২২ মামলার আসামি শীর্ষ সন্ত্রাসী নুরে আলম নুরু ও তার বাহিনীর সদস্যদের বেশিরভাগ সময় কাটে নগরীর আকবরশাহ এলাকার বিভিন্ন পাহাড়ে। পাহাড়ে রীতিমতো দুর্গ গড়ে তুলেছেন অপরাধ জগতের প্রভাবশালী এই সন্ত্রাসী।
গত শনিবার বিকালে আকবরশাহ থানা পুলিশ, নগর গোয়েন্দা পুলিশ এবং রিজার্ভ পুলিশ এক জোট হয়েও নুরুকে ধরতে পারেনি। নুরুর সহযোগী যাকে গ্রেপ্তার করেছে, সেই আজমের থেকে তেমন কোনো তথ্য বের করতে না পেরে তাকে গতকাল আদালতে চালান করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আকবরশাহ থানার ওসি জহির হোসেন। তিনি বলেন, আমরা এবার একটু ভিন্ন কৌশলে নুরুর আস্তানা উচ্ছেদ, নুরু ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। তবে সেই কৌশল সম্পর্কে জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, শনিবার বিকালে ওই এলাকার শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদ থেকে নোবেল ও তানভির নামে দুজনকে অপহরণ করে নিয়ে যায় নুরু বাহিনী। তাদের উদ্ধারে অভিযান চালায় পুলিশ। পরে তাদের উদ্ধার করে নুরুকে গ্রেপ্তারও করে। এ সময় অতর্কিতে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়ায় নুরু বাহিনীর সদস্যরা। প্রথমে পুলিশকে লক্ষ করে ইট পাটকেল ছুঁড়লে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এর জবাবে নুরু বাহিনীর সদস্যরাও গুলি ছোড়ে। এক পর্যায়ে নুরুকে পুলিশের হাত থেকে ছিনতাই করে নিয়ে যায় তারা। পরে অবশ্য নুরুর এক সহযোগী আজমকে গ্রেপ্তার করতে সমর্থ হয় পুলিশ।
শনিবারই প্রথম নয়, ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত নুরু ও তার বাহিনীর হাতে বেশ ক’বার হামলার স্বীকার হয়েছে পুলিশ। আকবরশাহ এলাকার পূর্ব ফিরোজশাহ ১ নং ঝিল, বেলতলি ঘোনা, নাছিয়া ঘোনা এলাকা দাবড়ে বেড়াচ্ছে নুরু (৩০) ও তার বাহিনী। নুরু কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম থানার ধনু মিয়ার ছেলে।
জানা যায়, ২০১৪ সালে বিপুল অস্ত্র গুলিসহ গ্রেপ্তার হন নুরু। গুলি ও এলোপাথাড়ি কিরিচ চালনায় পারদর্শী তিনি। তাই শোনা যায়, তার বাহিনীকে অনেক ক্ষেত্রে এড়িয়ে চলে পুলিশ।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশের তথ্যে জানা যায়, একের পর এক অপরাধ করেও নুরু ও তার বাহিনী রয়ে গেছে অধরা। পূর্ব ফিরোজশাহ ১ নম্বর ঝিলপাড়, নাছিয়া ঘোনা, বেলতলি ঘোনায় সরকারি পাহাড় কেটে স্বল্পমূল্যে বিক্রি, চাঁদাবাজি, মাদক, জুয়া, অপহরণ, মাছ শিকার, গাছ কাটা, ভূমিদস্যুতাসহ নানা অপরাধে জড়িত তারা। নুরু এক সময় বিএনপির রাজনীতি করতেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার হাত ধরে হয়ে উঠেন বেপরোয়া। বাড়তে থাকে তার অপরাধের পরিধি, বাড়তে থাকে মামলাও। ২০১৪ সালের ৭ জুলাই ১৭টি মামলায় চালান হলেও এখন এ সংখ্যা ২২।
রাতে বিদ্যুৎ তারে সংযোগ দিয়ে বেষ্টনী দেওয়ায় বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন এক পুলিশ কনস্টেবল। দিনের বেলায় তিন রাস্তার মুখে পাহারা ও ভেতরে অস্ত্র হাতে পাহারায় থাকে তার লোকজন। সোর্সের মাধ্যমে জেনে যায় যেকোনো অভিযানের ব্যাপারে। আকবরশাহ এলাকার সব জায়গায় ইয়াবার পাইকারি হাট এখন এই নাছিয়া ঘোনা, বেলতলি ঘোনা ও ঝিলপাড় এলাকা। তিনটি রাস্তা থাকায় সহজে হামলা চালিয়ে সটকে পড়া যায়।
জানা গেছে, নুরু সবসময় অস্ত্র বহন করেন। তবে কিরিচ তার প্রিয় অস্ত্র। কিরিচ হাতে ফটোশুট করতে দেখা গেছে তাকে। দুর্ধর্ষ এ সন্ত্রাসীকে ধরতে ছবি সহকারে সাবেক এক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার লিফলেট বিতরণেও কাজ হয়নি।
আকবরশাহ থানা সূত্র জানায়, আকবরশাহ এলাকার মাদক ব্যবসা সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য আবুল কাশেম আলমগীর নূরুর বোন জামাই। তাকে ফিরোজ শাহ কলোনির এক নম্বর ঝিল এলাকা থেকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয় ২৮ সেপ্টেম্বর। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় একটি এলজি ও দুই রাউন্ড গুলি। ২৮ সেপ্টেম্বর আলমগীরকে গ্রেপ্তারের পর ১৮ অক্টোবর আলমগীরের স্ত্রী রুবি বেগম আকবরশাহ থানার তৎকালীন ওসি জসিম উদ্দীনসহ ছয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে দুই লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন চট্টগ্রাম মহানগর বিশেষ জজ আদালতে। এ অভিযোগে এসআই আলাউদ্দিন, আশহাদুল ইসলাম, এএসআই সাইফুল ইসলাম, আবু বক্কর সিদ্দিক ও কনস্টেবল নুরুল আলমেরও নাম দেওয়া হয়। পুলিশকে চাপে রেখে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার এ কৌশল অবশ্য ধোপে টেকেনি। ১ নভেম্বর মহানগর দায়রা জজ আকবর হোসেন মৃধার আদালত অভিযোগটি খারিজ করে দেন।
নগর পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লা থেকে এসে আকবরশাহ থানাধীন ফিরোজশাহ কলোনির ১ নং ঝিল এলাকায় বসত গড়ে ধনু মিয়া ভান্ডারী, তার দুই ছেলে নুরে আলম, জানে আলম, মেয়ে রুবি বেগম ও মেয়ের জামাই আবুল কাসেম আলমগীর। এরপর থেকে নুরু মাদক, পাহাড় কাটাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে। গড়ে তুলে অপরাধের সাম্রাজ্য। তাদের পরিবারের সবার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।