কিউইদের বিপক্ষে ঘরের মাঠে প্রথম জয়

তারকাদের ছাড়াই এ স্মরণীয় কীর্তি ঘূর্ণি জাদুতে তাইজুলের ১০ ইউকেট লাভ

ক্রীড়া প্রতিবেদক | রবিবার , ৩ ডিসেম্বর, ২০২৩ at ৬:৪০ পূর্বাহ্ণ

সিলেটে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের চতুর্থ দিনেই জয়ের সুবাস পাচ্ছিলো বাংলাদেশ। খুব একটা হেরফের হয়নি। ৫ম দিনে বাংলাদেশ জয় তুলে নিয়েছে প্রত্যাশা মতোই। এদিন বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল মাত্র ৩ উইকেট। বাংলাদেশ তা কব্জা করে নিয়ে দেশের মাটিতে ১৫০ রানের বিশাল জয় করায়ত্ত করে নেয়। গত বছর জানুয়ারিতে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে নিউজিল্যান্ডকে টেস্টে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। কিউইদের ঘরের মাঠে টেস্ট জয়ের কৃতিত্ব দেখালেও নিজেদের ঘরের মাঠে কৃতিত্বটা এবারই প্রথম অর্জন করলো টাইগাররা। গতকাল শনিবার সকালে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সেই ঐতিহাসিক মাহেন্দ্রক্ষণ আসতে খুব বেশি সময় লাগেনি। প্রথমে বড় বাধা হয়ে থাকা ড্যারিল মিচেলকে ফেরান নাইম হাসান। এরপর টিম সাউদিকে ফিরিয়ে নিজের ৫ উইকেট পূরণ করেন তাইজুল ইসলাম। শেষ উইকেট হিসেবে ইশ সোধিকে ফিরিয়ে দিয়ে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডকে হারানোর ঐতিহাসিক ক্ষণের জন্ম দেয় বাংলাদেশ। দুই টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ বড় ব্যবধানে হারিয়েছে সফরকারী নিউজিল্যান্ডকে। আফগানিস্তানজিম্বাবুয়ের পর শক্তি বিবেচনায় বড় দলের বিপক্ষে রানের হিসেবে এটিই সবচেয়ে বড় জয় টাইগারদের। ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর প্রথমবারের মতো খেলতে নেমে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় চক্রে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই অবিস্মরণীয় জয় তুলে নেয় সাকিবতামিমলিটনমোস্তাফিজতাসকিন বিহীন বাংলাদেশ। ২০২১ সালে প্রথম বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতা নিউজিল্যান্ডকে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার বড় ফরম্যাটে হারালো বাংলাদেশ। এর আগে ২০২২ সালের প্রথম সপ্তাহে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে ৮ উইকেটে জয় পেয়েছিলো টাইগাররা। নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে ১৩৯তম ম্যাচে ১৯তম জয় এটি বাংলাদেশের। প্রথম টেস্টে বাংলাদেশের ছুঁড়ে দেয়া ৩৩২ রানের টার্গেটে পঞ্চম ও শেষ দিনের প্রথম সেশনে ১৮১ রানে গুটিয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশকে ১০ ব্যবধানে এগিয়ে নিতে বড় অবদান রাখেন বাঁ হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। প্রথম ইনিংসে ৪ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হন তিনি। তাইজুলের পাশাপাশি বাংলাদেশের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন দ্বিতীয় ইনিংসে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর ১০৫ রান।

জয়ের জন্য ৩৩২ রানের টার্গেটে ৭ উইকেটে ১১৩ রানে চতুর্থ দিন শেষ করেছিলো নিউজিল্যান্ড। ম্যাচ জিততে পঞ্চম ও শেষ দিনে ৩ উইকেট হাতে নিয়ে আরও ২১৯ রান প্রয়োজন ছিল কিউইদের। ড্যারিল মিচেল ৪৪ ও ইশ সোধি ৭ রানে অপরাজিত ছিলেন। পঞ্চম দিনে ক্যারিয়ারের নবম হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মিচেল। অর্ধশতকের পর মিচেলের প্রতিরোধ ভাঙেন স্পিনার নাইম হাসান। সুইপ করতে গিয়ে তাইজুলকে ক্যাচ দেন ৫৮ রান করা মিচেল। এরপর উইকেটে এসে বাংলাদেশ বোলারদের উপর চড়াও হন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক টিম সাউদি। ১টি চার ও ২টি ছক্কা মারেন তিনি। সাউদির মারমুখী ইনিংসকে ৩৪ রানে থামিয়ে দেন তাইজুল। শর্ট মিড উইকেটে জাকির হাসানকে ক্যাচ দেন ২৪ বলে ৩৪ রান করা সাউদি। এর মাধ্যমে ক্যারিয়ারে ৪৩তম টেস্টে ১২তমবারের মত ইনিংসে পাঁচ বা তার বেশি উইকেট পূর্ণ করেন তাইজুল। ৭২তম ওভারে সোধিকে ব্যক্তিগত ২২ রানে থামিয়ে নিউজিল্যান্ডকে ১৮১ রানে গুটিয়ে দেন তাইজুল। ৩১ দশমিক ১ ওভার বল করে ৭৫ রানে ৬ উইকেট নেন তাইজুল। প্রথম ইনিংসে ১০৯ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। ম্যাচে তাইজুলের শিকার ১৮৪ রানে ১০ উইকেট। টেস্ট ক্যারিয়ারে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ম্যাচে ১০ উইকেট নিলেন এ স্পিনার। তাইজুল ছাড়াও নাইম হাসান ২টি, শরিফুলমিরাজ ১টি করে উইকেট নেন।

আগামী ৬ ডিসেম্বর মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট খেলতে নামবে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ড।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমাঝারি ভূমিকম্পে কাঁপল চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকা
পরবর্তী নিবন্ধশহীদ মিনার দৃশ্যমান করতে কমিটি হচ্ছে