খান সরওয়ার মুরশিদ – বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী ও কূটনীতিক। বাঙালির শিক্ষা-সংস্কৃতি এবং প্রগতিশীল চিন্তা ও মননে তিনি ছিলেন আলোর দিশারী। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং ভাষা আন্দোলনের সক্রিয় নেতা ছিলেন তিনি। শিক্ষকতার পাশাপাশি প্রগতিশীল চিন্তাধারার ধারক ও বাহক হিসেবে আজীবন নানাভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন দেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে। মননশীল প্রাবন্ধিক হিসেবেও ছিলেন খ্যাতিমান। আজ তাঁর ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী।
খান সরওয়ার মুরশিদের জন্ম ১৯২৪ সালের ১ জুলাই কুমিল্লায়। লেখাপড়া করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে। পরবর্তী সময়ে নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়েছেন পিএইচডি ডিগ্রি। তাঁর কর্মজীবনের শুরু ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজির প্রভাষক হিসেবে।
পরবর্তী সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং কমনওয়েলথের সহকারী মহাসচিব হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। দেশে ফিরে আবার যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। অবসর গ্রহণের পরও সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক হিসেবে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথেই সম্পৃক্ত ছিলেন খান সরওয়ার মুরশিদ। বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা আন্দোলনের নীতিনির্ধারক ও পরিকল্পনাকারীদের অন্যতম ছিলেন প্রগতিশীল এই রাজনৈতিক বোদ্ধা।
ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ছেষট্টির ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে বিভিন্ন সংকটকালীন সময়ে উজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছেন। শিক্ষা, সংস্কৃতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন আজীবন এবং আপোষহীনভাবে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ব্রতী ছিলেন। সমাজ ও রাষ্ট্রের উচ্চ পদে আসীন থেকেও দেশ ও জাতির স্বার্থের প্রশ্নে ছ্লিেলন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ। শিক্ষা ও গবেষণায় অসামান্য অবদানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন তাঁকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করে। ২০১০ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। বাংলা একাডেমি ও এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশের সম্মানিত ফেলো ছিলেন খান সরওয়ার মুরশিদ। পেয়েছেন জাহানারা ইমাম স্মৃতি পদক, কণ্ঠশীলন পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কার। তাঁর প্রকাশনা ও সম্পাদনায় প্রকাশিত হতো ‘নিউ ভ্যালুজ’ নামের একটি ইংরেজি পত্রিকা। ‘কালের কথা’ নামে তাঁর একখানা গ্রন্থ রয়েছে। ২০১২ সালের ৮ ডিসেম্বর প্রগতিশীলতার সংগ্রামে নিবেদিতপ্রাণ যোদ্ধা খান সরওয়ার মুরশিদ প্রয়াত হন।