বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিলে হামলা চালিয়েছে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগসহ দলের অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে সাতজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন। তাদের নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার বেলা ১টার দিকে কুমিল্লা নগরীর রেসকোর্স পুলিশ লাইনস এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে আহত শিক্ষার্থীদের নাম–পরিচয় জানা যায়নি।
এদিকে ছাত্র–জনতার সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় সিলেট মহানগরী রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। আর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল থেকে রাজশাহীতে তিনটি পুলিশ বক্সে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলাকালে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। গতকাল দুপুরের দিকে উপজেলার মাওনা চৌরাস্তা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম জাকির হোসেন। তার বাড়ি সাতক্ষীরায়। তিনি লেপ–তোষকের ব্যবসা করতেন। খবর বিডিনিউজের।
কুমিল্লায় সংঘাত : প্রত্যক্ষদর্শী ও শিক্ষার্থীরা জানায়, সকাল ১০টার দিকে কুমিল্লা জিলা স্কুলের সামনে বিক্ষোভ মিছিল পালন করতে আসেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা নিউমার্কেট ও স্টেডিয়াম এলাকায় অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করে ছত্রভঙ্গ করে দেন। পরে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে ফৌজদারি মোড় হয়ে পুলিশ লাইনসের দিকে গেলে সেখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর ইট–পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ সময় গুলির শব্দও শোনা যায়।
শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে কমপক্ষে সাতজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। পরে আহতদের উদ্ধার করে কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গুলিবিদ্ধ ছয়জনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলায় প্রাণ বাঁচাতে ছুটতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। তাদের মধ্যে অনেক নারী শিক্ষার্থী দৌড়ে গিয়ে পুলিশ লাইনসের ভেতর আশ্রয় নেন। পরে তাদের পুলিশ ভ্যানে করে ওই এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়।
কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার সাইদুর ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে বলে আমরা শুনেছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ রয়েছে। এখন পরিবেশ শান্ত।
পেট্রোল ঢেলে এসিল্যান্ডের গাড়িতে আগুন : কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে চান্দিনা উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল দুপুর পৌনে ১টায় ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনা–বাগুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় চট্টগ্রাম অভিমুখী লেনে এ ঘটনা ঘটে বলে চান্দিনা থানার ওসি আহাম্মদ সনজুর মোরশেদ জানান।
পুলিশ জানায়, দুপুর পৌনে ১২টার দিকে চান্দিনা ও দেবিদ্বার উপজেলার কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন। এ সময় ঘটনাস্থলে গিয়ে চান্দিনা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৌম্য চৌধুরী আন্দোলনকারীদের মাঝে আটকা পড়েন। একপর্যায়ে এসিল্যান্ডের গাড়ি ভাঙচুর করে পেট্রোল ঢেলে তাতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। তখন সৌম্য চৌধুরী ও তার চালক গাড়ি থেকে দ্রুত নেমে যান। আন্দোলনের কারণে মহাসড়কের উভয় দিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
পুলিশের সঙ্গে ছাত্র–জনতার সংঘর্ষে রণক্ষেত্র সিলেট : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচির মধ্যে ছাত্র–জনতার সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় সিলেট মহানগরী রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। গতকাল দুপুর থেকে শিক্ষার্থীরা নগরীর চৌহাট্টায় বিক্ষোভ শুরু করেন। তাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষও যোগ দেন। একপর্যায়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট–পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। জবাবে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদুনে গ্যাস ও বাবার বুলেট ছোড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সংঘর্ষ চলাকালে নগরীর চৌহাট্টা, দরগাগেইট, মিরবঙটুলা ও জিন্দাবাজার এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় আন্দোলনকারীরা রাস্তায় আগুন দেয়।
রাজশাহীতে ৩ পুলিশ বঙে অগ্নিসংযোগ, পুলিশসহ আহত ২ : ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল থেকে রাজশাহীতে তিনটি পুলিশ বঙে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। আন্দোলনকারীদের পিটুনিতে আহত হয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশের এক সদস্য ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সমন্বয়কারী।
গতকাল মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ–পুলিশ কমিশনার জামিরুল ইসলাম বলেন, পুলিশ আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভে বাধা দেয়নি। তাদের নির্বিঘ্নে বিক্ষোভ করতে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এরপরও তারা পুলিশ বঙগুলোতে হামলা করে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। পুলিশ বঙ ভাঙচুরের ছবি তোলার সময় আন্দোলনকারীরা তালাইমারি মোড়ে নগর গোয়েন্দা পুলিশের সদস্য সাইফুল ইসলাম এবং রেলগেট মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশের সমন্বয়কারী রাকিব হাসান অর্ণবকে পিটিয়ে জখম করে। অর্ণব কয়েকদিন আগে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ায় তার ওপর হামলা করা হয় বলে জানা গেছে। তাদের দুজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
অপরদিকে রাজশাহীতে নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচ এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে জামিন দিয়েছে আদালত।