনেক। এ কথার অর্থ কি? প্রধানমন্ত্রীর প্রতিহিংসার কারণেই তাকে বন্দি রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, যে আইনে সাময়িকভাবে সাজা স্থগিত রাখা হয়েছে, সেই আইনের মাধ্যমেই বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে সরকার অনুমতি দিতে পারে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য নানা শর্ত দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, যে আইনের আলোকে নির্বাহী আদেশে শর্ত দিয়ে সাময়িক সাজা মওকুফ করেছে সে আইনে স্পষ্ট বলা আছে, সরকার যে কোনো সময় ‘উইদাউট কন্ডিশন’ (শর্ত ব্যতীত) সাজা স্থগিত করতে পারে। কিন্তু সেখানে শর্ত দিয়েছে। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলছেন, তার কিছু করার নেই। আমরা বলতে চাই, আইনটি আপনি প্রয়োগ করেন। যদি ‘উইদাউট কন্ডিশন’ প্রয়োগ করা হয়, তাহলে বেগম জিয়ার বিদেশে যেতে কোনো বাধা নাই। তাই পরিষ্কার করে বলতে পারি, আইনের কোনো বাধা নেই। বাধা হচ্ছেন ভোট ডাকাতির প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীই একমাত্র বাধা, সরকারই একমাত্র বাধা।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, দেশের ১৮ কোটি মানুষের প্রত্যাশা, মুক্তি দিয়ে বেগম জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা দেয়া হোক। স্বাধীন দেশে চিকিৎসার জন্য দাবি করতে হচ্ছে, সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি বলেন, বিদেশে চিকিৎসার জন্য সকল বাধা তুলে দেন, না হলে পতনের আন্দোলনের জন্য এই চট্টগ্রাম প্রস্তুত।
সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, গায়ের জোরে অনেকদিন ক্ষমতায় আছেন। দেশকে ধ্বংসের শেষ সীমান্তে নিয়ে গেছেন। সরকারকে একটি ধাক্কা দিতে পারলেই কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। পুলিশকে থানায় রাখেন, মাঠে আওয়ামী লীগকে পাঠান। তখন মাঠে প্রমাণ করব। দেশের মানুষের দাবির চাপে বাধ্য হয়ে বেগম জিয়াকে সাময়িক কারাদণ্ড স্থগিত করে বাড়িতে থাকতে দিয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মীর মো. নাছির উদ্দীন বলেন, শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার সুবাদে নিজের মামলাগুলো তুলে নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে জেলে নিয়ে যাচ্ছেন। তারা জনগণের সরকার না, তারা বাহিনীর সরকার।
ডা. শাহাদাত বলেন, সরকারকে বলছি, বেগম জিয়াকে মুক্তি দিন অথবা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করুন। অন্যথায় জনগণ আপনার বিদায় ঘণ্টা বাজাবে।
মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, আজকের সমাবেশ প্রমাণ করেছে দেশনেত্রীকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য মুক্তি দেয়া না হলে চট্টগ্রামকে অচল করে দেয়া হবে। আমরা ঘরে বসে থাকব না।
নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির উপজাতি সম্পাদক ম্যা মা চিং, সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দীন মজুমদার, হারুন অর রশিদ, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় মহিলা সম্পাদক নুরী আরা সাফা, সাবেক এমপি শাহাজাহান চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী, নোয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম হায়দার, মহানগর বিএনপির সৈয়দ আজম উদ্দিন, এরশাদ উল্লাহ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোসতাক আহমদ খান, নগর যুবদলের সভাপতি মোশারফ হোসেন দিপ্তী, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সাহেদ, নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান, নগর ছাত্রদলের সদস্য সচিব শরিফুল ইসলাম তুহিন ও দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শহিদুল আলম শহীদ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাঁশখালী পৌরসভা নির্বাচন ১৬ জানুয়ারি
পরবর্তী নিবন্ধবধ্যভূমিতে একদিন