কোটা নিয়ে আপিল বিভাগের ঐতিহাসিক রায়

আইনের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাশীল হতে হবে

| সোমবার , ২২ জুলাই, ২০২৪ at ৬:০১ পূর্বাহ্ণ

কোটা নিয়ে সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির পর গতকাল রায় ঘোষণা হয়েছে। রায়ে শতকরা ৯৩ ভাগ মেধায়, শতকরা ৫ ভাগ মুক্তিযোদ্ধা কোটায়, শতকরা ১ ভাগ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও শতকরা ১ ভাগ প্রতিবন্ধীদের জন্য উল্লেখ করে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা এসেছে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গা বেঞ্চ থেকে। সর্বোচ্চ আদালত সর্বোচ্চ দ্রুততম সময়ে রায় ঘোষণা করায় দেশের আপামর জনসাধারণ স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। এই রায়কে ঐতিহাসিক ও অধিক সময়োচিত বলে অভিনন্দিত করছেন অনেকেই। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতরা তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালেও আমরা স্পষ্টত বুঝতে পারি, এই রায় তাদের পক্ষেই গেছে। আমরা মনে করি, এবার শিক্ষার্থীরা সন্তুষ্টি নিয়ে ঘরে ফিরতে পারবে। যদিও এর আগে আইনমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী ও তথ্য প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে শিক্ষার্থীদের তিন সমন্বয়কারী ৮ দফা দাবি পেশ করেছিল। এই ৮ দফা দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল : তদন্ত সাপেক্ষে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা, তাদের গ্রেপ্তার ও দ্রুত সময়ে বিচার করতে হবে; শহীদ ভাইদের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা, মাসিক ভাতা ও পিতামাতার মতামতের ভিত্তিতে একজন সদস্যকে চাকরির নিশ্চয়তা দিতে হবে; সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে প্রশাসনিক সিট বরাদ্দ দিতে হবে, সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে এবং ছাত্র সংসদ চালু করতে হবে; কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দায়েরকৃত সকল মামলা প্রত্যাহার করতে হবে; কোটা সংস্কার আন্দোলনের সাথে জড়িত সকল শিক্ষার্থীকে সব ধরনের রাজনৈতিক, আইনি বা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের প্রশাসন কর্তৃক একাডেমিক হয়রানি না করার নিশ্চয়তা দিতে হবে। কোটা ন্যূনতম ৫ শতাংশে নামিয়ে যৌক্তিক সংস্কার করে সংসদে আইন পাস করতে হবে; এ পর্যন্ত সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার ও দোষীদের শাস্তি দিতে হবে।

শিক্ষার্থীদের এসব দাবি মেনে নেওয়া সম্ভবএমন কথা আইনমন্ত্রী আনিসুল হক শুক্রবার রাতেই বলেছিলেন গণমাধ্যমকে। তিনি দ্রুত যৌক্তিক সমাধানের আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন।

বলা জরুরি যে, কোটা বিরোধী আন্দোলনের কাঁধে ভর করে এক শ্রেণির দুষ্কৃতকারীরা ধ্বংসযঞ্জে মেতে উঠেছিল। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনির গাড়ি ছাড়াও বেশ কিছু সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আগুন ধরিয়ে দেয়। একটার পর একটা নৃশংস ও সহিংস ঘটনায় পুরোপুরি রুদ্ধ হয়ে যায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। আন্দোলনের ফাঁকে চলে সংঘাত ও ধ্বংসযঞ্জ। কোটা আন্দোলন সহিংস পন্থায় শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত তা আর শান্তিপূর্ণ ছিল না, রূপ নিয়েছে চরম সহিংস আন্দোলনে। সার্বিক পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়লে সরকার কারফিউ জারি করতে বাধ্য হয়।

এজন্য আমরা মনে করি, দেশের সর্বোচ্চ আদালত সামগ্রিক বিষয়টি অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছেন। আশাকরি, আদালতের এই রায় ‘সুবিবেচিত’ এবং মনে করি এই রায় বিদ্যমান সংকট নিরসনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

এ মুহূর্তে আমরা সকল পক্ষের প্রতি আবেদন জানাই, আদালতের এই রায় আপনারা সমগুরুত্বে গ্রহণ করে নেবেন। কয়েকদিন ধরে যে লাগাতার অস্বাভাবিক ও অস্বস্তিকর পরিস্থিতি দেশে বিরাজ করছে, এই রায়ের মাধ্যমে তার অবসান হবে বলে আমরা মনে করি।

আজকের এই বাংলাদেশে সকলের প্রত্যাশাচলমান সংঘাত ও সহিংসতার দ্রুত অবসান হোক। আন্দোলনের ব্যানার ব্যবহার করে কেউ যেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। যদিও কোটা আন্দোলনকারীদের সমন্বয়কারীরা গণমাধ্যমে আগেই বলেছেন ‘আমরা দেখেছি বিভিন্ন মিডিয়াতে বা বিভিন্ন জায়গায় ভুল তথ্য বা বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। চলমান সহিংসতা, সমর্থন করে না কোটা আন্দোলনকারীরা। কেউ সাধারণ শিক্ষার্থীদের নামে নাশকতা করার অপচেষ্টা করলে তার দায় শিক্ষার্থীরা নেবে না।’ তাদের এই ঘোষণায় সাধারণ মানুষের বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে, এই আন্দোলনে স্বার্থান্বেষী দুষ্কৃতকারীরা ঢুকে পড়েছে। এদের বিষয়ে অবশ্যই সজাগ থাকতে হবে। এখন দরকার আন্দোলনকারীসহ দেশের সব শ্রেণির মানুষকেই আইনের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাশীল ও দায়িত্বশীল হওয়া। তবে জনসাধারণের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি সরকারকেই ভাবতে হবে। উগ্রতাহিংসাবিদ্বেষঅসহিষ্ণুতা ও সহিংসতার পথ পরিহার করতে হবে সবাইকে। অনুধাবন করতে হবে বিদ্যমান সংকটের বাস্তবতা। দেশপ্রেম জাগ্রত হোক, প্রতিষ্ঠা হোক শান্তি। পুরো জাতি এ অস্থিরতা থেকে মুক্তি চায়, চায় সমৃদ্ধি ও শান্তির বারতা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে