কে এই লিমজারোয়েনরাত

থাইল্যান্ডে নির্বাচনে বেশি আসন পেল মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি

| বুধবার , ১৭ মে, ২০২৩ at ৬:৩২ পূর্বাহ্ণ

থাইল্যান্ডে চার বছর পর হওয়া সাধারণ নির্বাচনে সামরিক বাহিনীপন্থিদের যে ভরাডুবি হবে, জনমত জরিপেই তার ইঙ্গিত মিলছিল। এ কারণেই সবার চোখ ছিল পেতোংতার্ন সিনাওয়াত্রার পার্টির দিকে। কিন্তু সবাইকে তাক লাগিয়ে গত রোববারের নির্বাচন পরবর্তী ভোট গণনায় সবচেয়ে বেশি আসন পেয়ে গেল পিটা লিমজারোয়েনরাতের মধ্যবামপন্থি মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি। ‘আজ নতুন একটি দিন, আশা করছি এটি উজ্জ্বল সূর্যালোক ও আশায় পূর্ণ থাকবে,’ থাইল্যান্ডের নতুন প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন এটি স্পষ্ট হওয়ার পর পিটা (৪২) এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। পিটার দল মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি থাইল্যান্ডের নাগরিকদের মাঝে ব্যাপক পরিবর্তনের স্বপ্ন সঞ্চার করেছে, যা তুলনামূলক নবীন দলটিকে এনে দিয়েছে চোখ ধাঁধানো জয়। রোববারের নির্বাচনে ভোটাররা প্রায় এক দশক ধরে চলা সামরিক বাহিনী মদদপুষ্ট শাসনকে প্রত্যাখ্যান করে মুভ ফরোয়ার্ডের হাতে অন্য যে কোনো দলের চেয়ে বেশি আসন তুলে দিয়েছে। ডজনখানেক সফল অভ্যুত্থান দেখা একটি দেশে তুলনামূলক নবীন একটি দলের এমন অর্জন মোটেও ফেলনা নয়। ‘যুগের মনোভাব বদলে গেছে। বদলেছে সঠিক সময়ে,’ ব্যাংককে দলের সদরদপ্তরে দেওয়া ভাষণে পিটা এমনটাই বলেছেন। খবর বিডিনিউজের।

২০১৯ সালে ফিউচার ফরোয়ার্ড পার্টির এমপি হিসেবে পার্লামেন্টে যাওয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল পিটার। বিতর্কিত সব অভিযোগে পরের বছর বিলুপ্ত করে দেওয়া হয় ফিউচার ফরোয়ার্ড পার্টিকে। এর পরপরই মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি গঠিত হয়, যার নতুন নেতা হন পিটা। ফিউচার ফরোয়ার্ড পার্টিকে নিষিদ্ধ করার পর হাজার হাজার তরুণ সে বছর থাইল্যান্ডের সড়কগুলোতে নেমে এসেছিল, দাবি জানিয়েছিলসংবিধান সংশোধন, নতুন নির্বাচন এবং মানবাধিকার কর্মী ও রাষ্ট্রের সমালোচকদের হয়রানি বন্ধের। মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির নির্বাচনী প্রচারে এবার ২০২০ সালের ওই আন্দোলনের অনেক দাবিই স্থান পেয়েছে, আন্দোলনের অনেক নেতাকে প্রার্থীও বানিয়েছে তারা। বিরোধী এমপি থাকাকালে পার্লামেন্টে দেওয়া ক্ষুরধার বক্তব্যের জন্য আগেই থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে ‘উদীয়মান তারকা’ খ্যাতি পেয়েছিলেন পিটা। রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর প্রভাব কমানো এবং রাজতন্ত্র সংশ্লিষ্ট আইনের সংস্কারের মতো তার দলের সাহসী সব প্রতিশ্রুতি তার জনপ্রিয়তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি থাইল্যান্ডের সংবিধান নতুন করে লেখাতে চান; থাইল্যান্ডকে তার ভাষায় সামরিক শাসনের অধীনে থাকা ‘হারানো দশক’ থেকে বের করে আনারও অঙ্গীকার আছে তার। রাজনীতি জড়িত, ধনী এক থাই পরিবারে জন্ম পিটার। তার বাবা ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের একজন উপদেষ্টা, চাচা ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার উপদেষ্টা। নিউ জিল্যান্ডে পড়তে পাঠানো হয় তাকে, সেখানেই রাজনীতিতে আকৃষ্ট হয়ে ওঠেন পিটা। ব্যাংককের থামাসাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফাইন্যান্সে অনার্স করা পিটা মাস্টার্স করেন হার্ভার্ডে, পাবলিক পলিসিতে। তিনি পরে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে এমবিএও করেন। ব্যবসায়ী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করা পিটা প্রথমে তার প্রয়াত পিতার ধানের তুষ থেকে তেল বানানোর কোম্পানির হাল ধরেন, পরে হন রাইডহেইলিং কোম্পানি গ্র্যাব থাইল্যান্ডের নির্বাহী পরিচালক। রোববারের নির্বাচনে মুভ ফরোয়ার্ড ভালো ফল করলেও, এটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না যে, পিটা লিমজারোয়েনরাতই থাইল্যান্ডের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন, কেননা এই সিদ্ধান্ত কেবল ভোটে নির্বাচিত নিম্নকক্ষই নেবে না, সামরিক বাহিনীর নিয়োগ দেওয়া উচ্চকক্ষ সেনেটের সদস্যদেরও এখানে ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকছে। ক্ষমতাসীন প্রশাসন ভোটের ফল বদলে দিতে পারে, এমন অনিশ্চয়তা নিয়ে গত সোমবার করা এক প্রশ্নের জবাবে পিটা বলেন, তিনি উদ্বিগ্ন, তবে অসতর্ক নন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএরদোয়ানের ভাগ্য এখন সিনান ওগানের হাতে?
পরবর্তী নিবন্ধহাটহাজারীতে পাঁচ নারী গ্রেপ্তার