অফিস থেকে বেরুতেই সন্ধ্যা পার। বাইরে দেখি থেমে থেমে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি! আসার পথে দুটো বেশ বড় মাছ, কিছু ছোট মাছ আর কিছু সব্জি কিনে কিছুটা আধভেজা হয়ে বাসায় ফিরতে ফিরতেই রাত। বাসার দরজায় কলিং বেল টিপতেই দরজা খুলে যথারীতি আমাকে থলেসহ স্প্রে করা হলো। এরপর ঝটপট সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে গরম পানি দিয়ে গোসল। গোসল সেরে এশার নামাজ পড়ে সধংধষধ ঃবধ নিয়ে আমার রুমের লাগোয়া ব্যালকনির খান্দানী চেয়ারে বসলাম। আর বসে বসে ভাবতে লাগলাম সারাদিনের ক্লান্তি শেষে মানুষের আপন একটা ঠিকানার খুব প্রয়োজন, যেখানে নিরাপদে, নির্ভাবনায়, স্বস্তিতে থাকা যায়। এজন্য আল্লাহর কাছে আমার হাজার শোকরিয়া। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ চোখ পড়লো মাথার উপর দেয়ালের একপাশে আমার বেডরুমের এসির পাইপ লাইনের উপর গুটিশুটি মেরে বসে আছে ইদানীং আমার ব্যালকনিতে আশ্রয় নেয়া সেই তিনটি দোয়েল পাখির দিকে। এরা এখন আমার অতিথি। প্রতিদিন সন্ধ্যায় একই সময়ে এরা আসে আর ভোরে চলে যায়। রাতে ওদের দিকে হাত বাড়ালেও চলে যায়না,ভয় পায় কিনা জানিনা। ভাবি ভয় পেলেও রাতে এরা কোথায় যাবে,তাই ওদেরকে আমি বিরক্ত করিনা। আমিও চাই ওরা যতদিন ইচ্ছে আমার এখানে থাকুক। তাই মনে হয় ওরা আপাতত এ আশ্রয় টাকেই নিরাপদ মনে করছে। মনে মনে ভাবি সারাজীবন পরের চিলেকোঠায় এদের আশ্রয় খুঁজতে হয়।সারারাত একটা টু শব্দ করেনা। এদের জন্য খুব মায়া হয় আমার। অথচ ছোটবেলায় আমার দুষ্টুমিতে সব কাকপক্ষী অস্থির হয়ে যেতো। না বুঝে তখন সেসব দুষ্টুমি করেছিলাম। আল্লাহ তুমি মাফ করো। এখন সন্ধ্যায় ওরা যেন নির্ভয়ে ফিরে আসে তাই ব্যালকনির পর্দাটা টেনে দিয়ে জায়গাটা অন্ধকার করে রাখি। ওরাও প্রতিদিন সারাদিনের ক্লান্তিশেষে কখনও রোদে পুড়ে কখনওবা বৃষ্টিতে আধভেজা হয়ে যথাসময়ে চলে আসে… ক্ষণস্থায়ী এই আপন ঠিকানায়! পৃথিবীটাও তেমনি আমাদের ক্ষণস্থায়ী ঠিকানা।