কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল হচ্ছে

| শুক্রবার , ৩০ আগস্ট, ২০২৪ at ৪:৫৬ পূর্বাহ্ণ

অপ্রদর্শিত অর্থ হিসেবে বিবেচিত কালো টাকা বৈধ বা সাদা করার সুযোগ আর না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার; যা নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকে সমালোচনা করা হচ্ছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভা শেষে এই তথ্য জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, অতি দ্রুত সময়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করবে। খবর বিডিনিউজের।

চলতি ২০২৪২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে বিনাপ্রশ্নে অপ্রদর্শিত অর্থ, নগদ টাকা এবং শেয়ারসহ যে কোনো বিনিয়োগ নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিয়ে ঢালাওভাবে সাদা করার সুযোগ ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব দেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। অর্থনীতিবিদসহ বিভিন্ন মহলের সমালোচনার পরও বাজেটে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে তা বৈধ করার প্রস্তাব পাস করে সংসদ। সংসদেও সরকারি ও বিরোধীদলের অনেক সদস্য এর সমালোচনা করে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছিলেন। জুলাই থেকে এক বছরের জন্য কালো টাকা সাদা করার এ সুযোগ রাখা হয়। মাঝে এ সুযোগ বন্ধ রাখা হয়েছিল।

এর আগে সবশেষ ২০২১২২ অর্থবছর পর্যন্ত শর্ত সাপেক্ষে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছিল। পরের অর্থবছরে সেই সুযোগ আর রাখা হয়নি। একই সঙ্গে প্লট, ফ্ল্যাট ও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার সুযোগও তুলে নেওয়া হয়। একই সঙ্গে চলতি অর্থবছরের বাজেটে প্রশ্ন ছাড়া জমি, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট কিনে থাকলেও এলাকা অনুযায়ী বেঁধে দেওয়া কর অনুযায়ী সেগুলো বৈধ করা যাবে। এমন সুযোগ বৈধ করদাতাদের নিরুৎসাহিত করবে বলে তুলে ধরে বলা হচ্ছিল, এটি কর প্রদানের ক্ষেত্রে অসম ব্যবস্থার সূচনা করবে। অনেকে আর বৈধভাবে কর না দিয়ে পরে এ সুযোগ নেবেন।

কেননা একজন করদাতার ৩০ লাখ টাকা থাকলে ৩০ শতাংশের বেশি কর দিতে হচ্ছে। কিন্তু যিনি আগের বছরগুলোতে আয়করে যথাযথভাবে অর্থ প্রদর্শন করেননি তিনি ১৫ শতাংশ কর দিয়ে সেই অপ্রদর্শিত আয়কে বৈধ করে নিচ্ছেন। এতে নিয়মিত করদাতারা কর দিতে অনীহা দেখাতে পারেন। এছাড়া কালো টাকা সাদার করার সুযোগে যে কোনো ব্যক্তি আয়কর আইন মেনে যেকোনো সময় নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করতে পারেন। তখন তাকে প্রশ্ন করার সুযোগ থাকে। এতে দুর্নীতি উৎসাহিত হতে পারে বলেও অনেকের মত।

ছাত্রজনতার তুমুল গণ আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্‌তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার তিন সপ্তাহের মধ্যে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিল। এদিন উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে কালো টাকা সাদা করার যে বিধি ও রীতি বন্ধ করে দেওয়া। এটা (কালো টাকা সাদা করার সুযোগ) থেকে সরকার যেটুকু টাকা আনতে পারে, সেটা খুব বেশি নয়। তবে মূল্যবোধ অবক্ষয় হয়। এটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। অর্থপাচারের বিরুদ্ধে কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে।

এছাড়া বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে সাফ অনূর্ধ্ব২০ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় বাংলাদেশ ফুটবল টিমকে সংবর্ধনা দেবে সরকার। বন্যার কারণে রপ্তানিমুখী যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত তাদের শ্রমিকদের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকে সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তার কার্যক্রমও চালানোর সিদ্ধান্তও হয়েছে বৈঠকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅফিস করছেন না চসিকের ৩৯ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর
পরবর্তী নিবন্ধআলোচনা ফলপ্রসূ, নির্বাচনী সংলাপ দ্রুত শুরুর অনুরোধ জানিয়েছি : ফখরুল