উষা রুদ্র (৪৩) বাঁশখালীর সাধনপুর ইউনিয়নের রুদ্রপাড়া মহিদ রুদ্রের স্ত্রী। ২০১১ সালে মহিদ্র রুদ্র হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করলে উষার জীবনে হতাশা ও চরম অনিশ্চয়তা নেমে আসে। ছেলে–মেয়েদের নিয়ে উপার্জনক্ষম কেউ না থাকাতে দুচোখে অন্ধকার মনে হয়। সেই থেকে পিতা মাতার আমলের পেশা কামার কুমারের কাজকে আলিঙ্গন করে জীবন নির্বাহ করছে। স্বামী মহিদ্র রুদ্র থাকাকালীন মৃৎশিল্পের মাটির হাড়ি পাতিলসহ নানা ধরনের জিনিসপত্র তৈরিতে সহযোগিতা করলেও বর্তমানে জীবনের তাগিদে ছেলে সন্তান নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য কামার কুমারের কাজকে আঁকড়ে ধরতে হয়েছে। এ কাজে নিজেকে জড়িয়ে ধুপধানি, টাকবাতি (প্রদীপ) সরা, বসরী ষাট, ছোট প্রদীপ, বরুনা, পেয়ালা, ভাপা পিঠা, মনসাপুজার ঘট, ছোট পরিবারের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তৈরি করে জীবন নির্বাহ করে। কাজ শেষে হিসেব করে দেখা যায় আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। বাজারে এই পণ্যের চাহিদা না থাকা, পর্যাপ্ত কাঁচামালের অভাব এবং পরিবহন সমস্যার কারণে বাপ–দাদার ঐতিহ্যের এই পেশাটি আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। চারু বালা রুদ্র (১০৩) বলেন, আমার জন্ম ও বিয়ে এ গ্রামে, জন্মের পর থেকে এ কাজে জড়িত, মাটির জিনিসপত্র ব্যবহার না করে বর্তমানে সিলভার ও মেলামাইন ব্যবহার করাতে লোকজনের রোগব্যাধি বেশি হচ্ছে।
অথচ মাটির তালা বাসনে খাবার খেলে ও কলসিতে পানি রাখলে ফ্রিজের প্রয়োজন হয়না বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। ক্ষেত্রমোহন রুদ্র বলেন, সাধনপুরের এ রুদ্র পাড়ায় ৫০/৬০ পরিবারের বসবাস। যাদের কাজ শুধু মাটির তৈরি জিনিস পত্র তৈরি করা। বর্তমানে আমরা নানা সমস্যায় দিন যাপন করছি বলে সে জানায়। বাঁশখালী উপজেলার সাধনপুর, কালিপুর, বৈলছড়ি, পৌরসভার জলদী, শিলকূপ, চাম্বল, পুকুরিয়া ও পুইছড়ি ইউনিয়নের অসংখ্য মৃৎশিল্পীরা তাদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করতো। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকার এসে ভিড় জমাত এই গ্রামগুলোতে। অথচ কালের বিবর্তনে এখন গ্রামগুলোতে গুটি কয়েক পরিবার এই পেশায় কাজ করে কোনমতে জীবিকা নির্বাহ করে। মৃৎশিল্পে নিয়োজিত বাঁশখালীর রুদ্র পাড়ার লোকজনার প্রত্যাশা সরকার কিংবা সেরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে ঐতিহ্যবাহী এ মৃৎশিল্পকে ঠিকিয়ে রাখবে সে দিনের প্রত্যাশায় সময় পার করছে তারা।