নগরে এবার বইমেলা আয়োজনে ভেন্যু নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। প্রকাশকরা চান পূর্বের ন্যায় এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে আয়োজন করা হোক অমর একুশে বইমেলা–২০২৪। তবে খেলার মাঠে মেলা আয়োজন নিয়ে আপত্তি আছে জেলা প্রশাসনের।
এ অবস্থায় বিকল্প হিসেবে সিআরবি শিরীষতলা অথবা সম্প্রতি উচ্ছেদ হওয়া সার্কিট হাউজ সংলগ্ন শিশু পার্কের মাঠে মেলা আয়োজন করতে চায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। তবে শিশু পার্কের মাঠ এখনো পুরোপুরিভাবে পরিষ্কার করা হয়নি। এদিকে শিরীষতলা ব্যবহারে রেলওয়ে থেকে সম্মতি দেয়া হয়নি। তাছাড়া প্রকাশকদেরও শিরীষতলায় বইমেলা আয়োজন নিয়ে আপত্তি আছে। এ বিষয়ে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, বইমেলা অবশ্য আয়োজন করব। মাঠের বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সবার সঙ্গে বসব। সবাই সম্মিলিতভাবে যে ভেন্যুর কথা বলবে সেখানেই আয়োজন করা হবে। মেলার পরিসর তো বেড়েছে। জিমনেশিয়াম মাঠে জায়গা সংকুলান হয় না। তাই আরো বড় পরিসরে আয়োজনের জন্য সিআরবি অথবা শিশু পার্কের মাঠে আয়োজন করা যায় কিনা সেটাও ভেবে দেখতে বলেছিলাম প্রকাশকদের। জানা গেছে, পূর্বে ফেব্রুয়ারি মাসে নগরে পৃথক তিনটি বইমেলা আয়োজন করত বিভিন্ন সংস্থা এবং সংগঠন। এতে পাঠক ও দর্শনার্থীরা বিভ্রান্ত হতেন। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে জিমনেশিয়াম মাঠে বইমেলা আয়োজন করে চসিক। তবে চট্টগ্রামের সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ, নাগরিক সমাজ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাহিত্যিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী এবং অন্যান্য শিল্প–সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতরাই সম্মিলিতভাবে এ মেলা বাস্তবায়ন করে। ফলে অভিন্ন এ বইমেলা সমাদৃত হয়। এরপর থেকে প্রতি বছর জিমনেশিয়াম মাঠে বইমেলা হয়ে আসছে। মাঝখানে ২০২১ সালে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বইমেলা আয়োজন করা হয়নি।
এদিকে জিমনেশিয়াম মাঠটি চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার অধীন। এর সভাপতি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক। খেলার মাঠে মেলা আয়োজনের বিপক্ষে তার অবস্থান। খেলার মাঠ হওয়ায় ২০২৩ সালে আউটার স্টেডিয়ামে বিজয় মেলা আয়োজনের অনুমতি দেয়া হয়নি। সিটি কর্পোরেশনকেও মৌখিকভাবে বইমেলার জন্য জিমনেশিয়াম মাঠ বরাদ্দ না দেয়ার বিষয়ে জানিয়ে দেয়া হয়। তাই এবার জিমনেশিয়াম মাঠে বইমেলা আয়োজনে মাঠটি বরাদ্দ চেয়ে জেলা প্রশাসনে অফিসিয়ালি আবেদনও করেনি চসিক।
চসিকের উপসচিব আশেকে রসুল টিপু আজাদীকে বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে মাঠে মেলা আয়োজন না করার ঘোষণা দেয়ায় আমরা এবার জিমনেশিয়াম মাঠের জন্য আবেদন করিনি। তবে সিআরবি এবং শিশু পার্কের মাঠের জন্য আবেদন করা হয়েছে। আগামীকাল (আজ) মতবিনিময় সভা আহ্বান করা হয়েছে। এতে প্রকাশক, লেখক, মুক্তিযোদ্ধা ও বুদ্ধিজীবীসহ সংশ্লিষ্টদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সেখানে ভেন্যুর বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
সিআরবি নাকি শিশু পার্কের মাঠ : সিআরবিতে এবার বইমেলা আয়োজনে মাঠ বরাদ্দ চেয়ে কয়েকদিন আগে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক বরাবর আবেদন করে চসিক। এছাড়া শিশু পার্কের মাঠ বরাদ্দ চেয়ে পৃথক আরেকটি আবেদন করা হয় জেলা প্রশাসকের কাছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক বরাবর দেয়া পত্রে বলা হয়, সিআরবি শিরীষতলার মাঠ ও তৎসংলগ্ন রোড ও সাতরাস্তার মাথা থেকে পশ্চিম পার্শ্বস্থ সিআরবিমুখী রোড হয়ে গোলচত্বর পর্যন্ত এলাকায় মেয়র আগামী বইমেলা আয়োজনের ইচ্ছা পোষণ করেছেন। পত্রে বইমেলা আয়োজনে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মার্চ পর্যন্ত বইমেলার জন্য শিরীয়তলার মাঠ ও তৎসংলগ্ন এলাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়। এছাড়া জেলা প্রশাক বরাবর দেয়া চিঠিতে বড় পরিসরে বইমেলা আয়োজনে সার্কিট হাউজ সংলগ্ন মাঠ বরাদ্দ চাওয়া হয়।
দুটি পত্রে উল্লেখ করা হয়, সিটি কর্পোরেশন সম্মিলিতভাবে অমর একুশে বইমেলা–২০২৪ আয়োজনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। মেয়রের পৃষ্ঠপোষকতায় সিটি কর্পোরেশনের আয়োজনে ও ব্যবস্থাপনায় এবং সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক সংগঠক, সংবাদপত্র সম্পাদক, লেখক, সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষকগণের সহযোগিতায় এ বইমেলা বিগত ২৫ বছর যাবৎ আয়োজিত হয়ে আসছে। বিগত কয়েক বছর ধরে এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে আয়োজন করা এ বইমেলা অত্যন্ত সাফল্য লাভ করেছে। এ বইমেলাকে চট্টগ্রামবাসী তাদের প্রাণের মেলা হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং প্রতি বছর এ মেলার ব্যাপ্তি ঘটছে।
চিঠিতে বলা হয়, জিমনেশিয়াম মাঠে বড় পরিসরে বইমেলা আয়োজনের জন্য উপযুক্ত না হওয়ায় এবং পর্যাপ্ত পার্কিং সুবিধা না থাকায় বরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে বইমেলা বড় পরিসরে ও আরো নান্দনিকরূপে আয়োজনের জন্য বইমেলা আয়োজন কমিটি প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
প্রকাশকরা কী বলছেন : জানা গেছে, চট্টগ্রামের প্রকাশকদের সংগঠন চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের নেতৃবৃন্দ গতকাল সন্ধ্যায় জরুরি বৈঠকে বসেন। সেখানে তারা জিমনেশিয়াম মাঠে বইমেলা আয়োজনের দাবি জানান।
সংগঠনের নবনির্বাচিত সভাপতি মো. সাহাব উদ্দীন হাসান বাবু আজাদীকে বলেন, বইমেলার অন্যতম অংশীজন প্রকাশকগণ। কারণ তারাই লাভ–লস বহন করেন। তাই প্রকাশকদের দাবি, পূর্বের ন্যায় জিমনেশিয়াম মাঠেই বইমেলা আয়োজন করা হোক। শিশু পার্কের মাঠটি এখনো অপরিষ্কার। সেটাকে মেলার উপযোগী করতে সময় লাগবে। পার্ক উচ্ছেদের পর এখনো পুরোপুুরি পরিষ্কার করা হয়নি। আবার সিআরবির কথা বলা হচ্ছে। সেটাও কিন্তু বইমেলার উপযোগী নয়। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারিতে বৃষ্টি হয়। বৃষ্টি হলে সিআরবি শিরীষতলায় পানি জমে থাকে। কাদায় একাকার হয়ে যায়। তাছাড়া সেখানে আশেপাশে মাদকসেবীদের উপদ্রব থাকে। এতে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। স্টল থেকে বই চুরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। তাই জিমনেশিয়াম মাঠই উপযুক্ত।