কালুরঘাট সেতু সংস্কারের জন্য ২০২৩ সালের ১ আগস্ট থেকে কর্ণফুলী নদীর কালুরঘাটে ফেরি চলাচল শুরু হয়। ফেরির শুরুটা হয়েছিল ভোগান্তি দিয়েই। যা এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়ত কানে ভেসে আসে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যায় কালুরঘাট ফেরিতে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা।
ফেরি চালুর প্রথম দিন থেকে ভোগান্তি দিয়ে শুরু হয়ে মৃত্যুর ঘটনাও বাদ যায়নি এখন পর্যন্ত। মানুষ এখন ভয় ভীতি নিয়ে চলাফেরা করছে ফেরি দিয়ে। তিন মাসের জন্য সেতু বন্ধ হওয়ার কথা ছিল। তবে আট মাস পার হলেও এখনো সেতু দিয়ে গাড়ি চলাচলের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
এই ফেরি দিয়ে দৈনিক কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করে। প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ লেগেই থাকে ফেরিকে কেন্দ্র করে। কখনো কখনো দুটি ফেরির পরিবর্তে চলে একটি ফেরি। ঠিক মত ফেরি চালু না করা, মাঝ নদীতে ফেরি নষ্ট হয়ে যাওয়া, ফেরিতে বালুবাহী বাল্কহেডের ধাক্কা, কালুরঘাট সেতুর খুঁটিতে ফেরির ধাক্কা, ফেরি থেকে মানুষ ও যানবাহন নদীতে পড়ে যাওয়া, বেইলি ব্রিজে গাড়ি নষ্ট হওয়া, অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে বেইলি ব্রিজ ডুবে যাওয়া, ফেরি থেকে ব্রিজে উঠার সময় অটোটেম্পোর ধাক্কায় পা ভেঙ্গে যাওয়া এবং ফেরিতে কলেজ ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনাসহ নানা দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে বোয়ালখালীবাসীকে।
ফেরি দিয়ে যাতায়াত করা যাত্রী মো. আলমগীর বলেন, ফেরিটি এখন রীতিমত মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছি। ঘর থেকে বের হয়ে আর জীবিত ঘরে যেতে পারবো কিনা তার নিশ্চিয়তা নেই। সিএনজি টেক্সি চালক মহিউদ্দীন বলেন, ফেরিটি এখন দুর্ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষের কোনো নিরাপত্তা নেই। মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেই চলাফেরা করতে হয় আমাদের। দ্রুত সেতুতে গাড়ি চলাচলের উপযোগী ও ওয়াকওয়ে চালু করলে দুর্ঘটনা অনেকটা কমে আসতো। নগরীর এক কলেজ ছাত্র বলেন, যে সেতু দিয়ে রেল যেতে পারে সে সেতু দিয়ে গাড়ি চলতে এত গড়িমসি কেন? কর্তৃপক্ষ শুধু রেলটাই দেখলো, আমাদের জীবনটা দেখলো না।
বোয়ালখালীর একটি মাদ্রাসার বাংলা প্রভাষক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, মৃত্যু যেন ফেরিঘাটে নিত্যদিনের সাধারণ বিষয়। গাড়িগুলো বেপরোয়া আর আমরা সাধারণ মানুষরাও অস্থির। উভয়ের ভুলে আমরা মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছি। মানুষের জীবনের বিনিময়ে হলেও একটি সড়ক সেতু হোক, এটাই আমাদের দাবি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম–৮ আসনের সংসদ সদস্য আবদুচ ছালাম বলেন, ওয়াকওয়ে এই মাসে (মে) চালু হবে এবং জুনে সেতুতে গাড়ি চলাচল শুরু হবে বলে আশা করছি। গাড়ি চলাচল আর ওয়াকওয়ে চালু হলে দুর্ঘটনা অনেকটা কমে আসবে এবং জনদুর্ভোগ লাঘব হবে।