ক্রমান্বয়ে বাড়ছে রপ্তানি

এলসি খোলা নিয়ে সংকট, কমেছে আমদানি পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতির আশা

হাসান আকবর | মঙ্গলবার , ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৫:১৩ পূর্বাহ্ণ

দেশে আমদানি কমলেও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে রপ্তানি। ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধসহ বৈশ্বিক সংকটে দেশে এলসি খোলা নিয়ে বিদ্যমান সংকটে আমদানি কমছে। তবে রপ্তানি ক্রমান্বয়ে বাড়ায় দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে সূত্র বলেছে, বিদ্যমান সংকট কেটে গেলে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য পুরোপুরি গতিশীল হয়ে উঠতো। তবে ঠিক কবে নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তা এখনো অনিশ্চিত বলেও সূত্র মন্তব্য করেছে।

সূত্র জানিয়েছে, দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের প্রবেশদ্বার চট্টগ্রাম বন্দরে গত বছর ৩১ লাখ টিইইউএস এর মতো কন্টেনার হ্যন্ডলিং করে। এর আগের বছর কন্টেনার হ্যান্ডলিং এর পরিমান ছিল ৩২ লাখ ১৪ হাজার টিইইউএস। ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধসহ বৈশ্বিক সংকটের কারণে ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে কন্টেনার হ্যান্ডলিং ১ লাখেরও বেশি কমে গেলেও চট্টগ্রাম বন্দর থ্রি মিলিয়ন’স ক্লাবের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু ২০২৩ সালে এসে পরিস্থিতি অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় ভয়াবহ আকার ধারণ করার আশংকা দেখা দেয়। ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধসহ বৈশ্বিক সংকটে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে মারাত্মক ধস নামে। চলতি বছরের শুরুতে পরিস্থিতি এতো নাজুক হয়ে উঠেছিল যে চট্টগ্রাম বন্দর থ্রি মিলিয়নস ক্লাব থেকে ছিটকে পড়ার শংকা প্রকাশ করা হয়েছিল। আমদানি রপ্তানি কমে যাওয়ায় বাড়ছিল এমটি কন্টেনারের সংখ্যা। অবশ্য জানুয়ারি এবং মার্চের পরে পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টাতে শুরু করে। স্বাভাবিক সময়ের মতো গতিশীল না হলে দেশে আমদানি রপ্তানি কিছুটা বাড়তে শুরু করেছে। তবে এখনো প্রচুর খালি কন্টেনার আনা নেয়া করা হচ্ছে।

ইউক্রেনরাশিয়া যুদ্ধসহ বৈশ্বিক সংকটে আমদানিরপ্তানি বাণিজ্যে সৃষ্ট নেতিবাচক প্রভাবে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেনার হ্যান্ডলিং কমে গেছে বলে উল্লেখ করে সূত্র বলেছে, চলতি বছরের জুলাই মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৫৯ হাজার ৫৯২ টিইইউএস কন্টেনার রপ্তানি পণ্য হ্যান্ডলিং হয়েছে। একই সময়ে আমদানি পণ্য বোঝাই ১ লাখ ১৩ হাজার ৩৮৫ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। ওই সময়ে খালি কন্টেনার পাঠাতে হয়েছে ৫৯ হাজার ৩৮৫টিইইউএস।

জুলাই মাসের তুলনায় আগস্ট মাসে পণ্য রপ্তানি বেড়েছে। আগস্ট মাসে ৬৫ হাজার ৪৬১ টিইইউএস কন্টেনার পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যা আগের মাসের তুলনায় ৫ হাজার ৮৬৯ টিইইউএস বেশি। একই সময়ে আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৭৫ টিইইউএস। যা আগের মাসের চেয়ে ৮ হাজার ৩১০ টিইইউএস কম। আবার বিদেশে খালি কন্টেনার পাঠানোর পরিমানও একমাসের ব্যবধানে এসে কমেছে। আগস্ট মাসে আগের মাসের তুলনায় ১১ হাজার ৮৭৩ টিইইউএস কম খালি কন্টেনার পাঠানো হয়েছে। যা রপ্তানি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক ইন্ডিকেশন বলেও সূত্র মন্তব্য করেছে।

সূত্র বলেছে, বৈশ্বিক সংকটে বিদেশে তৈরি পোশাকের ব্যবহার কমে যাওয়ায় রপ্তানিতে সংকট দেখা দিয়েছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলেও কিছু্‌টা উন্নতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। জুলাই মাসের তুলনায় আগস্ট মাসে রপ্তানির পরিমান বৃদ্ধি কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে বলেও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তবে বিভিন্ন ব্যাংকে এলসি খোলার ব্যাপারে কড়াকড়ির ফলে আমদানি বাণিজ্যে স্বাভাবিক প্রবাহ নেই। ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো এখনো এলসি খোলার ব্যাপারে প্রচুর কড়াকড়ি করছে। আমদানি বাণিজ্যের প্রায় পুরোটাই জুড়ে বিরাজ করছে ভোগ্যপণ্যসহ অতি প্রয়োজনীয় পণ্য। এটি স্বাভাবিক নয় বলে মন্তব্য করে সূত্র বলেছে, আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের স্বাভাবিক প্রবাহের উপরই দেশের সার্বিক অর্থনীতি নির্ভর করে। বিদ্যমান সংকট বহুমুখী সংকটের সৃষ্টি করছে বলেও সূত্রগুলো মন্তব্য করেছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। কবে নাগাদ স্বাভাবিক হয়ে উঠবে তাও নিশ্চিত নয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅপহরণের ৭২ ঘণ্টা পর ডাকাতের আস্তানা থেকে ৩ বনকর্মী উদ্ধার
পরবর্তী নিবন্ধ৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ