ক্যানসার-যোদ্ধা সম্মাননা

রীতা দত্ত | রবিবার , ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৯:০৮ পূর্বাহ্ণ

২রা ফেব্রুয়ারি সারাদিনব্যাপী নেভী কনভেনশন সেন্টার হলে একটি ব্যতিক্রমী মনোমুগ্ধকর অনুষ্ঠান হয়ে গেল। অনুষ্ঠানে আমার উপস্থিত থাকার সুযোগ হয়েছিল। এই অনুষ্ঠানটি গতানুগতিক কোন অনুষ্ঠান মাত্র নয়। এর পেছনে রয়েছে এক মানবিক ক্যান্সার রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ভাস্কর চক্রবর্ত্তী এর অনুপম ভাবনা। তিনি কেবল জীবিকার জন্য কাজ করেন না, তিনি মহৎ জীবন বোধের জন্য কাজ করেন। চিকিৎসাকে তিনি মানবসেবা বলে মনে করেন। স্বামী বিবেকানন্দের অমর উক্তি– ‘জীবে প্রেম করে যে, সে জন সেবিছে ঈশ্বর’। Service to mankind is service to God. এই বিশ্বাসে তিনি স্থিত। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন একজন মানবিকতার বাতিঘর স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদীর সম্পাদক, একুশে পদকপ্রাপ্ত জনাব এম এ মালেক। বিশেষ অতিথি ছিলেন আজাদীর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক জনাব ওয়াহিদ মালেকসহ অনেক খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব।

ডা. ভাস্কর চক্রবর্ত্তীর চিকিৎসাধীন ঢাকা চট্টগ্রামের ১০০ জন ক্যান্সার যোদ্ধা, যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ক্যান্সারকে জয় করেছেন এবং অন্যান্যরা বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন এবং আরোগ্যের পথে তাদের জন্য একটি আনন্দঘন পরিবেশে ক্রেস্ট, উত্তরীয় এবং সার্টিফিকেট প্রদান করে সম্মাননা জানানো জন্য নেভী কনভেশন হলে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। মঞ্চ থেকে মৃদুস্বরে শোনা যাচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্দিপনা মূলক সঙ্গীত “সংকটের কল্পনাতে হয়ো না ম্রিয়মান” এবং মুক্ত কর ভয়, আপনা মাঝে শক্তি ধর নিজেরে কর জয়”। পরিচয় পর্ব অনুষ্ঠানে জানা গেছে রোগীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত আছেন। অনুষ্ঠানে তাদের জন্য বিনোদন মূলক খেলাধূলারও ব্যবস্থা ছিল। এধরনের অনুষ্ঠান প্রথম বারের মতো ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বেশ কয়েক বছর আগে পড়েছিলাম শহীদ জননী জাহানারা ইমামের লেখা ‘ক্যান্সারের সাথে বসবাস’ বইটি। তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে দুরারোগ্য ক্যান্সার এর যন্ত্রণা শরীরে বহন করে তিনি সব প্রতিকূলতাকে কাটাতে পেরেছেন। আরেকজনের সাথে সাক্ষাৎ হলো মাত্র কয়েকদিন আগে । কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘সানন্দা’ পত্রিকার সম্পাদক শর্মিলা বসু ঠাকুরের সাথে। তিনি পেশাগত জীবনে একজন অধ্যাপক, সাথে বিভিন্ন সাহিত্য সংস্কৃতি কর্মকান্ডের সাথেও নিবিড় ভাবে সম্পৃক্ত। শেষে তিনি জানালেন তিনি একজন ক্যান্সার রোগী। তিনি সবসময় পজিটিভ চিন্তাভাবনার অধিকারী। ক্যান্সার রোগ তাঁর কোন কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারেনি। শুনে বিস্মিত হলাম। ডা. ভাস্কর চক্রবর্ত্তী তাঁর রোগীদের পজেটিভ দৃষ্টি ভঙ্গি নিয়ে চিকিৎসা করেন। শুধু মাত্র রোগের ব্যবস্থাপনা (prescription) লেখার কাজে করেন না, রোগীদের সাথে তাঁর ব্যবহার অত্যন্ত আন্তরিক, রোগীদের প্রয়োজনে বিভিন্নভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন যা অত্যন্ত বিরল।

ভাস্কর চক্রবর্ত্তী একজন যৌথ পরিবারের সন্তান। বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সমাজ সেবক ভানু রঞ্জন চক্রবর্ত্তী, মা স্বপ্না চক্রবর্ত্তী (সারদা সংঘ চট্টগ্রাম এ একজন অন্যতম সদস্য), জেঠামশায় বিশিষ্ট শিক্ষক, শিক্ষক সমিতির একজন কণধার শান্তি রঞ্জন চক্রবর্ত্তী। যৌথ পরিবারে বেড়ে ওঠা ভাস্কর রপ্ত করছেন সবার সাথে মিলেমিশে থাকার অভ্যাস। যা পরবর্তীতে তাঁকে অত্যন্ত মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠতে অনুপ্রাণিত করেছিল। ১৯৮৭ খ্রি. ৭ ফেব্রুয়ারি তাঁর জন্ম। শৈশব থেকেই তাঁর সেবার মনোভাব যার জন্য উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর চিকিৎসা শাস্ত্রকে বেছে নিয়েছেন তার অধ্যয়নের বিষয় হিসেবে। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৪৮ ব্যাচের ছাত্র। সেকালে একটা কথা প্রচলিত ছিল Cancer no answer. ভাস্কর স্বপ্ন দেখতেন এ আপ্ত বাক্য থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়। শুরু করলেন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ হওয়ার সাধনা। বর্তমানে তিনি একজন সফল ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ। তাঁর চিকিৎসাধীন রোগীরা সকলেই একবাক্যে তাঁর চিকিৎসা এবং সুন্দর ব্যবহারের প্রশংসা করে থাকেন। এর মধ্যে মাদার তেরেসা সম্মাননাও তিনি লাভ করেছেন। তিনি একজন ভালো সঙ্গীত শিল্পীও বটে। কামনা করি পেশাগত ক্ষেত্রে ডা. ভাস্কর চক্রবর্ত্তী দেদীপ্যমান হয়ে থাকবে।

লেখক : শিক্ষাবিদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। সাবেক অধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম সরকারি চারুকলা কলেজ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশ হতে দেশান্তরে
পরবর্তী নিবন্ধপোশাক শিল্পের অদম্য জালালউদ্দিন