খাগড়াছড়িতে তিন ছাত্রাবাস চালু হয়নি এক যুগেও

জনবল সংকট, সরকারের গচ্চা ৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ৪ জুলাই, ২০২৩ at ৬:২৪ পূর্বাহ্ণ

খাগড়াছড়ির সবচেয়ে দুর্গম উপজেলা লক্ষীছড়ি। জেলা সদর থেকে ৬২ কিলোমিটার দূরে দুর্গম এলাকার প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য ছাত্রাবাস নির্মাণ করে সরকার। ২০১১ সালে দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার সুবিধার্থে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি দ্বিতীয় পর্যায়ের (পিডিইপি) আওতায় ছাত্রাবাসটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। তবে এখনো তা চালু হয়নি বলে জানান লক্ষীছড়ি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিজয় কুমার চাকমা।

তিনি জানান, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২শ ৯৬ জন। এদের অনেকেই দুর্গম এলাকার বাসিন্দা। ছাত্রাবাসে ৪০ জন ছাত্র ও ৪০ জন ছাত্রী থাকার মতো প্রয়োজনীয় অবকাঠামো রয়েছে। তবে এটি এখনো চালু হয়নি। ২০১৮ সালে বন্যায় ছাত্রাবাসের রান্নাঘর ও সীমানাপ্রাচীর নষ্ট হয়ে গেছে। তা এখনো মেরামত করা হয়নি। এটি মেরামত শেষে চালু হলে দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমবে। বর্ষাকালে অনেক শিক্ষার্থী দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে পড়তে আসে। তাদের সেই ভোগান্তিও দূর হবে। তবে জনবল সংকটের কারণে ছাত্রাবাসটি এখনো চালু করতে পারিনি।

একই প্রকল্পের আওতায় পানছড়ি ও মানিকছড়িতে ছাত্রাবাস নির্মিত হলেও তা চালু করতে পারেনি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। তিন ছাত্রাবাস নির্মাণে সরকারের ব্যয় হয়েছে ৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা। প্রতিটি ছাত্রাবাসে ৮০জন শিক্ষার্থীর জন্য চেয়ার, টেবিল, খাটসহ প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র রয়েছে। ছাত্রাবাসে বিদ্যুৎ সংযোগের পাশাপাশি সৌর প্যানেলও স্থাপন করা হয়েছে। অবকাঠামোগত আয়োজন থাকলেও জনবল না থাকায় তা চালু করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

ছাত্রাবাস চালু না হওয়ায় দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীদের ভর্তির হার কমে আসছে বলে জানিয়েছেন পানছড়ি বাজার মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিপাশা সরকার। তিনি বলেন, ছাত্রাবাসটি চালু হলে ভালোই হত। অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেত। আবাসিক সুবিধা থাকলে দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত হত। বিদ্যালয়ে অধ্যায়নত দুর্গম এলাকা থেকে আসা অন্তত ২৫ জন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ের আশপাশে বাসা ভাড়া নিয়ে পড়াশোনা করছে। ছাত্রাবাস চালু না হওয়ায় অনেক খাট, পড়ার টেবিলসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া গতবছরের ছাত্রাবাসের সীমানা প্রাচীরও ভেঙে গেছে।

মানিকছড়ির রাজবাড়ি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ক্যজ মারমা জানান, ছাত্রাবাসের চৌকি, টেবিল, চেয়ার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে । তবে সীমানা প্রাচীরসহ মূল স্থাপনা ঠিক আছে। ছাত্রাবাসের সোলার প্যানেল ঠিক থাকলেও ব্যাটারি নষ্ট হয়ে গেছে। কয়েকদিন আগে উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে ছাত্রাবাসের বর্তমান অবস্থা জানতে চেয়েছে। আমি তা লিখিতভাবে জানিয়েছি। ছাত্রাবাসে জনবল নিয়োগ করলে তা চালু হলে দুর্গম এলাকা থেকে শিক্ষার্থী ভর্তির হার বাড়বে।

ছাত্রাবাস পরিচালনার জন্য জনবলও নিয়োগ না হওয়ায় এই সংকট তৈরি হয়েছে। ছাত্রাবাসের বিভিন্ন সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে গেছে। ভেঙে গেছে ভবনে রাখা চেয়ার টেবিল। অনেক রুম ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে। পরিত্যক্ত থাকায় ভবনের রঙ বিবর্ণ হয়ে গেছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ছাত্রাবাসের ছাদে লাগানো লক্ষ টাকার সোলার প্যানেল। ছাত্রাবাসের শৌচাগার পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। বৈদ্যুতিক সু্‌ইচও নষ্ট। চালু না হলেও লক্ষীছড়ি ও পানছড়ির দুই ছাত্রাবাসের সংস্কারে নতুন করে ১ কোটি ৬৭ লাখ টাকার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বরাদ্দ না পাওয়ায় ছাত্রাবাসগুলো চালু করা যাচ্ছে না। এই নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়েও পার্বত্য জেলা পরিষদের মাধ্যমে চিঠি দেওয়া হলেও এই বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে এই বিষয়ে কিছুই জানেন না সহকারি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকতা মোসাদ্দেক হোসেন। বর্তমানে তিনি ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ইতোমধ্যে নির্মিত ছাত্রাবাসগুলো কেন চালু হচ্ছে তা দেখতে আসেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম। পার্বত্য চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষা জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ছাত্রাবাসগুলো দ্রুত চালু করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি প্রেরণ করেছে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ।

জেলা পরিষদের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) টিটন খীসা জানান, ছাত্রাবাসগুলো চালু করার জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি এবার সমস্যার সমাধান হবে। ছাত্রাবাস চালু হলে সুবিধা পাবে প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষার্থীরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঝালকাঠির সেই তেলবাহী জাহাজে আবার বিস্ফোরণ-আগুন, আহত ১৪
পরবর্তী নিবন্ধমূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে জুনে ৯.৭৪%