দীর্ঘ ২৫ বছর আস্থার সাথে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে চট্টগ্রামের আবাসন শিল্পের অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান ইকুইটি প্রপার্টি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড। এই দীর্ঘ পথচলায় ইতোমধ্যে ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি ইকুইটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. কাজী আইনুল হক দৈনিক আজাদীর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় আবাসন শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি, গণআবাসন তৈরি ও ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে ফ্ল্যাটের দামবৃদ্ধিসহ নানা ইস্যুতে কথা বলেছেন।
ইকুইটির কর্ণধার ডা. কাজী আইনুল হক বলেন, ইকুইটির যাত্রা শুরু হয়েছে ১৯৯৯ সালে। সেই থেকে আজ পর্যন্ত আমরা কখনো কোয়ালিটির প্রশ্নে আপস করিনি। যে কারণে আমরা ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। এখন পর্যন্ত আমরা সফলভাবে ৫২টি প্রজেক্ট হস্তান্তর করেছি। এছাড়া বর্তমান ৮টি প্রজেক্ট চলমান আছে। তবে বর্তমানে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ফ্ল্যাটের দামের ওপর প্রভাব পড়েছে। তবে আমাদের একটি সমস্যা হলো যেসব ফ্ল্যাট আগে বুকিং নিয়ে বিক্রি করেছি, সেগুলো তো আমরা আর দাম বাড়াতে পারছি না। গত দুই–তিন বছর ধরে সব ধরনের বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালসের দাম ৩৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। তাই আমাদের অনেক প্রজেক্টে লোকসান দিতে হচ্ছে।
মধ্যবিত্তদের জন্য ফ্ল্যাটের প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, মধ্যবিত্তদের জন্য ফ্ল্যাট প্রকল্প সরকার না করলে আবাসন নির্মাতাদের পক্ষে করা কঠিন। কারণ আমাদের প্রজেক্টের ব্যয়ের বড় একটি অংশই চলে যায় জমির সংস্থান করতে। জমির দাম এখন যে জায়গায় গেছে কম দামে ফ্ল্যাট বিক্রি করার সুযোগ এখন নাই। ছোট একটা দেশে যেখানে জমির স্বল্পতা রয়েছে, সেখানে খরচ কমাতে হলে গণ আবাসন প্রকল্প করতে হবে। যেখানে ৫০০ থেকে ২০০০ অ্যাপার্টমেন্ট থাকবে, তখন কম দামে ফ্ল্যাট বিক্রি করা সম্ভব হবে। এছাড়া সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ৪ কাঠা, ৫ কাঠা কিংবা ১০ কাঠা জমি ব্যক্তি বিশেষের অনুকূলে বরাদ্দ দিচ্ছে, আমি এটার বিরুদ্ধে।
জমির স্বল্পতার দেশে আপনি এভাবে জমি বরাদ্দ দিতে পারেন না। এখন মনে করুন, অনন্য আবাসিক এলাকা তৈরি হলো। এই আবাসিক এলাকাতে যদি পাঁচ প্লট করে পাঁচটা আবাসন প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিয়ে বলতো– তোমরা অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি করে, এই দামে বিক্রি করো। তখন খরচ অনেক কমে আসতো। আরেকটু বিষয় হলো–ঢাকায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কিংবা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) তারা তো নিয়ন্ত্রক সংস্থা, ওদের কাছে যে জমি আছে, সেগুলো ন্যূনতম মূল্যের জমি। তারাও অ্যাপার্টমেন্ট বানিয়ে আমাদের সমান দামে বিক্রি করছে।
আইনুল হক বলেন, আমাদের এখানে অনেক বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্তভাবে অ্যাপার্টমেন্ট হয়েছে। এখন একসাথে দুই হাজার অ্যাপার্টমেন্ট হলে আলাদা একটা সোসাইটি গড়ে উঠতো। তখন সব ধরনের কমন ফ্যাসিলিটি গড়ে উঠবে। এখনো আমাদের ও আর নিজাম রোডে, খুলশী ও পাঁচলাইশে অ্যাপার্টমেন্ট করতে হচ্ছে। আজকে ৬০ বছরে একটা খুলশী আর হয়নি, একটা ও আর নিজাম রোড হয়নি। এখন যদি সীতাকুণ্ড রোডে কিংবা কাপ্তাই রোডসহ আরো বিভিন্ন জায়গায় গণআবাসন করা যেত, তবে সেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থার সাথে সাথে ওইসব এলাকার বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পেত। মোট কথা হচ্ছে গণআবাসন তৈরি করে বিকেন্দ্রীকরণের চিন্তা করতে হবে। এছাড়া মধ্যবিত্তদের ফ্ল্যাটে আনতে চাইলে সরকারের পলিসি সাপোর্ট লাগবে। কম সুদে ঋণ দিতে হবে। আরেকটি সমস্যা হচ্ছে– ফ্ল্যাটের সেকেন্ড ট্রান্সফারটা হচ্ছে না। এখন দেখা যাচ্ছে, একটা অ্যাপার্টমেন্টের রেজিস্ট্রেশন করলে ওখানে সে আটকে যাচ্ছে। কারণ রেজিস্ট্রেশন খরচ অনেক বেশি। এর ফলে সেকেন্ডারি মার্কেট তৈরি হচ্ছে না। দ্বিতীয়বারও প্রথমবারের মতো রেজিস্ট্রেশন খরচ দিতে হচ্ছে। এরমধ্যেও আমরা টিকে আছি। ইকুইটির আরেকটির বিষয় বলতে হয়, বিক্রয় পরবর্তী সেবা। আমরা প্রতিটি ক্রেতাকে বিক্রয় পরবর্তী সেবা দিয়ে যাচ্ছি।