কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসার মতো ঘটনায় আন্তঃজেলা ডাকাতদলের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। কি করে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের বাড়িতে ডাকাতি এবং লুট করা মালামাল নিলামে তোলা হয় তার তথ্য উপাত্তও পুলিশ উদঘাটন করেছে। একটি ডাকাতি মামলা তদন্ত করতে গিয়ে আন্তঃজেলা এ ডাকাত দলের হদিস পায় পিবিআই। ডাকাতদলটি চট্টগ্রাম ছাড়াও ফেনী, নোয়াখালী, খাগড়াছড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করে বেড়ায়। গত আগস্টে ফটিকছড়ির দৌলতপুরে সংঘটিত এক দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনার জের ধরে চক্রটিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে চার ডাকাত গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানানো হয়। পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান গ্রেপ্তারকৃত ডাকাতদের ব্যাপারে বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করেন।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে নাজমুল হাসান জানান, গত ৩০ আগস্ট ফটিকছড়ির দৌলতপুর গ্রামে মোহাম্মদ মহসিন নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতরা নগদ ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা, সাড়ে ১২ ভরি স্বর্ণালঙ্কার এবং ৮টি মোবাইল সেট লুট করে নিয়ে যায়। ঘটনার ব্যাপারে ফটিকছড়ি থানায় মামলা দায়ের করা হয়। পরবর্তীতে মামলাটির তদন্তভার দেয়া হয় পিবিআইকে। পিবিআই নানা ধরনের তথ্য প্রযুক্তি এবং নিজস্ব সোর্স ব্যবহার করে আসামিদের শনাক্তের চেষ্টা করে। শুক্রবার চট্টগ্রাম জেলা ও নগরীর বিভিন্ন এলাকায় টানা অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় চারজনকে। গ্রেপ্তারকৃত চারজন হলেন, খাগড়াছড়ির গুইমারা এলাকার আব্দুস সালামের ছেলে নুরুল ইসলাম (৪৩), ফটিকছড়ির ভূজপুর বাগান বাজার এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে সেলিম (৪২), নোয়াখালীর সুধারাম এলাকার মফিজুর রহমানের ছেলে মোশাররফ (২৬) ও একই এলাকার ইসমাইল মিয়ার ছেলে ইব্রাহিম খলিল (৩২)।
পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান জানান, গ্রেপ্তার চারজনই ডাকাতদলের সদস্য এবং তারা ফটিকছড়ির দৌতলপুরের ডাকাতির ঘটনায় জড়িত। তাদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক ওই ঘটনায় লুটকৃত স্বর্ণ কর্নেলহাট এলাকার স্বর্ণ ব্যবসায়ী রানা কান্তি দের দোকান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। অন্যান্য মালামালও উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজমুল হাসান জানান, গ্রেপ্তারকৃত ডাকাত দলের সদস্যরা চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি ফেনী, নোয়াখালী, খাগড়াছড়ির নানা স্থানে ডাকাতি করে বেড়ায়।
ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে তারা বেশ হোমওয়ার্ক করে। প্রথমে খবর নেয় কার বাড়িতে টাকা পয়সা বা স্বর্ণালংকার আছে। কার বাড়িতে ডাকাতি করে নিরাপদে সটকে পড়া যাবে। আবার ওই বাড়ির কেউ প্রশাসন বা উপর মহলে আছে কিনা ইত্যাদি বিষয়ও নিশ্চিত হয় তারা। সবকিছু নিশ্চিত হওয়ার পর ডাকাতদলের প্রভাবশালী একজন সদস্য ওই বাড়িটি রেকি করে। পরপর দুই বার রেকি করা হয়। রাতের বেলা রেকি করে নিরাপদে সরে আসার পথঘাটও দেখে রাখা হয়। সব কিছু ঠিকঠাক ভাবে হওয়ার পরই কেবল ওই বাড়িতে ডাকাতি করতে যায় তারা। ব্যাটে-বলে না মিললে বিন্দুমাত্র শংকা থাকলেও তারা ওই পথ মাড়ায় না।
নাজমুল হাসান জানান, ডাকাতি করার পর এই ডাকাতদলটি মালামাল ভাগাভাগি করে না। তারা সমুদয় মালামাল এক জায়গায় জড়ো করে নিলামে তোলে। দলের যে সদস্য সর্বোচ্চ দাম হাঁকবে তাকেই মালামালগুলো প্রদান করা হয়। ওই ডাকাত সদস্য অর্থ পরিশোধ করে মালামালগুলো নিজ দায়িত্বে বিক্রি করে। দীর্ঘদিন ধরে চক্রটি নানা জায়গায় ডাকাতি করে আসছিল।
তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জেলায় একাধিক মামলা রয়েছে। এর আগেও তারা একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছিল। কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে আবারো ডাকাতিতে জড়িয়ে পড়ে বলেও পিবিআই পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান জানান।