বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে সরকারি খরচে বিদেশ ভ্রমণ, গাড়ি কেনাসহ আরো কিছু ক্ষেত্রে নতুন অর্থবছর শুরু থেকেই ব্যয় সংকোচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রণালয়ের বাজেট শাখা থেকে পরিপত্র জারি করে ২০২৪–২৫ অর্থবছরে সব মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অধিদপ্তর/পরিদপ্তর/দপ্তর/স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, পাবলিক সেক্টর করপোরেশন এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর পরিচালন ও উন্নয়ন খাতে ব্যয়ের সীমা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
ডলার সংকট, জ্বালানি সংকট, অর্থনৈতিক মন্দা বিবেচনায় গত বছরও সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। চলতি বছর সরকারি ব্যয়ে উদার হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েও শেষ পর্যন্ত কৃচ্ছ্রের পথে হাঁটলেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
সিদ্ধান্ত : সব ধরনের থোক বরাদ্দ থেকে (কোড ৩৯১১১১১ ও ৪৯১১১১১) ব্যয় বন্ধ থাকবে। বিদ্যুৎ, পেট্রোল, অয়েল ও লুব্রিকেন্ট, গ্যাস ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ অর্থের সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে। পরিচালন বাজেটের আওতায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট স্থাপনা ছাড়া নতুন আবাসিক/অনাবাসিক ও অন্যান্য ভবন স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ থাকবে। তবে চলমান নির্মাণ কাজ ন্যূনতম ৭০ শতাংশ সম্পন্ন হয়ে থাকলে অর্থ বিভাগের অনুমোদনক্রমে ব্যয় নির্বাহ করা যাবে। সব ধরনের যানবাহন কেনা (মোটরযান, জলযান, আকাশযান) খাতে বরাদ্দ অর্থ ব্যয় বন্ধ থাকবে। তবে ১০ বছরের বেশি পুরোনো টিওএন্ডইভুক্ত যানবাহন প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের অনুমোদনক্রমে ব্যয় নির্বাহ করা যাবে। পরিচালন বাজেটের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ খাতে বরাদ্দ অর্থ ব্যয় বন্ধ থাকবে। আর উন্নয়ন বাজেটের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে অধিগ্রহণ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিকতা শেষে অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিয়ে ব্যয় করতে হবে। পরিকল্পনা কমিশনের অনুকূলে বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা খাতে জিওবি বাবদ সংরক্ষিত এবং মন্ত্রণালয়/বিভাগের অনুকূলে থোক বরাদ্দ হিসেবে সংরক্ষিত জিওবির সম্পূর্ণ অংশ অর্থ বিভাগের অনুমোদন সাপেক্ষে ব্যয় করা যাবে। সরকারের নিজস্ব অর্থে সব ধরনের বিদেশ ভ্রমণ/ওয়ার্কশপ/সেমিনারে অংশগ্রহণ বন্ধ থাকবে। তবে, অত্যাবশ্যকীয় বিবেচনায় সীমিত আকারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে বিদেশ ভ্রমণ করা যাবে।
যেমন– পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সরকারি অর্থায়নে এবং বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা/বিশ্ববিদ্যালয়/দেশের স্কলারশিপ/ফেলোশিপ–এর আওতায় বৈদেশিক অর্থায়নে মাস্টার্স ও পিএইচডি কোর্সে অধ্যয়নের জন্য বিদেশ ভ্রমণ। বিদেশি সরকার/প্রতিষ্ঠান/উন্নয়ন সহযোগীর আমন্ত্রণে ও সম্পূর্ণ অর্থায়নে আয়োজিত বৈদেশিক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করা যাবে।
প্রি–শিপমেন্ট ইনস্পেকশন বা পিএসআই ও ফ্যাক্টরি অ্যাসেপটেন্স টেস্ট বা এফএটি’র আওতায় বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি–এর গত ২ জানুয়ারির পরিপত্র কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে। একান্ত অপরিহার্য বিবেচনায় পিএসআই–এফএটি –এর আওতায় বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমতি নিতে হবে।
এর আগে ২০২২ সালের ১২ মে জারি করা এক পরিপত্রে বলা হয়েছিল, কোভিড পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও বৈশ্বিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত এক্সপোজার ভিজিট, শিক্ষাসফর, এপিএ ও ইনোভেশনের আওতাভুক্ত ভ্রমণ, কর্মশালা বা সেমিনারে অংশগ্রহণসহ সব ধরনের বৈদেশিক ভ্রমণ বন্ধ থাকবে। পরে ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সেই নির্দেশনা শিথিল করা হয়।