খাতুনগঞ্জে রমজানের প্রস্তুতি

পর্যাপ্ত আমদানি, মজুদ হচ্ছে গুদামে

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৫:৫৮ পূর্বাহ্ণ

ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে শুরু হয়েছে রমজানের প্রস্তুুতি। সাধারণত দুই/তিন মাস আগে থেকেই ব্যবসায়ীরা রমজানের পণ্য গুদামজাত শুরু করেন। তারপর অর্ডার অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠিয়ে দেন। এ বছর রমজান শুরু হতে পারে আগামী এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে। সেই হিসেবে ব্যবসায়ীদের হাতে সময় আছে দুই মাস। খাতুনগঞ্জের আমদানিকারকরা বলছেন, পণ্য বুকিং থেকে শুরু করে গুদামে আসা পর্যন্ত দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগে। অনেক সময় বন্দর থেকে পণ্য ছাড় করতেও সময়ের প্রয়োজন হয়। রমজানের বাকি আছে আর দুই মাস। এখন থেকে পণ্য গুদামজাত না করলে মার্কেট ধরা কঠিন হবে। ইতোমধ্যে প্রচুর পরিমাণ ছোলা, মটর ও মসুর ডাল আমদানি হয়েছে। এছাড়া গত বছরের অনেক পণ্য গুদামে অবিক্রিত থেকে গেছে। সব মিলিয়ে রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব পণ্যের দাম সহনশীল পর্যায়ে থাকবে। এদিকে রমজানের নিত্যপণ্যের তুলনামূলক বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত বছর এমন সময় অস্ট্রেলিয়ার ছোলার দাম ছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫৬ টাকায়। এছাড়া মসুর ডাল গত বছর বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকা, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬২ টাকা, খেসারি ডাল গত বছর ছিল ৭৫ টাকা, বর্তমানে ৬৫ টাকা, মটর ডাল গত বছর বিক্রি হয়েছে ৩৫ টাকা, বর্তমানে ৩৭ টাকা, সাদা মটর গত বছর বিক্রি হয়েছে ৩২ টাকা, বর্তমানে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মুগ ডাল গত বছর রমজানের আগে বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকা, কিন্তু বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা এবং সয়াবিন তেল প্রতি মণ (৩৭.৩২ কেজি) গত বছর বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ২০০ টাকা, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৯০০ টাকা। অন্যদিকে পাম তেল প্রতি মণ গত বছর বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৪০০ টাকা, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৫০০ টাকা, পেঁয়াজ গত বছর এমন সময়ে বিক্রি হয়েছে ২৩ টাকা, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩২ টাকা, রসূন গত বছর ছিল ৬২ টাকা, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা, চীনা আদা গত বছর ছিল ২০০ টাকা, বর্তমানে ৮০ টাকা এবং দেশী আদা গতবছর বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। অপরদিকে চিড়া গত বছর বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৪০০ টাকা, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকায়। এছাড়া খেঁজুর গত বছর বিক্রি হয়েছে এক হাজার টাকায়, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকায়। বাজারের তুলনামূলক চিত্রে দেখা যাচ্ছে- ভোজ্যতেলের বাজার গত বছরের চেয়ে বেশি অস্থির। এছাড়া ডাল এবং চিনির বাজারও চাঙা।
খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা জানান, রমজানকে কেন্দ্র করে ভোগ্যপণ্যের আমদানি আগের চেয়ে বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের দোকান ও গুদামে প্রচুর পরিমাণ পণ্য মজুদ রয়েছে। সাধারণত রমজান এলে শরবতের চাহিদা বেড়ে যায়। তাই চিনির ব্যবহারও বাড়ে কয়েক গুণ। বর্তমানে বাজারে চিনির কোনো ঘাটতি নেই। এছাড়া সারা দেশে প্রায় ৮০ হাজার টন ছোলার চাহিদা থাকে। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রচুর পরিমাণে ছোলা এসেছে। এছাড়া এর বাইরে রমজানে সাদা মটর ও মসুর ডালেরও চাহিদা বেড়ে যায়। ভোজ্যতেল, চিড়া এবং খেজুরের চাহিদাও বৃদ্ধি পায়। সাধারণত খেজুর আমদানি হয় ইরান, তিউনিসিয়া, দুবাই ও সৌদি আরব থেকে। তবে খেঁজুরের দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই।
খাতুনগঞ্জের ভোগ্যপণ্যের আমদানিকারক এবং বিএসএম গ্রুপের কর্ণধার আবুল বশর চৌধুরী বলেন, রজমানকে কেন্দ্র প্রত্যেক আমদানিকারকের একটা প্রস্তুতি থাকে। বাজারের অবস্থা মতে, কেউই কম আমদানি করার কথা না। আমার পণ্য আসার পথে রয়েছে। খুব শিগগিরই চলে আসবে। দামের ক্ষেত্রে আমি এটুকু বলতে পারি-এ বছর ছোলার দাম গত বছরের চেয়ে কম থাকতে পারে।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, গত তিন চার মাস আগে থেকে রমজানের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির জন্য এলসি (ঋণপত্র) খুলেন ব্যবসায়ীরা। ইতোমধ্যে সেইসব পণ্য গুদামজাত হচ্ছে। আমাদের দেশে প্রতি বছর ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বাড়ছে। আবার তার সাথে পাল্লা দিয়ে আমদানির পরিমাণও বাড়ছে। বাজারে রমজানের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিশেষ করে ছোলা, মটর ডাল, মশুর ডাল, খেসারি ডাল এবং চিনির কোনো ঘাটতি নেই। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে অনেক পণ্য খালাসের অপেক্ষায় আছে। তাই বলা যায়, এবার রমজানের পণ্যে দাম বাড়বে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটিকাদানে প্রস্তুত চট্টগ্রাম
পরবর্তী নিবন্ধপ্রতিবেশীর ঘরে যুবকের লাশ, মহিলা আটক