খাগড়াছড়ি জেলা শহরে চতুর্থ দিনের মতো ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। তবে জনজীবন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার শহরকেন্দ্রিক ও গুইমারার রামেসু বাজার ছাড়া পুরো জেলায় জনজীবন স্বাভাবিক রয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম সড়কে যানবাহনের চলাচলের সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে। দোকানপাট খুলছে। নিরাপত্তার অংশ হিসেবে শহরে বিভিন্ন পয়েন্টে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। সন্দেহভাজন মনে হলে জিজ্ঞাসাবাদ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পৌর শহরের ভেতরে কিছু ব্যাটারিচালিত টমটম যানবাহন চলছে।
গুইমারায় সহিংসতার ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। আর চার দিন পর খাগড়াছড়িতে চলমান অবরোধ স্থগিত করেছে জুম্ম ছাত্র–জনতা। গতকাল রাত ১১টা থেকে আগামী ৫ অক্টোবর পর্যন্ত অবরোধ স্থগিত থাকবে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে গুইমারায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার। তিনি বলেন, যারা নিহত ও আহত হয়েছে আমরা তাদের পাশে থাকব। তাদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। তাদের পুনর্বাসন করার উদ্যোগ নেয়া হবে। যারা চিকিৎসাধীন রয়েছে আমরা তাদের চিকিৎসার দায়িত্ব নিব। আজকে আমরা এখানে এসেছি যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের সমবেদনা জানানোর জন্য।
জেলা প্রশাসক বলেন, অবরোধকারীদের সাথে আমাদের বৈঠক হয়েছে। তাদের যে ৮ দফা রয়েছে তার মধ্যে আমরা ৭টা অ্যাড্রেস করেছি। আমরা চাই আলোচনার টেবিলে বিষয়টির সমাধান হোক। তারা যে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহারের কথা বলেছে সেটি ছাড়া সব দাবির সাথে আমরা মোটামুটি একমত। আমরা বলেছি অবরোধ তুলে নিলে প্রশাসন ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করে নেবে।
এ সময় ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেন জেলা প্রশাসক। ক্ষতিগ্রস্তরা তাদের বিভিন্ন অভিযোগ প্রশাসনের কাছে তুলে ধরেন। জেলা প্রশাসকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্র্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত দোকান ও ঘরবাড়ি পরিদর্শন করেন।
এ সময় পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল বলেন, গুইমারায় সহিংসতায় যারা হতাহত হয়েছেন তাদের পরিবারকে মামলা করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তারা না করলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে। পরিদর্শনের সময় খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেফালিকা ত্রিপুরাও উপস্থিত ছিলেন।
খাগড়াছড়ির সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল সকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি রিজিয়নের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান মাহমুদ। তিনি বলেন, ধর্ষণের ইস্যুকে কেন্দ্র করে আন্দোলনের নামে যে সহিংসতা করা হয়েছে তা বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ। পরিস্থিতি উন্নত না হওয়া পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি থাকা প্রয়োজন মনে করছি। প্রশাসন যখন মনে করবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে তখন ১৪৪ ধারা তুলে নেবে। দুর্গোৎসব যাতে সবাই ঠিকভাবে পালন করতে পারে সেটার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছি। সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে, যাতে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে।
অবরোধ স্থগিত : খাগড়াছড়িতে চলমান অবরোধ স্থগিত করেছে জুম্ম ছাত্র–জনতা। গতকাল রাত ৯টায় তাদের ফেইসবুক পেইজে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শারদীয় দুর্গোৎসবকে সম্মান জানিয়ে এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপস্থাপিত ৮ দফা বাস্তবায়নের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে চলমান অবরোধ কর্মসূচি আজ (গতকাল) রাত ১১টা থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করা হলো।
এতে বলা হয়, গত ২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে এক স্কুলপড়ুয়া জুম্ম কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করি। এরই ধারাবাহিকতায় ২৭ সেপ্টেম্বর এবং ২৮ সেপ্টেম্বর শান্তিপূর্ণ অবরোধ চলাকালে গুইমারার রামেসু বাজার এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সোমবার খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভায় আমাদের ছয়জনের একটি প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করে। প্রতিনিধিদল প্রশাসনের নিকট ৮ দফা দাবি উপস্থাপন করে, যা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পূরণের আশ্বাস দেওয়া হয়। পাশাপাশি প্রশাসন জানিয়েছে, চলমান অবরোধ প্রত্যাহার করা হলে ১৪৪ ধারাও তুলে নেওয়া হবে। এছাড়া গুইমারায় সংঘটিত ঘটনা তদন্তের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে অবহিত হয়েছি। আলোচনার প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার দুপুরে গুইমারায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেফালিকা ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার, খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল, গুইমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আইরিন আক্তার ও গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনামুল হক চৌধুরী।
প্রশাসনের আশ্বাস ও উদ্যোগের প্রতি আস্থা রেখে এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দুর্গোৎসবকে সম্মান জানিয়ে আমরা ঘোষণা করছি যে, আজ (গতকাল) রাত ১১টা থেকে ৫ অক্টোবর অথবা পরবর্তী কোনো ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত চলমান অবরোধ স্থগিত করা হলো।