চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় এবার কৃত্রিম উপায়ে জন্ম নিয়েছে ২৮টি অজগর ছানা। ৬৭ দিনে হাতে তৈরি ইনকিউবিটরে রাখা ডিম ফুটে গতকাল জন্ম হয়েছে এসব অজগরের। এর আগে ২০১৯ সালের ১২ জুন একইভাবে এ চিড়িয়াখানায় জন্ম হয়েছিল ২৬টি অজগর ছানার। চিড়িয়াখানা সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন, চট্টগ্রাম ছাড়া দেশের অন্য কোনো চিড়িয়াখানায় ইনকিউবেটর দিয়ে অজগর জন্মানোর তথ্য তাদের কাছে নেই।
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানায়, গতকাল জন্ম নেয়া অজগর ছানাকে দেড় মাস পর্যবেক্ষণ ও পরিচর্যা করা হবে। এরপর ফটিকছড়ি উপজেলার হাজারিখিলে বন বিভাগের অভয়ারণ্যে ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। ২০১৯ সালে জন্ম নেয়া অজগর ছানাও একইভাবে অবমুক্ত করা হয়েছিল।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ও চিকিৎসক শাহাদাত হোসেন শুভ বলেন, চিড়িয়াখানায় খাঁচায় ২২টি অজগর সাপ আছে। গত ১৪ এপ্রিল খাঁচা থেকে ৩১টি ডিম সংগ্রহ করা হয়। এরপর সেগুলো ইনকিউবেটরে বিভিন্ন তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হয়। এর মধ্যে তিনটি ডিম নষ্ট হয়েছে। বাকি ২৮টি ডিম থেকে অজগর ছানা জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ২০১৯ সালে পরীক্ষামূলকভাবে খাঁচা থেকে ৩৫টি ডিম বের করে এনে হাতে তৈরি ইনকিউবেটরে সংরক্ষণ করেছিলাম। এর মধ্যে ২৬টি ফুটে অজগর ছানা জন্মেছিল।
তিনি বলেন, গতকাল জন্ম নেওয়া অজগর ছানাগুলো ১৫ দিন পর চামড়া বদল করবে। এরপর ধীরে ধীরে সেগুলোকে খাবার দেওয়া হবে। তারপর কিছুদিন পর্যবেক্ষণে রেখে সাপগুলো প্রাকৃতিক পরিবেশে ছেড়ে দেওয়া হবে। ২০১৯ সালে প্রথমবার জন্ম নেওয়া অজগর ছানাগুলো প্রায় তিন মাস পর্যবেক্ষণে রেখে প্রাকৃতিক পরিবেশে ছেড়ে দিয়েছিলাম। তবে এবার আরও কম সময়ে ছেড়ে দেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. ফরিদ আহসান গণমাধ্যমকে বলেন, ইনকিউবেটরে জন্ম নেওয়া বাচ্চা যদি সঠিক তাপমাত্রায় বেড়ে ওঠে, তাহলে সেগুলো প্রাকৃতিক পরিবেশে গিয়ে খাপ খাওয়াতে পারে। তবে সেগুলোকে ছাড়তে হবে একটি নির্দিষ্ট পিরিয়ডের পর। প্রাকৃতিক পরিবেশে সে যখন নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার মতো উপযোগী হয়ে উঠবে, তখনই ছাড়তে হবে। সেক্ষেত্রে স্থান নির্ধারণ একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এমন কোনো জায়গায় ছাড়া হল, যেখানে গুইসাপ কিংবা অন্যান্য প্রাণী অজগরের ছানাগুলোকে খেয়ে ফেলল, তাহলে তো লাভ হবে না। তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবেই সবগুলো ছানা বাঁচবে না, সেটা খাঁচায় রাখা হোক কিংবা জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হোক। তবে আমাদের এই অঞ্চলে যেভাবে অজগর সাপ বিলুপ্তির পথে যাচ্ছে, তাতে কৃত্রিমভাবে হলেও অজগরের বাচ্চার জন্ম দিয়ে সেগুলোকে প্রকৃতিতে ছাড়া হলে ভারসাম্য থাকবে। কিন্তু সেগুলো অবমুক্ত করার আগে জায়গা সম্পর্কে গবেষকদের মতামত নেওয়া প্রয়োজন।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা পরিচালনা পর্ষদের সচিব ও হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, সাপের ডিমগুলো খাঁচায় থাকলে নষ্ট হয়ে যেত, তাই আমাদের চিকিৎসক ডিমগুলো সংরক্ষণ করে কৃত্রিম উপায়ে প্রজননের গবেষণা করতে চেয়েছিলেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সে কাজে উৎসাহ এবং সহায়তা করা হয়েছে।