কি ছু জা না কি ছু অ জা না

প্রবীর বড়ুয়া | বুধবার , ৪ অক্টোবর, ২০২৩ at ৫:১৩ পূর্বাহ্ণ

ম মিশরে পিরামিড যে প্রাচীন মিশরীয়দের রাজা অর্থাৎ ফারাও ও তাদের পরিবারের সদস্যদের শুধু কবর দেয়ার জন্য নির্মিত হয়েছিল তা কিন্তু নয় সেগুলো নির্মিত হয়েছিল ফারাওদের আধ্যাত্মিকভাবে মৃত্যু পরবর্তী জীবনে নিয়ে যাওয়ার জন্যও। অত্যন্ত ধার্মিক প্রাচীন মিশরীয়রা বিশ্বাস করতো যে পিরামিড হলো মৃত্যুর পরের জীবনে প্রবেশ করার নিরাপদ পথ।

ম মিশরীয়দের বিশ্বাস ছিল কেউ মারা গেলে তিনি মিশরের মতোই একটি সুন্দর জগতে প্রবেশ করেন। যখন তারা বেঁচে ছিলেন তখন যা যা জিনিস প্রয়োজন হতো মৃত্যুর পরও তাদের সেই জিনিসগুলো প্রয়োজন হবে। তাই ফারাওদের মৃত্যুর পর তাদের স্বর্ণ ও অন্যান্য দামী দামী জিনিসপত্র দিয়ে কবর দেয়া হতো।

ম ফারাওদের কবর দেয়ার জন্য মিশরে যে পিরামিড নির্মাণ করা হয়েছিল সেরকম একটি পিরামিড তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছিল ২০ লাখেরও বেশি ইট। আর প্রতিটি পাথরের ওজন ছিল আড়াই থেকে ১৫ টন অর্থাৎ একটা হাতির ওজনের চেয়েও বেশি। যে যুগে এত আধুনিক প্রযুক্তি ছিল না সেই যুগে এত ভারি ওজনের পাথর কীভাবে এত উপরে তোলা হয়েছিল সেটা এখনও রহস্যই রয়ে গেছে।

ম মিশরের গিজার খুফুর পিরামিডটি তৈরিতে যে পাথরগুলো ব্যবহৃত হয়েছিল সেগুলোর মোট ওজন প্রায় ৫০ লাখ টন।

ম অধিকাংশ ঐতিহাসিক বিশ্বাস করেন যে গিজার তিনটি পিরামিডের মধ্যে খুফুর পিরামিডটি নির্মিত হয়েছিল ২,৫৫০ এবং ২,৪৯০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দের মধ্যে। ইংল্যান্ডের লিংকনশায়ারে লিংকন ক্যাথেড্রাল নির্মিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই পিরামিডটি ছিল বিশ্বের উচ্চতম স্থাপনা।

ম গ্রীক ইতিহাসবিদ হেরোডোটাসের মতে মিশরের পিরামিড তৈরি করা হয়েছিল দাসদের দিয়ে কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা পিরামিড তৈরি করেছিল তাদের ভালো খাবার, বেতন দেয়া হতো এমনকি সম্মানও। ফলে পিরামিড তৈরির সময় যাদের মৃত্যু হয়েছিল তাদের সম্মানের প্রতীক হিসাবে ফারাওদের পাশেই কবর দেয়া হতো।

ম নারীর মতো মাথা ও সিংহীর মতো শরীর নিয়ে গ্রীক পুরাণের স্ফিংসকে মিশরীয়রা রক্ষাকর্তা মনে করে যেখানেই তাদের আধ্যাত্মিক নিরাপত্তার প্রয়োজন হতো সেখানে তৈরি করতো। ২,৫০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে ফারাও খাফরেএর সময় নীল নদের পশ্চিম তীরে নারীসিংহী বিখ্যাত স্ফিংসটি তৈরি করা হয়েছিল গিজার পিরামিডের নিরাপত্তার জন্য। স্ফিংসটি দৈর্ঘ্যে ৭৩ মিটার, প্রস্থে ৬ মিটার এবং উচ্চতায় ২০ মিটার। আর এটির চোখ ২ মিটার লম্বা।

ম স্ফিংসকে যখন মৃত ফারাওদের রক্ষাকর্তা মনে করা হয় তখন ‘ফারাওয়ের অভিশাপ’ বলেও একটি কথা প্রচলিত আছে। এটিকে পিরামিডের ভিতর ফারাওয়ের পরিবার ও তার যাবতীয় সামগ্রী সহ সবকিছুর রক্ষক মনে করা হয় যে কারণে মনে করা হয় যে পিরামিডের রহস্য উন্মোচন করতে গিয়ে অনেক গবেষক দুর্ভাগ্য কিংবা মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন। মিশরীয়রা এরকমটি মনে করলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন আসলে গবেষকদের অসুস্থতার কারণ হলো অভিশাপ নয় ব্যাকটেরিয়া।

ম পিরামিডগুলো এক সময় রোদের আলোতে চকচক করতো কারণ সেগুলো তৈরি হয়েছিল দারুণভাবে মসৃণ করা চুনাপাথরের আবরণ দিয়ে। অনেক অনেক বছর পর ভূমিকম্প ও নানা কারণে সেই আবরণ খসে পড়ায় এখন আর পিরামিডগুলোর উপরের অংশ চকচক করে না। যখন নতুন ছিল তখন সেগুলোর গায়ে রোদের আলো পড়ে চকচক করলে মনে হতো যেন বড় ধরনের কোনো দামী রত্ন।

ম মিশরীয় পিরামিড নামে যে পিরামিডগুলো আবিষ্কৃত হয়েছে সেগুলোর সংখ্যা হলো ১১৮ তবে এগুলোর মধ্যে প্রায় ৮০টি নির্মিত হয়েছিল কুশ রাজ্যে যা বর্তমানে অবস্থিত আধুনিক সুদানে। বিভিন্ন আকার ও গুরুত্বের পিরামিডগুলো নির্মিত হয়েছে মিশরের বিভিন্ন স্থানে। সেগুলোর মধ্যে গিজা এবং সাকারার পিরামিডগুলো বিখ্যাত। আর গিজার খুফুর পিরামিডটি ছিল প্রাচীন সপ্তাশ্চর্যের একটি।

ম মিশরে অনেক পিরামিড নির্মিত হয়েছে নীল নদের পশ্চিম তীরে কারণ প্রাচীন মিশরীয়রা বিশ্বাস করতো সেটি ছিল সূর্যাস্ত ও মৃতদের স্থান। তাছাড়া পিরামিড তৈরির জন্য নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনের জন্য সুবিধাজনক স্থানও ছিল সেটি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাজকুমার আর আম
পরবর্তী নিবন্ধবায়েজিদে আমিন কলোনিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, ৬৫ ঘর পুড়ে ছাই