কে হচ্ছেন পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী

বিলাওয়ালকে প্রধানমন্ত্রী করার শর্তে জোট গঠনে রাজি পিপিপি, দাবি জারদারির ।। ইমরান-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী নওয়াজের দলে ।। বিক্ষোভ ঠেকাতে ইসলামাবাদে ১৪৪ ধারা

আজাদী ডেস্ক | সোমবার , ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৮:১০ পূর্বাহ্ণ

নির্বাচনের তিন দিন পর পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করেছে গতকাল রোববার। কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে ১০১টি আসনে জিতেছেন ইমরান খানের পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। অন্যদিকে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লীগনওয়াজ (পিএমএলএন) ৭৫টি আসনে জয় পেয়েছে। তাছাড়া, প্রয়াত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ছেলে বিলওয়াল ভুট্টো জারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টি ৫৪টি আসনে জয় পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। আর মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট (এমকিউএম) ১৭টি আসন জিতেছে।

তবে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় কোনো দলই সরকার গঠন করতে পারছে না। রাজনৈতিক অচলাবস্থার মধ্যে সরকার গঠনের জন্য অন্য দলগুলোর সঙ্গে জোট করার তৎপরতা শুরু করেছেন ৭৫টি আসনে জয় লাভ করা পিএমএলএন পার্টির নেতা নওয়াজ শরিফ। সরকার গড়তে অন্যান্য রাজনৈতিক দল বা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সহায়তা প্রয়োজন। এদিকে পিপিপির চেয়ারম্যান বিলওয়াল ভুট্টো জারদারিকে প্রধানমন্ত্রী বানানোর শর্তে পাকিস্তান নওয়াজের সঙ্গে জোট সরকার গঠনে পিপিপি রাজি আছে বলে জানিয়েছেন বিলাওয়ালের বাবা সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি। এছাড়া, গুরুত্বপূর্ণ কিছু মন্ত্রণালয়ও চায় পিপিপি। পিএমএলএন এর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে গতকালের বৈঠকে পিপিপির এ দাবির কথা উল্লেখ করেছেন পিএমএলএন প্রেসিডেন্ট শেহবাজ শরিফ। পিপিপির সঙ্গে জোট গঠনের আলোচনা ব্যর্থ হলে এমকিউএম, জেইউআইএফ ছাড়াও অন্য ছোট ছোট দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে সরকার গঠনের পথ হাতে রেখেছেন পিএমএলএন নেতারা। এভাবে সরকার গঠন করতে পারলে সেক্ষেত্রে পিএমএলএন শেহবাজ শরিফকে প্রধানমন্ত্রী করতে পারে এবং নওয়াজ শরিফের মেয়ে মরিয়ম নওয়াজকে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী করতে পারে। এর বাইরেও দলটির নেতাদেরকে কেন্দ্র, পাঞ্জাব এবং বেলুচিস্তান প্রদেশেও সরকার গঠনের ক্ষেত্রে অন্যান্য বিকল্প উপায় নিয়ে ভাবতে বলা হয়েছে।

তবে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিকইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার গোহর আলী খান দাবি করেছেন, জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করায় রাষ্ট্রপতি আরিফ আলভি সরকার গঠনের জন্য তার দলকে আমন্ত্রণ জানাবেন। প্রধানমন্ত্রী কে হবেন তা দলের মধ্যে পরামর্শ করেই ঠিক করা হবে। পিটিআই চেয়ারম্যান বলেন, জনগণের কণ্ঠরোধ করে কোনো সরকার গঠন করা হলে দেশের অর্থনীতি তা সহ্য করতে পারবে না।

এদিকে নির্বাচনে সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ এবং ইমরান খান উভয়ই পাল্টাপাল্টি জয় দাবির পর সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনীর দেশবাসীকে ‘নৈরাজ্য ও দলাদলি’ ত্যাগ করে ঐক্য গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন। গত শনিবার এক বিবৃতিতে জেনারেল মুনির ঐক্য ও স্বাভাবিকতার ডাক দেন। তিনি বলেন, জাতির দৃঢ় হাত দরকার এবং অরাজকতা ও মেরুকরণের রাজনীতি থেকে সরে আসতে ‘আরোগ্যের পরশ’ প্রয়োজন। সেনাপ্রধানের এ আহ্বানে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পিটিআই। দলটি তাদের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানসহ অন্যান্য রাজবন্দিদেরও জেল থেকে মুক্তির পাশাপাশি ভোটে জনগণ পিটিআইকে দেশ শাসনের যে রায় দিয়েছে, তাকে সম্মান জানিয়ে এর স্বীকৃতি দেওয়ারও দাবি জানিয়েছে। সেনাবাহিনী কেবল এই ‘আরোগ্যের পরশই’ এখন বুলিয়ে দিতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন। সেনাপ্রধান মুনীরের বক্তব্যের জবাবে পিটিআই এর ব্যারিস্টার গহর বলেন, ‘আরোগ্যের পরশ’ মানেই দেশে কোনও রাজবন্দি থাকা উচিত হবে না। সেনাবাহিনীকে সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

এদিকে সরকার গঠনের জটিলতার মাঝে ইমরান খানের দল পিটিআইসমর্থিত বিজয়ী প্রার্থী ওয়াসিম কাদির আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পিএমএলএন দলে যোগ দিয়েছেন। গতকাল ওয়াসিম কাদির একটি ভিডিও পোস্টে এ ঘোষণা দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক দ্য ডন। নওয়াজের দল পাকিস্তান মুসলিম লীগের (পিএমএলএন) এঙ (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেলে পোস্ট করা ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, পিএমএলএন এর ঊর্ধ্বতন ভাইস প্রেসিডেন্ট ও নওয়াজের মেয়ে মরিয়ম নওয়াজের পাশে ওয়াসিম কাদির দাঁড়িয়ে আছেন। তাকে বলতে শোনা যায়, আমি আমার ঘরে ফিরেছি। তবে নওয়াজের দলে কাদিরের যোগদানের বিষয়ে পিটিআই এর তাৎক্ষণিক কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

অপরদিকে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে পিটিআইসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল রাজপথে বিক্ষোভ করে আসছে। এই বিক্ষোভ দমন করতে দেশটির রাজধানী ইসলামাবাদে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ‘গণ জমায়েত’ বা ‘সমাবেশ’ করার চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইসলামাবাদ পুলিশ। তারা বলেছে, কিছু মানুষ নির্বাচন কমিশনসহ অন্যান্য সরকারি অফিসের সামনে উস্কানিমূলক জমায়েত করছে। পরিষ্কারভাবে বলা হচ্ছে, গণ জমায়েতের জন্য উস্কানি দেওয়াও এক ধরনের অপরাধ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাজেকে জেএসএস-ইউপিডিএফ গোলাগুলি, শিশু গুলিবিদ্ধ
পরবর্তী নিবন্ধউচ্ছেদের তিনদিনের মাথায় ফুটপাতে আবার হকার, চসিকের অভিযানে অপসারণ