খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় মনোযোগ বাড়াতে হবে

| রবিবার , ১৫ অক্টোবর, ২০২৩ at ৪:৪৫ পূর্বাহ্ণ

ক্ষুধার সূচকে বাংলাদেশের সামান্য অগ্রগতিও নিঃসন্দেহে আনন্দের। গত ১৪ অক্টোবর দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, অপুষ্টি আর খর্বাকৃতির শিশু জন্ম হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে উন্নতি অব্যাহত থাকায় ক্ষুধামুক্তির লড়াইয়ে আরো একটু এগিয়েছে বাংলাদেশ। কনসার্ন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ও ওয়েল্ট হাঙ্গার হিলফে চলতি বছরের যে ‘বিশ্ব ক্ষুধা সূচক’ প্রকাশ করেছে, তাতে বাংলাদেশের স্কোর গতবারের ১৯.১ থেকে কমে ১৯ পয়েন্ট হয়েছে। এই সূচকে ১৯ স্কোর মানে হলো, যেসব দেশে ক্ষুধার সংকট মাঝারি পর্যায়ে, সেই তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। অপুষ্টির হার, ৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে উচ্চতার তুলনায় কম ওজনের শিশুর হার, ৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে কম উচ্চতার শিশুর হার, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার এই চারটি মাপকাঠিতে প্রতিটি দেশের পরিস্থিতি বিচার করে তৈরি হয় গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স (জিএইচআই) বা বিশ্ব ক্ষুধা সূচক।

ক্ষুধার সূচকে গত বছর ১১৬টি দেশের মধ্যে ৭৬তম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। আর এ বছর ১২৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশর অবস্থান ৮১তম। ২০১২ সালের পর থেকে ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে। তীব্র ক্ষুধা সংকটের পরিস্থিতি হিসেবে বিবেচিত স্কোর ২৮.৬ থেকে মাঝারি মাত্রার ১৯ স্কোরে নেমেছে।

সামপ্রতিক প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, বিশ্বে অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের অর্ধেকেরও বেশি অংশের বসবাস এশিয়াপ্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে। মারাত্মক অপুষ্টি থেকে শুরু করে অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতা পর্যন্ত বিস্তৃত পরিসরে এবং প্রায় সব বয়সী মানুষের ওপরেই অপুষ্টির নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, তবে বিশেষ করে শিশুদের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব বেশি পড়ে এবং তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই অঞ্চলে ৭ কোটি ৯০ লাখ শিশু বা পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রতি চার শিশুর একজন খর্বাকৃতির সমস্যায় ভুগছে এবং ৩ কোটি ৪০ লাখ শিশুর জীবন অকেজো হয়ে যাচ্ছে, যাদের মধ্যে ১ কোটি ২০ লাখ শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে এবং ভয়াবহভাবে ক্রমবর্ধমান মৃত্যু ঝুঁকিতে রয়েছে। যদিও গত দশকে শিশুর খর্বাকৃতির সমস্যা নিরসনে উল্লেখযোগ্য কিছু অগ্রগতি হয়েছে, তবে শিশুর জীবন অকেজো হয়ে পড়া ঠেকাতে খুব কমই অগ্রগতি হয়েছে।

ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা সবসময়ই একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। এ দেশে প্রায়ই খাদ্যাভাব দেখা দিতো, দুর্ভিক্ষ হতো। খাদ্য নিরাপত্তাকে সব সময়ই মনে করা হতো অধরা হরিণের মতো যা অর্জন করা কখনো সম্ভব নয়। কিন্তু বিগত ১০ বছরে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। করোনা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাঝেও এ অর্থবছরে খাদ্যশস্যের (চাল, গম ও ভুট্টা) উৎপাদন কমেনি। এ কথা সর্বোতোভাবে স্বীকৃত যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব ও নির্দেশনায় সরকারের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অনেকটা অগ্রগতি হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অধিক জনসংখ্যার এ দেশে ক্ষুধা ও অপুষ্টি একটি বড় সমস্যা। কৃষি উৎপাদনে বাংলাদেশের সাফল্য এ সমস্যা কমিয়ে আনতে ভূমিকা রাখছে, সন্দেহ নেই। এর কৃতিত্ব মূলত কৃষকদের। তারা যাতে এক্ষেত্রে আরও সাফল্য অর্জন করতে পারেন, সেজন্য সরকারের সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে, ক্ষেত্রবিশেষে এ সহায়তা আরও বাড়াতে হবে। এ জন্য কৃষিজাত খাদ্য উৎপাদনে জাতীয়, দ্বিপাক্ষিক, বহুপাক্ষিক এবং বেসরকারি প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে। ক্ষুধা সমস্যা সম্পর্কে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্ষুধা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সঠিক পথেই এগোচ্ছে। তবে আগামীতে এ উন্নতির গতি আরও বাড়াতে হবে। জাতিসংঘের চারটি বিশেষায়িত সংস্থা আগেই সতর্ক করে জানিয়ে দিয়েছিল, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো যদি সব ধরনের অপুষ্টির অবসানে এবং ২০৩০ সাল নাগাদ ক্ষুধামুক্ত অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় নিজেদের পুনরায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ না হয়, তাহলে এই অঞ্চলের মানুষ ও অর্থনীতি ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। অপুষ্টি নিরসনকে অগ্রাধিকার দেওয়া সত্ত্বেও এটি সারা বিশ্বেই একটি ভয়াবহ সমস্যা। প্রতিটি রাষ্ট্রকেই এই সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেকটা পথ এগিয়ে গেছে, যা আমাদের প্রত্যাশাকে বাড়িয়ে দেয়। দেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার বিষয়টি যেন ঝুঁকির মধ্যে না থাকে, তার জন্য মনোযোগ বাড়াতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে