লাল বিরিষ, চট্টগ্রামের মানুষের কাছে কোরবানিতে প্রথম পছন্দ। রেড চিটাগাং ক্যাটেল নামের চট্টগ্রামের বিশেষ জাতের এই গরুকে অষ্টমুখী লাল গরু বলে থাকেন অনেকে। মাঝারি আকার, সুদর্শন ও সতেজ হওয়ায় চাহিদার শীর্ষে থাকে চট্টগ্রামের আদি জাতের ষাঁড় লাল বিরিষ।
তবে সবার পছন্দের এই গরু বাজারে মিলছে কম। দেশি–বিদেশি নানা জাতের গরুর ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রামের একমাত্র জাত রেড চিটাগাং ক্যাটেল। অসচেতনতার ফলে এই জাতের সাথে নানা জাতের বীজের সংকরায়নের কারণে ক্রমেই হারিয়ে যেতে বসেছে অষ্টমুখী এই লাল বিরিষ। এবারে চন্দনাইশ এবং সাতকানিয়ার কিছু খামারি ও কৃষক রেড চিটাগাং মোটাতাজা করেছেন বলে জানা গেছে। সুখবর হলো চট্টগ্রামের বিশুদ্ধ এ জাতকে টিকিয়ে রাখার জন্য ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছেন বাংলাদেশ প্রাণী সম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট। পল্লী কর্ম–সহায়ক ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় আইডিএফ’র মাধ্যমে সাতকানিয়াসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় রেড চিটাগাং ক্যাটেলের প্রদর্শনী খামার করা হচ্ছে। এসব খামারের মাধ্যমে রেড চিটাগাং ক্যাটেলের বিশুদ্ধ প্রজনন এবং জাতকে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য কাজ করা হয়।
সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও চন্দনাইশে বিভিন্ন হাট–বাজার এবং খামার পরিদর্শন করে দেখা যায়, সংখ্যায় কম হলেও হাটে এই জাতের গরু আসতে দেখা যাচ্ছে। পছন্দের শীর্ষে খাকায় এ জাতের গরু মোটাতাজাকারীরা দামও পাচ্ছেন ভালো।
সাতকানিয়া পৌরসভার ছিটুয়া পাড়ার বাসিন্দা ও খামারি আবদুল মান্নান বলেন, কোরবান উপলক্ষে আমি মোট ৩৫টি গরু মোটাতাজা করেছি। এরমধ্যে ২টি রেড চিটাগাং ক্যাটেল ছিল। রেড চিটাগাং ক্যাটেল দেখতে লাল ও সুন্দর হওয়ায় বাজারে সবার নজরে পড়ে। স্থানীয় বাজারে এই জাতের গরুর চাহিদা বেশি। বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে গত ৬–৭ মাস আগে কেরানীহাট এবং কাঞ্চনা এলাকা থেকে রেড চিটাগাং জাতের ২টি গরু নিয়েছিলাম। এ সময়ের মধ্যে গরু দুটির কোনো ধরনের রোগ হয়নি। খাবারও স্বাভাবিক। দেখতে অনেক সুন্দর ও মোটাতাজা হয়েছে। একটি বিক্রি করেছি। সেটিতে বেশ ভাল লাভ হয়েছে। এখন যেটি আছে সেটিও ভাল দামে বিক্রি করতে পারবো। অন্যান্য যেকোন জাতের গরুর চেয়ে রেড চিটাগাং ক্যাটেল লালন–পালন সহজ ও বাজারে তুলনামূলক ভাল দাম পাওয়া যায়।
সাতকানিয়ার ছদাহা এলাকার লোকমান হাকিম জানান, রেড চিটাগাং ক্যাটেল নামের লাল রঙের গরুগুলো দেখতে খুব সুন্দর এবং মাঝারি আকৃতির হয়। শুনেছি এটি নাকি আমাদের চট্টগ্রামের জাত। এই জাতের গরুর মাংসে চর্বিও তুলনামুলক কম। মাংস সুস্বাদু হওয়ায় সবাই খেতেও চাই। ফলে কোরবানিতে আমার প্রথম পছন্দ রেড চিটাগাং। কোরবানির সময় বাজারে আমি প্রথমে এই জাতের গরু খুঁজি। বাজারে পাওয়া গেলে দাম কিছুটা বেশি হলেও নিয়ে নিই। ইতোমধ্যে গ্রামের এক কৃষকের কাছ থেকে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা দিয়ে রেড চিটাগাং ক্যাটেল জাতের গরু পছন্দ করে নিয়ে নিয়েছি।
সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের দূর্লভের পাড়ার রেড চিটাগাং ক্যাটেল প্রদর্শনী খামারের ব্যবস্থাপক মো. জাহেদ জানান, এ বছর আমাদের খামার থেকে রেড চিটাগাং ক্যাটেল জাতের ১৪টি গরু বিক্রি করেছি। খামারে এ জাতের ছোট বড় আরো বেশ কিছু গরু রয়েছে। রেড চিটাগাং ক্যাটেল পালনে অনেক সুবিধার দিক রয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো– রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি, মাংসে চর্বি কম হওয়ায় সবাই খেতে পারে, অন্যান্য জাতের গরুর তুলনায় মাংসের স্বাদ বেশি, লালন পালনে খরচ কম, রোগ বালাই কম। ফলে এ জাতের গরু লালন পালনে অধিক লাভবান হওয়া যায়।
সাতকানিয়া উপজেলা প্রাণী সম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডা. মো. সালাউদ্দিন তানভীর জানান, রেড চিটাগাং ক্যাটেল হলো চট্টগ্রামের আদি এবং একমাত্র জাত। এ জাতের গরুর রং, চোখ, চোখের ভ্রু, নাক, শিং, ক্ষুর, লেজ ও প্রজননঅঙ্গ লাল রঙের হয়। গরুর শিং তুলনামুলক ছোট ও পাতলা হয়। এ জাতের গরু দেখতে খুব সুন্দর ও শক্তিশালী হওয়ায় পছন্দের তালিকায় সবার শীর্ষে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে খামার ও কৃষকদের কাছে হাজারের অধিক রেড চিটাগাং ক্যাটেল রয়েছে। বাংলাদেশ প্রাণী সম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট রেড চিটাগাং ক্যাটেল উন্নয়ন ও সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সাতকানিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে কিছু প্রদর্শনী খামার করেছে। পল্লী কর্ম–সহায়ক ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় আইডিএফ এসব প্রদর্শনী খামারের মাধ্যমে রেড চিটাগাং ক্যাটেলকে উৎপত্তিস্থল চট্টগ্রাম এবং বাইরে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য কাজ করছে।