নতুন বছরকে সবার আগে স্বাগত জানিয়েছে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডবাসী। তবে সেখানে হয়নি কোনও আতশবাজি। নীরবেই সেখানে শুরু হয়েছে নতুন বছর। ওদিকে, অস্ট্রেলিয়া ২০২১ সালকে বিদায় জানিয়েছে সিডনি সৈকতে আতশবাজি করে। পুরোনো স্টাইলেই তারা শুরু করেছে নববর্ষ বরণের উৎসব। আতশবাজি দেখতে সিডনি ব্রিজের বিভিন্ন পয়েন্টে ভিড় করেছে মানুষ। বিশ্বজুড়ে টিভিতে প্রচার হয়েছে সে দৃশ্য। খবর বিডিনিউজের।
কিন্তু প্যারিস, লন্ডন, কুয়ালালামপুরসহ বিশ্বজুড়ে আরও অনেক জায়গাতেই নতুন বছরকে বরণ করতে আতশবাজির আনন্দ আয়োজন বাতিল করা হয়েছে। কারণ, ২০২১ সালে টিকার কারণে কোভিডের থাবা কমলেও করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের জেরে পূর্ণ আনন্দ নিয়ে মানুষের ২০২২ সাল উদযাপনের আশায় ছেদ পড়েছে। সব কিছুই করা হচ্ছে সীমিত পরিসরে, বিধিনিষেধের মধ্য দিয়ে।
যুক্তরাষ্ট্রে নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে গোল্ডেন বল পতনের আয়োজন এবারও আছে। কিন্তু সেই আয়োজনের কাউন্টডাউনে উপস্থিত মানুষের সংখ্যা এবার অনেক কম থাকছে। টাইমস স্কয়ারে সাধারণ সময়ে বর্ষবরণের আয়োজনে উপস্থিত হয় ৫৫ হাজার মানুষ। এবার সেখানে মাত্র ১৫ হাজার লোক সমাগমের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তারওপরও জুড়ে দেওয়া হয়েছে কিছু শর্ত। প্রত্যেকের টিকা নেওয়া এবং মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে অনুষ্ঠানে। আর লস অ্যাঞ্জেলসে গ্র্যান্ড পার্কের কাউন্টডাউন অনুষ্ঠান এবার বাতিল করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যে ওমিক্রন আতঙ্কে একাধিক জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে স্কটল্যান্ড, নর্দান আয়ারল্যান্ডের মতো জায়গাও। জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। এর আগে বড়দিনে রেকর্ড কোভিড সংক্রমণ হয় ইংল্যান্ডে। এর জেরে লন্ডনের ট্রাফালগার স্কয়ারে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে।
এখনও পর্যন্ত ইউরোপের একাধিক দেশে ব্যাপক কোভিড সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। তাই বর্ষবরণের অনুষ্ঠান বাতিল করেছে বহু দেশ। ফ্রান্স বর্ষবরণে জনসমাগম নিষিদ্ধ করেছে। একইভাবে রোম এবং ভেনিসেও বাতিল হয়েছে অনুষ্ঠান। গ্রিস আগেই বড়দিন এবং বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। সব ধরনের জমায়েত বন্ধ করতে বলা হয়েছিল এবং বাইরে বেরোলে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়। নতুন বছরের শুরুতে আরও কিছু বিধি জারি করতে পারে দেশটি।
অন্যদিকে, এশিয়ারও অনেক দেশে নতুন বছর বরণের অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া ২০২০ সালের মতো ২০২১ সালেও নতুন বছরকে স্বগত জানাতে মধ্যরাতে বেল বাজানোর ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান বাতিল করেছে। তার বদলে কর্তৃপক্ষ ২ সপ্তাহের জন্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়মসহ আরও কিছু কঠোর স্বাস্থ্যবিধি ঘোষণা করেছে। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান হচ্ছে। তবে যারা এই অনুষ্ঠান দেখতে যাবেন তাদের আগে থেকেই রেজিস্ট্রেশন এবং সম্পূর্ণ টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
জাপানের রাজধানী টোকিওতেই সাধারণত সবচেয়ে বড় বর্ষবরণ অনুষ্ঠান হয়। তবে ২০২০ সালে নতুন বছর উদযাপন অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছিল। আর ২০২১ সালেও টোকিওর ঝাঁ চকচকে শিবুইয়া বিনোদোন কেন্দ্রে নতুন বছর বরণের উৎসব বন্ধ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা ইউটিউবে জনগণকে মাস্ক পরা এবং নববর্ষের পার্টিতে জনসমাগম কম রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
২০২০ থেকে ২০২১ এবং তারপর করোনাভাইরাসকে সঙ্গে করেই আগমন ২০২২ সালের। নতুন আতঙ্ক ওমিক্রনের জেরে ভারত নতুন বছর উদযাপনের এই সময়ে বিভিন্ন রাজ্যে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি জারি করেছে। জারি হয়েছে রাত্রিকালীন কারফিউ। জমায়েতেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।
চীন, যেখানে ২০১৯ সালে প্রথম করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে, সেখানে এখনও জারি আছে উচ্চ সতর্কাবস্থা। শিয়ান নগরী আছে লকডাউনে। আর দেশটির অন্যান্য শহরে বাতিল হয়েছে নতুন বছর বরণের উৎসব। ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা কর্তৃপক্ষ নতুন বছর উদযাপনের সময় ভিড় হয় এমন ১১টি রাস্তা এবার বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। মালয়েশিয়া দেশব্যাপী বড় ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ করেছে। বাতিল করেছে বর্ষবরণ উদযাপনের আতশবাজিও। ওদিকে, উত্তর কোরিয়া রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ের কিম ইল সাং স্কয়ারে মধ্যরাতে আতশবাজির উৎসব করে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর পরিকল্পনা করেছে।
ওমিক্রন আতঙ্কের মধ্যে বিশ্বের বেশিরভাগ জায়গাতেই বিধিনিষেধ আর সীমিত পরিসরের অনুষ্ঠান চলার মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা ২০২১ সালের একেবারে অন্তিম সময়ে এসে সুখবরের বড় একটি চমক দিয়েছে। বিশ্বে ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার প্রথম খবর জানিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকাই। আর এখন দেশটি জানিয়েছে, ওমিক্রনের ঢেউ তারা পেরিয়ে এসেছে। ঘটেনি খুব বেশি মৃত্যুর ঘটনাও। ওমিক্রনের ফাড়া কেটে যাওয়ায় আনন্দ-উচ্ছ্বাস নিয়ে একটি নতুন বছরে পদার্পনের আশা জেগে উঠেছে দক্ষিণ আফ্রিকার বাসিন্দাদের। জনগণকে ২০২২ সাল উদযাপানের অনুমতি দিয়ে দেশটিতে হঠাৎ করেই তুলে নেওয়া হয়েছে রাত্রিকালীন কারফিউ।