ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে টানা বর্ষণে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে খাগড়াছড়ির দীঘিনালার মেরুং ইউনিয়নের ২০ গ্রামের এক হাজারের বেশি পরিবার প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া খাগড়াছড়ি জেলা সদরের অন্তত পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। টানা বর্ষণের কারণে চোঙ্গী ও মাইনী নদীর পানি বেড়ে বন্যর সৃষ্টি হয়। দীঘিনালা–লংগদু সড়কের হেড কোয়ার্টার এলাকায় সড়ক ডুবে যাওয়ায় রাঙামাটির লংগদুর সাথে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ডুবে গেছে মেরুং বাজার।
অন্যদিকে ভারী বর্ষণে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ৭টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন উপজেলার প্রায় ১৫–২০ হাজার মানুষ। উপজেলার বাঘাইহাট এলাকায় ঢলের পানিতে সড়ক ডুবে সাজেকের সঙ্গে খাগড়াছড়ির সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে সাজেকে অবস্থান করা অন্তত ১২০ জন পর্যটক তাদের গন্তব্যে ফিরে যেতে পারেননি।
মেরং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদা বেগম লাকির বরাত দিয়ে আমাদের খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, সোমবার মধ্যরাত থেকে পানি বাড়তে শুরু করে। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত পানি কমে নাই। বরং উজানে পানি নেমে আসায় বন্যার পানি বাড়ছে। ইতোমধ্যে ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানি প্রতিমুর্হূতে বাড়ছে। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে নতুন করে প্লাবিত এলাকার সংখ্যা আরো বাড়বে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মানুষ আসতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে আর এ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৫০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। তাদের খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে।
এদিকে ভোর ৬টার দিকে খাগড়াছড়ি–ঢাকা মহাসড়কের আলুটিলা এলাকায় পাহাড় ধসে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারা দেশের সাথে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। পরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা গিয়ে সড়ক থেকে মাটি সরানোর কাজ করে। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। এছাড়া খাগড়াছড়ির দীঘিনালা–মারিশ্যা সড়কের একাধিক স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে বাঘাইছড়ির সাথে সারাদেশের যান চলাচল বন্ধ আছে।
খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, তিন ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর আলুটিলা সড়কে যান চলাচল শুরু হয়েছে। এছাড়া দীঘিনালা–মারিশ্যা সড়কের মাটি সরানোর কাজ চলছে। ছোট যান চলাচল করতে পারছে। মাটি সরানোর কাজ শেষ হলে যাত্রী বাস ও ট্রাক চলাচল করতে পারবে।
উপজেলা প্রশাসনের বরাত দিয়ে আমাদের রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, টানা ও অতিভারী বর্ষণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কাচালং নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় উপজেলা পৌরসভার তিনটি ওয়ার্ড মাস্টার পাড়া, মধ্যমপাড়া ও লাইল্ল্যাঘোনা এবং চারটি ইউনিয়নের মধ্যে সাজেক ইউনিয়নের বাঘাইহাট ও মাচালং, মারিশ্যা ইউনিয়নের বারোবিন্দুঘাট ও বঙ্গলতলী ইউনিয়নের করোঙ্গতলী গ্রামসহ মোট সাতটি গ্রামে প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। এছাড়া মারিশ্যা–বাঘাইহাট সড়কে মঙ্গলবার সকালে বেশ কিছু জায়গায় সড়কে ছোট বড় পাহাড় ধস ও গাছ পড়ে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকলেও বিকালে সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক করা হয়েছে।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরীণ আক্তার জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বাঘাইছড়ি উপজেলায় তিনটি পৌর ওর্য়াড ও তিনটি ইউনিয়নের চারটি গ্রামসহ মোট ৭ গ্রামে প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার মাইকিং করা হচ্ছে আশ্রয়কেন্দ্রে আসার জন্য। কিন্তু লোকজন নিজেদের ঘরবাড়ি ছাড়তে রাজি হচ্ছে না। সকালে মারিশ্যার সঙ্গে বাঘাইহাট সড়কের কয়েকটিস্থানে গাছ পড়ে এবং ছোট বড় পাহাড় ধসে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকলেও বিকেলে সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক করা হয়েছে।
সাজেক কটেজ মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক রাহুল চাকমা জন জানিয়েছেন, বাঘাইহাট এলাকায় সড়কে পানি উঠে দুপাশের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। অনেকেই নৌকা দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন। আগামীকাল (বুধবার) পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সাজেক ভ্যালিতে আটকা পড়া আনুমানিক ১২০ জন পর্যটক নিরাপদে ফিরতে পারবেন।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) রাঙামাটি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা জানান, ভারী বর্ষণে রাঙামাটি–মহালছড়ি সড়কের বেতছড়ি এলাকায় সড়কের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেটা মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া আর বড় ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে, টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে বাঘাইছড়ির কাচালং নদী, বরকলের কর্ণফুলী নদী, জুরাছড়ির শিজক নদ ও বিলাইছড়ির রীংক্ষ্যং নদের পানি বাড়ছে।