কুমিল্লায় বাস খাদে, নিহত ৫

নিহতদের দুজন বাঁশখালী ও টেকনাফের দোতলা বাসটির নির্মাণে ‘মারাত্মক ত্রুটি’

আজাদী ডেস্ক | শনিবার , ১৮ মে, ২০২৪ at ৬:৩২ পূর্বাহ্ণ

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় একটি বাস খাদে পড়ে পাঁচজনের প্রাণ গেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১৫ জন। গতকাল শুক্রবার ভোরে উপজেলার বসন্তপুর এলাকার ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে চৌদ্দগ্রামের মিয়াবাজার হাইওয়ে থানার ওসি মো. লোকমান হোসেন জানান।

নিহতরা হলেন কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার মতিউর রহমানের ছেলে মোহাম্মদ হোসেন (৩০), চট্টগ্রামের বাঁশখালীর বাহারছড়া গ্রামের নুরুল আবসারের ছেলে বদরুল হাসান রিয়াদ (২৬), নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলার সাহাপুর গ্রামের মৃত মোখলেছুর রহমানের ছেলে নাসির উদ্দিন পলাশ (৪০), লক্ষ্মীপুর সদরের আবু তাহের খোকন (৪৮) ও ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার মাসুদ (২১)। এ ঘটনায় আহতরা হলেন কক্সবাজারের ফিরোজ (৪০), মোক্তার হোসেন (৪০), ফজলুর রহমান (৪২), আরাফাত (৩৪), সিয়াম (৩২), সোহাগ (২৮), কামরুন নাহার (২৫), স্বপন শিকদার (২৫), রফিকুল ইসলাম (৩০), মনিরসহ (৩০) ১৫ জন। তাদের মধ্যে চারজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানান ওসি। খবর বিডিনিউজের।

ওসি লোকমান বলেন, রিল্যাক্স পরিবহন নামে একটি যাত্রীবাহী বাস ঢাকা থেকে কক্সবাজারের দিকে যাচ্ছিল। পথে বসন্তপুর এলাকায় বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশের একটি খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই পাঁচজন নিহত হন। আর আহত ১৫ জনকে উদ্ধার করে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে ভর্তি করা হয়েছে।

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রবিউল হাসান বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ১১ জনকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে আমাদের হাসপাতালে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় চারজনকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

ঘটনাস্থলে কথা হয় চৌদ্দগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সাব অফিসার বিপ্লব কুমার নাথের সঙ্গে। তিনি বলেন, পুলিশ ও স্থানীয়দের সহায়তায় গাড়ির ভেতর থেকে পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করেছি। আমাদের উদ্ধার অভিযান শেষ হয়েছে।

দোতলা বাসটির নির্মাণে ‘মারাত্মক ত্রুটি’ : পাঁচজনের প্রাণহানি ঘটানো দোতলা বাসটির নির্মাণে ‘মারাত্মক ত্রুটি’ থাকার কথা সামনে এসেছে। পুলিশ বলছে, দুর্ঘটনায় পড়া বাসটি ‘দোতলা’। অথচ সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থাবিআরটিএ থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়েছে ‘একতলা’র। সেখানে নিচে বসে এবং ওপরে শুয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা দেখা গেছে। একতলা বাসটি কীভাবে দোতলা হল, সেই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। কেউ এর দায় নিতেও রাজি হয়নি। একই সঙ্গে ‘বসে ও শুয়ে’ যাওয়ার মত কোনো বাসের অনুমোদন দেওয়া হয়নি বলে দাবি করলেও বিআরটিএ ‘স্বীকার’ করেছে যে, রাস্তায় চলাচল করা এ ধরনের বাসের একটি তালিকা তাদের কাছে আছে। অনুমোদনহীন বাসটি কীভাবে রাস্তায় নামলসেই প্রশ্ন রেখে বিশ্লেষকরা বলছেন, তৈরির সময় নিয়মের তোয়াক্কা না করায় তা দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা, কারণ বিআরটিএর অনুমতি ছাড়া সড়কে বাস চালানোর সুযোগ নেই।

কুমিল্লার মিয়াবাজার হাইওয়ে থানার ওসি লোকমান হোসেন ঘটনাস্থল পরির্দশন করার পর বলেছেন, খাদে পড়ে উল্টে যাওয়া বাসটির একতলায় যাত্রীদের বসার ব্যবস্থা এবং ওপর তলায় শোয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। অথচ কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এটি ‘সাধারণ বাস’ অর্থাৎ সিঙ্গেল ডেকার হিসেবে নিবন্ধিত।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে বিআরটিএর পরিচালক (প্রকৌশল) সীতাংশু শেখর বিশ্বাস বলেন, একতলায় বসা ও দোলতায় শোয়ার ব্যবস্থা সম্বলিত কোনো বাস সড়কে চালানোর অনুমোদন দেয়নি বিআরটিএ। তাহলে কীভাবে এ বাস রাস্তায় নামল? এ প্রশ্নে সীতাংশু শেখর বলেন, সিঙ্গেল ডেকার বাসকে অনুমোদন ছাড়াই রূপান্তর করে ডাবল ডেকার বানানো হয়েছে।

এ ধরনের ১২৩টি বাসের একটি তালিকা আছে বিআরটিএর এ কর্মকর্তার কাছে। গত ডিসেম্বরে এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে তথ্য দিয়ে তিনি বলেছিলেন, বাসগুলোর মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন তারা। সেই প্রক্রিয়ার কী হল, সে বিষয়ে শুক্রবার তার কাছে জানতে চাইলে সীতাংশু শেখর বলেন, তাদের সেই প্রক্রিয়া এখনও চলছে।

দুর্ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া আরজ হোসেন নামের এক যাত্রী জানালেন, রিল্যাঙ পরিবহনের বাসটি নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দুই ঘণ্টা দেরিতে রাত ২টার দিকে ঢাকা থেকে কঙবাজারের উদ্দেশে ছাড়ে। দেরিতে ছাড়ায় চালক দ্রুত চালাচ্ছিলেন। আর গতি বাড়ালেই বাস ভীষণভাবে দুলছিল। দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ আগে একটি রেস্তোরাঁয় যাত্রাবিরতি দেওয়ার পর বাসচালক বেপরোয়া গতিতে চালাতে শুরু করেন। তখন বাসের দোলাদুলিতে যাত্রীরা চিৎকার করে চালককে ধীরেসুস্থে চালাতে বলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। হোটেল থেকে ছেড়ে আসার মিনিট দশেকের মধ্যে বাসটি দুর্ঘটনায় পড়ে বলে জানান আরজ হোসেন। তার বর্ণনা অনুযায়ী, দুর্ঘটনার পর কাত হয়ে থাকায় বাস থেকে বের হতে পারছিলেন না যাত্রীরা। কয়েকজন যাত্রী চেষ্টা করে সামনের ও পাশের কাচ ভেঙে বের হওয়ার পথ করলে কেউ কেউ বাইরে আসেন।

হাইওয়ে থানার ওসি লোকমান বলেন, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ গিয়েও কয়েকজন যাত্রীকে উদ্ধার করে। জরুরি অবস্থায় বের হওয়ার কোনো পথ বাসটিতে ছিল না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমাইক্রোবাস-ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষ
পরবর্তী নিবন্ধগণপরিবহনে পুরনো বিশৃঙ্খলা