কোরবানির পশু হিসেবে চাহিদা বাড়ছে গয়ালের

খাগড়াছড়িতে বাণিজ্যিক খামার

সমির মল্লিক, খাগড়াছড়ি | বুধবার , ১২ জুন, ২০২৪ at ৭:৫০ পূর্বাহ্ণ

দৈহিক গঠন, মাংসের স্বাদ অনন্যের পাশাপাশি মানব স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হওয়ায় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে গয়াল। বুনো পরিবেশে বেড়ে উঠা পাহাড়ি গরু খ্যাত এ প্রাণীটির বাণিজ্যিক চাষাবাদ হচ্ছে। কয়েক দশক আগেও পার্বত্য চট্টগ্রামের গহীন বনাঞ্চলে শতাধিক গয়াল দেখা গেলেও ২০১৫ সালের ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ ন্যাচারের তথ্যমতে এ বন্যপ্রাণীকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। তবে গৃহপালিত প্রাণী হিসেবে গয়াল চাষ হচ্ছে বৃহত্তর চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। খামারে চাষাবাদ হলেও প্রাকৃতিক খাবারের ওপর নির্ভরশীল এ প্রাণীটি পালনে বাড়তি পরিচর্যা করতে হয় না। খাগড়াছড়িতে বাণিজ্যিক খামারে চাষ হচ্ছে গয়ালের। ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে খাগড়াছড়িতে গয়ালের চাহিদা বাড়ছে। মানিকছড়ির শৌখিন খামারি মাঈন উদ্দিনসহ জেলার কয়েকজন খামারি প্রস্তুতি নিচ্ছেন গরুর মতো দেখতে এ গবাদি প্রাণীটি বাজারজাতে। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার এক খামার থেকে ১০টি গয়াল এনে মানিকছড়ির রাঙাপানি ছড়া এলাকায় গয়ালের বাণিজ্যিক খামার শুরু করেন তিনি।

খামারি মাঈন উদ্দিন জানান, ফলদ বাগানে আগাছা ও পাহাড়ে জন্মানো ঘাস কাজে লাগাতে গয়াল চাষের উদ্যোগ নিই। গরুর মতো দেখা গেলেও বৈশিষ্ট্য ও ওজনে ভিন্নতার পাশাপাশি মানব দেহের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত হওয়ায় কোরবানির পশু হিসেবে গয়ালের চাহিদা রয়েছে। ইতোমধ্যে ৪টি গয়াল বিক্রি করেছি। ভালো দামও পেয়েছি। কোরবানির আগেই বাকি গয়ালও বিক্রি হয়ে যাবে। ঈদুল আযহার পর খামারের পরিধি বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, গয়াল বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী। এদের হাট বাজার থেকে কিনে বাড়তি খাবার খাওয়াতে হয় না। বাগানে যে সব আগাছা রয়েছে সেগুলোতে খাওয়ালে হয়। লালন পালনের বাড়তি খরচ হয় না। আমার খামারে গয়ালের বাচ্চাও হয়েছে। সরকারি সহযোগিতা বা প্রণোদনা পেলে গয়ালের খামার আরো সম্প্রাসরণ করতে পারব।

বুনো পরিবেশে প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে বেড়ে উঠতে অভ্যস্ত হলেও গৃহপালিত প্রাণীর মতো লালন পালন সম্ভব বলছেন খামারে নিয়োজিতরা। শুরুর দিকে পোষ মানতে কিছুটা বেগ পেতে হলেও ধীরে ধীরে গরুর মতো পালন করা যাচ্ছে। সবুজ ঘাস, লবণ পানির সাথে নিয়মিত খাবার হিসেবে চালের কুড়ার পাশাপাশি বাড়তি পরিচর্যা করতে হয়। খামারে কাজ করে কর্মসংস্থান হয়েছে স্থানীয়দের।

গয়ালের খামারে পরিচর্যাকারী মো. লোকমান হোসেন ও সুইচিং মারমা বলেন, বাড়তি খাবার দিতে হয় না। লালন পালনে কোন ঝামেলা নেই। পাহাড়ে ঘাস খাওয়ানো হয়। গয়ালের খামারের কাজ করে আমাদের জীবিকা চলে। খাগড়াছড়ির জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. জওহর লাল চাকমা বলেন, বন্যপ্রাণী হিসেবে বিলুপ্ত হওয়ার পর গয়ালকে গৃহপালিত প্রাণী হিসেবে লালন পালন করা হচ্ছে। বাড়তি চাহিদার কারণে ভবিষ্যতে অনেক উদ্যোক্ততা গয়াল লালন পালনে আগ্রহী হবে। গয়ালের মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু। এটি লালন পালনে ঝামেলা নেই। ভবিষ্যতে গয়ালের খামারের পরিধি বাড়ানোর জন্য আমাদের অধিদপ্তর থেকে প্রকল্প নেয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাতদিন টুংটাং শব্দে মুখর কামারপাড়া
পরবর্তী নিবন্ধ৪০ পাহাড়ি পরিবার পেল মাচাং ঘর