খাগড়াছড়িতে তুলা চাষে ঝুঁকছেন অনেকেই

এবার ৩৬ হাজার মণ উৎপাদনের লক্ষ্য

সমির মল্লিক, খাগড়াছড়ি | মঙ্গলবার , ১৮ মার্চ, ২০২৫ at ৪:৫০ পূর্বাহ্ণ

মাহিল ইসলাম খাগড়াছড়ির দীঘিনালা সুপারি বাগান এলাকার তুলা চাষি। জমিতে অন্যান্য সবজি আবাদের পাশাপাশি চাষ করেছেন তুলা। প্রায় ৮০ শতক জমিতে তুলার বাম্পার ফলনে তার মুখে এখন হাসির ঝিলিক। প্রায় ৭ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি তুলা চাষ করছেন। সরেজমিনে মাহিলের তুলা ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে তুলা। ফল ফেটে বেরিয়ে আসছে তুলা। পুরো ক্ষেত ছেয়ে গেছে তুলার সাদা রঙে।

মাহিল জানান, অন্যান্য ফসল এমনকি ধানের চেয়েও তুলার চাষ লাভজনক। ইতোমধ্যে দুই কানি (৮০ শতক) জমি থেকে ২৬ মণ তুলা মাড়াই করেছি। এখনো ক্ষেতে ৮ মণের মতো তুলা রয়েছে। তিনি বলেন, আমি শুরুতে এক কানি জমিতে তুলার চাষ শুরু করেছি। সেসময় ১৩ মণ তুলা পেয়েছি। পরের বছর তুলা পেয়েছি ২৬ মণ। জমির লাগিয়ত (ভাড়া) এবং শ্রমিকের মজুরী বাবদ ৭০ হাজার টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। প্রতিমণ তুলা ৪ হাজার টাকা ধরে বিক্রি করে এবার অন্তত ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা আয় হতে পারে। আমি মনে করি ধানের চেয়ে তুলা চাষে খরচ কম। ধানে রোগ বালাই বেশি, ওষুুধ দিতে পারি না। তবে তুলায় পোকামাকড়ের আক্রমণ হলে তুলা উন্নয়ন বোর্ড থেকে বিনামূল্যে কীটনাশক পাওয়া যায়।

মাহিলের মতো খাগড়াছড়িতে এবার কয়েকশ কৃষক তুলা চাষে সম্পৃক্ত হয়েছেন। পুরো জেলায় ৩০০ হেক্টর জমিতে তুলার আবাদ হয়েছে। দীঘিনালার মতো খাগড়াছড়ি জেলা সদর, মাটিরাঙা, পানছড়ি, মানিকছড়িসহ বিভিন্ন উপজেলায় তুলার আবাদ হয়েছে। পানছড়ি উপজেলায় তুলা উন্নয়ন বোর্ডের ৪০টি প্রদর্শনী প্লটের পাশাপাশি ১০ জন কৃষক ব্যক্তি উদ্যোগেও তুলার চাষ করেছেন।

জানা যায়, বৃটিশ আমলে পাহাড়ে প্রচুর তুলা চাষ ও রপ্তানি হত বলে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানের পাহাড়ি অঞ্চলকে বলা হত কার্পাস মহল। এমনকি ঐ সময়ে পাহাড়ের প্রজারা বৃটিশদের উৎপাদিত তুলা দিয়ে খাজনা পরিশোধ করত। পাহাড়ের উৎপাদিত তুলা পাহাড়ি নদী হয়ে কুমিল্লা বন্দর দিয়ে বিদেশে (ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কোম্পনি) রপ্তানি হত বলে এ তুলা কুমিল্লা তুলা নামে পরিচিত। অথচ কুমিল্লার কোথাও তুলা উৎপাদন হত না। পাহাড়ের বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বাসিন্দারা পাহাড়ের ঢালু অংশে জুমের ফসলের সাথে তুলা উৎপাদন করত এবং তুলা থেকে সুতা তৈরি করে বস্ত্র বুনন করে পরিধান করত। ফলে নিজেদের প্রয়োজনে পাহাড়ে তুলার ঊৎপাদন বাড়িয়েছে পাহাড়িরা। পঞ্চাশের দশকে পার্বত্য এলাকায় ২৩ হাজার অধিক হেক্টরে জমিতে হাজার হাজার বেল তুলা উৎপাদিত হত। তবে পাহাড়ের তুলা উৎপাদনের বড় আঘাত আসে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের কারণে। ৬০ এর দশকে কৃত্রিম উপায়ে কাপ্তাই লেক সৃষ্টির পর তুলা চাষের উপযোগী অনেক জমি পানিতে তলিয়ে যায়। পরবর্তীতে তুলা চাষের জমির পরিমাণ আরো কমে যায়। মূলত সরকারি প্রণোদনার অভাব এবং জুম চাষে তুলা উৎপাদনের পরিমাণ কমে যায়।

বাংলাদেশ তুলা উন্নয়ন বোর্ড পাহাড়ের সমতল ভূমিতে তুলা উৎপাদনে পুনরায় কাজ শুরু করেছে। তুলা উৎপাদনে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করছে সংস্থাটি। উন্নত জাতের তুলা উৎপাদনে সার্বিক সহায়তা করছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড।

খাগড়াছড়ি তুলা উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, রোপণের ৬ থেকে ৭ মাসের মধ্যে ফলন পাওয়া যাবে। জুনজুলাই মাসে তুলা রোপণের উত্তম সময়। জানুয়ারিফেব্রুয়ারি মাসে তুলার মাড়াইকরণ শুরু হয়। প্রতিটি গাছের উচ্চতা ৪ থেকে ৬ ফুট পর্যন্ত হয়। চলতি বছরে জেলায় ৩৬ হাজার মণ তুলা উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।

খাগড়াছড়ি তুলা উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. মোজাফফর হোসেন বলেন, এক কেজি তুলা উৎপাদন হলে আমাদের সাশ্রয় হয় ৩ ডলার। একমণ তুলা উৎপাদন হলে ৫০০ লোকের কর্মসংস্থান হয়। আমাদের এখানে তুলা উৎপাদনের চেয়ে বাজারজাত করা কঠিন। বিপণনের সংকট দূর হলে পাহাড়ে তুলা উৎপাদন আরো বাড়বে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাঙ্গুনিয়ায় সাজাপ্রাপ্ত মাদক কারবারি গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধরামুতে বাস-ট্যাক্সির সংঘর্ষে যুবক নিহত