কোস্টগার্ডের সক্ষমতা আরো বাড়ল : প্রধানমন্ত্রী

৯ জাহাজ ও একটি বেইজের কমিশনিং প্রদান

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৬ নভেম্বর, ২০২০ at ৯:৩৬ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের নয়টি জাহাজ এবং একটি বেইজের কমিশনিং প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোস্টগার্ডকে আরও বৃহৎ পরিসরে দায়িত্ব পালনে সক্ষম একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকা এবং সামুদ্রিক জলসীমার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা, মৎস্যসম্পদ রক্ষা, দেশের সমুদ্রবন্দরের নিরাপত্তা বিধান, চোরাচালান ও মাদকবিরোধী অভিযান, ডাকাত দমনসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপকূলীয় জনগণের জানমাল রক্ষায় কোস্টগার্ডের ভূমিকা উত্তরোত্তর বাড়ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন জাহাজ ও ঘাঁটি কমিশনিংয়ের মাধ্যমে এ বাহিনীর সক্ষমতা আজ আরো বাড়ল। তিনি আস্থা প্রকাশ করে বলেন, এসব জাহাজ ও ঘাঁটি কোস্টগার্ড সদস্যদের পেশাগত উৎকর্ষ, মানসিক বিকাশ ও উন্নত মনোবল অর্জনে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে সমর্থ হবে। তিনি ‘দেশপ্রেম, সততা ও ঈমানের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য কোস্টগার্ড সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, কোস্টগার্ডের সুনাম যেন সব সময় বজায় থাকে, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন। এই বাহিনীর ধারাবাহিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে এবং আপনাদের সার্বিক কল্যাণে প্রয়োজনীয় সকল ধরনের সহায়তা সরকার দিয়ে যাবে।’ প্রধানমন্ত্রী গতকাল রোববার সকালে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের দুটি অফশোর প্যাট্রোল ভ্যাসেল, পাঁচটি ইনশোর প্যাট্রোল ভ্যাসেল, দুটি ফাস্ট প্যাট্রোল বোট ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ড বেইস, ভোলার কমিশনিং প্রদান করেন। তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে পতেঙ্গার ১৫ নম্বর ঘাটের কোস্টগার্ড বার্থে অনুষ্ঠিত মূল অনুষ্ঠানস্থলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
জাটকা নিধন রোধ এবং মা ইলিশ রক্ষায় কোস্টগার্ডের প্রশংসনীয় ভূমিকা রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুজিব বর্ষে কোস্টগার্ডের বহরে এই নৌযানগুলো যুক্ত হওয়া সংস্থাটির জন্য একটি নতুন অধ্যায় সূচিত করেছে। কারণ, আমাদের উপকূলীয় অঞ্চল টহলে রাখাটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, বিগত প্রায় ১২ বছরে কোস্টগার্ডের জন্য বিভিন্ন আকারের ৫৫টি জাহাজ ও জলযান নির্মাণ করা হয়েছে। তিনটি প্রকল্পের আওতায় কোস্টগার্ডের বেইসগুলোর কর্মকর্তা ও নাবিকদের বাসস্থান, অফিসার্স মেস, নাবিক নিবাস ও প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। পাশাপাশি পটুয়াখালী অঞ্চলে নিজস্ব প্রশিক্ষণ বেইস ‘বিসিজি বেইস অগ্রযাত্রার’ মাধ্যমে কোস্টগার্ডের জনবলের প্রশিক্ষণ সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ বাহিনীর সদস্যরা স্বল্পতম সময়ে সুবিশাল সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকার মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় অসামান্য সাফল্য অর্জন করেছে বলেও প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে কোস্টগার্ডের একটি সুসজ্জিত চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল এম আশরাফুল হক অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। তিনি কোস্টগার্ডের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। পতেঙ্গার অনুষ্ঠানে স্থলে ইতালির রাষ্ট্রদূত এনরিকো নুনঝিয়াটা, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনসহ চট্টগ্রামের সামরিক ও বেসামরিক শীর্ষ কর্মকর্তা ও বিশিষ্টজনেরা অংশগ্রহণ করেন। কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল এম আশরাফুল হক প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে নয়টি জাহাজের অধিনায়কের হাতে ‘কমিশনিং ফরমান’ হস্তান্তর করেন। কমিশনিংকৃত ৯টি জাহাজের ওপর অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও চিত্রও পরিবেশিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০১৪ সালে ইতালি সফরের সময় বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য তিনি দেশটির সরকারের যে সহযোগিতা কামনা করেন, তারই অংশ হিসেবে পরবর্তীকালে জি-টু-জি চুক্তির মাধ্যমে ইতালি নৌবাহিনীর চারটি করভেট প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের মাধ্যমে অফশোর প্যাট্রোল ভ্যাসেলে রূপান্তর করে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডকে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যার দু’টি বিসিজিএস তাজউদ্দীন ও বিসিজিএস সৈয়দ নজরুল ২০১৭ সালে তিনি কমিশনিং করেন। ইতালি থেকে সংগৃহীত আরও দুটি অফশোর প্যাট্রোল ভ্যাসেল বিসিজিএস মনসুর আলী ও বিসিজিএস কামারুজ্জামান আজ কমিশনিং হলো।’
এ ছাড়া পাঁচটি ইনশোর প্যাট্রোল ভ্যাসেল বিসিজিএস সবুজ বাংলা, শ্যামল বাংলা, সোনার বাংলা, স্বাধীন বাংলা ও অপরাজেয় বাংলা এবং দুটি ফাস্ট প্যাট্রোল বোট বিসিজিএস সোনাদিয়া ও কুতুবদিয়া আজ এ বাহিনীর বহরে যুক্ত হলো।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রায় ত্রিশ মিনিটের ভাষণে বলেন, খুলনা শিপ ইয়ার্ড বন্ধ করে দেয়ার চাপ ছিল। কিন্তু সেই চাপ না শুনে ৯৬ পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে খুলনা শিপইয়ার্ড এবং নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ডকে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই সিদ্ধান্তের জন্যই আজ দেশেই বিশ্বমানের জাহাজ নির্মাণ হচ্ছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালিত নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড ও খুলনা শিপইয়ার্ডে নির্মিত আজকের কমিশনিং করা ইনশোর প্যাট্রোল ভ্যাসেল এবং ফাস্ট প্যাট্রোল বোটগুলো। অর্থাৎ আমরা নিজেরাও তৈরি করতে পারি, সেটারই আজ প্রমাণ পেলাম। আজকে আমাদের কাজে লাগল। আগামীতে আমরা রপ্তানিও করব ইনশা আল্লাহ।’ তিনি দেশে আরো জাহাজ তৈরির কার্যক্রম চলছে বলেও উল্লেখ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগৃহ নির্মাণ ঋণের তথ্য জমা দিলে কর আদায়ে ছাড়
পরবর্তী নিবন্ধবন্দরের মাথাব্যথা ভলগেট