১৪ মাসের সংস্কার কাজ শেষে শতবর্ষী কালুরঘাট সেতুতে পুনরায় যানবাহন চলাচল আজ শুরু হচ্ছে। আজ রোববার সকাল ১০টা থেকে যান চলাচল শুরু হবে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ পরীক্ষামূলকভাবে যান চলাচল উন্মুক্ত রেখেছে। এখন কোনো টোল দিতে হবে না। সর্বোচ্চ ৮ ফুট উচ্চতার সব ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারবে সেতুর ওপর দিয়ে। তবে চলতে পারবে না ভারী ট্রাক। সংস্কারকৃত সেতুর ডান পাশে প্রথমবারের মতো পথচারীদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ওয়াকওয়ে। এর ফলে দুর্দশা লাঘব হতে চলেছে বোয়ালখালীবাসীর।
আজ সকাল ১০টায় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক, প্রধান প্রকৌশলীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কালুরঘাট সেতু এলাকায় উপস্থিত হবেন এবং সেতুতে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পূর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশলী।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজ শেষে রোববার (আজ) সকালে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। আনুষ্ঠানিক কোনো উদ্বোধনের আয়োজন নেই। সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে; তাই সেতুটি যানবাহন চলাচলে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে। টোল ছাড়াই আপাতত যানবাহন চলবে। তবে বুয়েটের পরামর্শ অনুযায়ী, সেতু দিয়ে ভারী ট্রাক ও বাস চলাচল করতে পারবে না। রেলওয়ের ভূ–সম্পত্তি বিভাগ শিগগিরই রেলসেতু দিয়ে চলা যানবাহন থেকে টোল আদায়ে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করবে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশের বৃহত্তম পর্যটন নগরী কক্সবাজারে ট্রেন চালুর জন্য শতবর্ষী কালুরঘাট সেতু সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছিল গত বছরের ১ আগস্ট। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞ টিমের তত্ত্বাবধানে প্রায় ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুর সংস্কার কাজ সম্পন্ন করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। সংস্কার কাজের জন্য ২০২৩ সালের ১ আগস্ট থেকে গত ১৪ মাস সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে গত বছরের ৫ নভেম্বর থেকে কঙবাজার রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশলী জিসান দত্ত আজাদীকে বলেন, নানা জটিলতা কাটিয়ে কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে। রোববার সকালে যানবাহন চলাচলের জন্য সেতু উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সকাল ১০টায় সেতু এলাকায় যাবেন। এ সময় তারা পুরো সেতুটি দেখার পর যানবাহনসহ সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
৯৪ বছর পর সেতুতে ওয়াকওয়ে : কালুরঘাট সেতু নির্মিত হয়েছে ১৯৩০ সালে। সেতুটির বয়স এখন ৯৪ বছর। সেতু নির্মাণের ৯৪ বছর পর রেল কর্তৃপক্ষ সেতুর উপর দিয়ে পথচারীদের পায়ে হেঁটে পারাপারের জন্য ওয়াকওয়ে নির্মাণ করেছে। গত কোরবানির ঈদে উভয় পারের মানুষের চলাচলের জন্য ওয়াকওয়ে খুলে দেওয়া হয়। এখন একদিকে ট্রেন যাচ্ছে, পাশাপাশি উভয় পারের মানুষ হেঁটে চলাচল করতে পারছে। এতে করে মানুষের অনেক উপকার হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দরা।
এলাকাবাসী জানান, কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজে এক বছর পেরিয়ে গেছে। আমরা বোয়ালখালীর কয়েক লাখ মানুষকে এক বছর ধরে সীমাহীন দুর্ভোগ মাড়িয়ে চট্টগ্রাম শহরে আসা–যাওয়া করতে হয়েছে। তবে এবার রেল কর্তৃপক্ষ সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য প্রথমবারের মতো ওয়াকওয়ে নির্মাণ করেছে। এতে পথচারীদের সুবিধা হয়েছে। যানবাহন এবং ট্রেন চলাচলের পাশাপাশি পথচারীরা পায়ে হেঁটে সেতু পারাপার হতে পারবে। পারাপারের সুযোগ করে দেয়ায় তারা রেলওয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।