কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা : পরিবর্তনের নতুন দিগন্ত

রিজিয়া সুলতানা রিসপা | শনিবার , ৫ অক্টোবর, ২০২৪ at ৬:০১ পূর্বাহ্ণ

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বর্তমানে বিশ্বজুড়ে প্রতিটি ক্ষেত্রেই গভীর প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে চাকরির বাজারে এর উপস্থিতি নতুন এক দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এ প্রযুক্তি কর্মক্ষেত্রের গতানুগতিক কাজগুলোকে নতুন করে সাজাচ্ছে, দক্ষতার সঙ্গে স্বয়ংক্রিয় করছে এবং নতুন ধরনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করছে। তবে এর পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও তৈরি হচ্ছে, যেমন প্রচলিত অনেক চাকরি বিলুপ্ত হওয়ার ঝুঁকি। এটি কর্মক্ষেত্রকে সহজতর ও দ্রুততর করে তুলছে। যেমন, ফ্যাক্টরিতে রোবটের সাহায্যে স্বয়ংক্রিয় উৎপাদন ব্যবস্থা তৈরি হচ্ছে, কল সেন্টারে চ্যাটবট ও ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট ব্যবহার করে গ্রাহক সেবা দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে একই সময়ে কাজের গতি বাড়ছে এবং খরচ কমছে। গুগল, অ্যামাজনের মতো প্রযুক্তি জায়ান্টরা এটিকে কাজে লাগিয়ে তাদের ব্যবসার প্রসার ঘটাচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেমন কর্মক্ষেত্রকে নতুন করে গড়ে তুলছে, তেমনই কিছু চাকরি বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্বয়ংক্রিয়তা অনেকের ক্ষেত্রে নিম্নমানের, পুনরাবৃত্তিমূলক কাজগুলোকে বিলুপ্ত করতে পারে। যেমন, ডেটা এন্ট্রি, ম্যানুফ্যাকচারিং বা ট্রান্সক্রিপশন প্রক্রিয়াগুলি এখন এ সফটওয়্যারের মাধ্যমে করা যাচ্ছে। এর ফলে ওইসব কাজের কর্মীদের চাকরি হারানোর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তবে একই সাথে কর্মক্ষেত্রে নতুন সুযোগও সৃষ্টি করছে। ডেটা সায়েন্টিস্ট, মেশিন লার্নিং ইঞ্জিনিয়ার, রোবোটিক্স বিশেষজ্ঞ এবং এসব নীতিনির্ধারকদের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। প্রযুক্তির পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যারা নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি করবে, তারা সহজেই নতুন কর্মসংস্থানে প্রবেশ করতে পারবে। তবে ভবিষ্যতের কর্মসংস্থানের বিশ্বব্যাপী পরিবর্তিত চাকরি বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে কর্মীদের এআই সংক্রান্ত দক্ষতা অর্জনের ওপর জোর দিতে হবে। বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এআই, ডেটা অ্যানালাইসিস, কোডিং, এবং অটোমেশন সংক্রান্ত কোর্স সহজলভ্য। এই ধরনের দক্ষতা অর্জন করে বর্তমান প্রজন্ম এআইএর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা নতুন অর্থনৈতিক বিশ্বে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে। এখানে উদ্বেগ এর বিষয় হলো এআই যতই সুবিধা নিয়ে আসুক না কেন, কিছু চ্যালেঞ্জও সামনে এসেছে। প্রযুক্তিগত নির্ভরশীলতা বাড়তে থাকলে মানসিক চাপ, দক্ষতার পার্থক্য, এবং সাইবার সিকিউরিটির ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। এছাড়া অনেক চাকরি হারানোর সম্ভাবনা থাকায় সমাজের একটি বৃহৎ অংশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিচ্ছে। তাই সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত যথাযথ নীতিমালা প্রণয়ন করে এআইএর প্রভাবকে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগানো। এআইকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে আমরা আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে নতুন যুগে প্রবেশ করতে পারবো। এ জন্য প্রয়োজন দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এআইনির্ভর চাকরি বাজারের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রতিটি সড়কে সিগন্যাল বাতি চালু করা হোক
পরবর্তী নিবন্ধপ্রাথমিক শিক্ষকের আত্মতুষ্টি