ক্যান্সার প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় গবেষণার বিকল্প নেই

| মঙ্গলবার , ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৭:০২ পূর্বাহ্ণ

দেশে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ১০৬ জনের ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার তথ্য উঠে এসেছে এক গবেষণায়। এতে বলা হচ্ছে, বছরে প্রতি লাখে নতুন করে ক্যান্সার আক্রান্ত হচ্ছেন ৫৩ জন, আর মোট মৃত্যুর ১২ শতাংশের জন্য দায়ী এই রোগ। গত ২ ফেব্রুয়ারি দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, গত শনিবার বিএসএমএমইউর সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে ‘বাংলাদেশে ক্যান্সারের বোঝা : জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি’ শীর্ষক এক গবেষণার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। দেশে ৩৮ ধরনের ক্যান্সারে মানুষ আক্রান্ত হয় জানিয়ে গবেষণায় বলা হয়, এর মধ্যে স্তন, মুখ, পাকস্থলী, শ্বাসনালী ও জরায়ুমুখ ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা বেশি। প্রধান গবেষক বিএসএমএমইউর পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খালেকুজ্জামান বলেন, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলায় ২০২৩ সালের জুলাই মাস থেকে এ গবেষণাটি পরিচালিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৪৬ হাজার ৬৩১টি পরিবারের দুই লক্ষাধিক অংশগ্রহণকারীকে এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪৮ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ এবং ৫১ দশমিক ৬ শতাংশ নারী। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মোট ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা ২১৪ জন। ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাব বিবেচনায় প্রতি লাখে আক্রান্তের সংখ্যা ১০৬ জন (পুরুষের ক্ষেত্রে প্রতি লাখে ১১৮ জন এবং নারীর ক্ষেত্রে প্রতি লাখে ৯৬ জন)। ক্যান্সার রোগীদের ৯২ দশমিক ৫ শতাংশ ১৮ থেকে ৭৫ বছর বয়সী। ১৮ বছরের কম বয়সী ক্যান্সার রোগী আছেন ২ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ৭৫ বছরের বেশি বয়সী ক্যান্সার রোগী আছেন ৫ দশমিক ১ শতাংশ। গবেষণায় দেখা গেছে, আক্রান্তদের মধ্যে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশই স্তন ক্যান্সার রোগী। ঠোঁট ও মুখগহ্বর ক্যান্সার আক্রান্তের হার ৮ দশমিক ৪ শতাংশ, পাকস্থলী ক্যান্সার আক্রান্তের হার ৭ শতাংশ, স্বরযন্ত্র ক্যান্সার আক্রান্তের হার ৭ শতাংশ এবং জরায়ুমুখ আক্রান্তের হার ৫ দশমিক ১ শতাংশ। ফুসফুস, শ্বাসনালী ও পাকস্থলীর ক্যান্সারে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, ‘দেশের ক্যান্সার রোগীর তুলনায় চিকিৎসার আয়োজন অনেক সীমিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, প্রতি ১০ লাখ মানুষের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার কেন্দ্র বা হাসপাতাল থাকা প্রয়োজন। এসব কেন্দ্রে ক্যান্সার শনাক্তসহ ক্যান্সার চিকিৎসার তিন ধরনের (কেমোথেরাপি, সার্জারি ও বিকিরণ চিকিৎসা) পদ্ধতি থাকতে হবে। দেশে মানুষ ১৭ কোটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী ১৭০টি ক্যান্সার চিকিৎসা কেন্দ্র থাকা দরকার। সরকারি ও বেসরকারি সূত্র বলছে, দেশে ক্যান্সার কেন্দ্র আছে ৩৩টি। এর মধ্যে বিকিরণ যন্ত্র আছে ১৯টিতে। ক্যান্সার চিকিৎসকদের একটি সংগঠন জানিয়েছে, ক্যানসারের চিকিৎসায় দেশে কমপক্ষে ২২০টি বিকিরণ যন্ত্র দরকার। সরকারিবেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে আছে ৫৭টি যন্ত্র। এর মধ্যে চালু আছে ৪৩টি। বেসরকারি হাসপাতালগুলো এখন বেশি মানুষকে বিকিরণ চিকিৎসা দিচ্ছে।’ বলা যায়, ক্যান্সার রোগের চিকিৎসা সেবা অত্যন্ত সীমিত।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ক্যান্সার গবেষণা এজেন্সি বলছে, উন্নত দেশগুলোতে আক্রান্তদের সংখ্যা দেখা যায় বেশি। যেমন মানব উন্নয়ন সূচকে (এইচডিআই) এগিয়ে থাকা দেশগুলোতে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জীবনযাত্রার মান উন্নত। আগামীতে সেখানে ১২ নারীর মধ্যে ক্যান্সার শনাক্ত হবে একজনের। আর মারা যাবেন ৭১ জনের মধ্যে একজন। অপরদিকে মানব উন্নয়ন সূচকে পিছিয়ে দেশগুলোতে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জীবনযাত্রার মান তেমন উন্নত নয়। সেখানে ২৭ জনে একজন নারী স্তন ক্যান্সার ধরা পড়বে এবং প্রতি ৪৮ জনে একজনের মৃত্যুর হবে। মূলত দেরিতে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার সুযোগের অভাবে এসব দেশে শনাক্তের হার কম, কিন্তু মৃত্যুর হার বেশি। ক্যান্সারে আক্রান্তদের চিকিৎসায় রেডিয়েশন বা রেডিওথেরাপি ও স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্টের মতো সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রেও বৈষম্য রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অসংক্রামক রোগ বিভাগের পরিচালক বেন্তে মিক্কেলসেন এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, বিশ্বজুড়ে ক্যান্সারে আক্রান্তদের প্রতি বৈষম্য ও আর্থিক সুরক্ষার অভাবের ওপর আলো ফেলেছে এই গবেষণা। বিশেষ করে নিম্নআয়ের দেশগুলো ক্যান্সারের প্রাথমিক সেবা ও চিকিৎসা দিতে অক্ষম।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনো ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে আমাদের দেশে পরীক্ষানিরীক্ষা ও ওষুধের দাম পার্শ্ববর্তী দেশের তুলনায় বেশি। রোগীরা উন্নত পদ্ধতিতে রোগ নির্ণয় করতে গিয়ে সিংহভাগ টাকা ব্যয় করে ফেলেন। পরে দেখা যায়, চিকিৎসার জন্য ব্যয় করার টাকা অবশিষ্ট থাকে না।

তাঁরা বলেন, নিত্যনতুন জ্ঞান তৈরিতে গবেষণার বিকল্প নেই। এই গবেষণায় যে পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে তা দেশের মানুষের ক্যান্সার প্রতিরোধ, প্রতিকার ও ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসায় বিরাট ভূমিকা রাখবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে